আঙ্কারা: আধুনিক তুরস্কের শতবর্ষের ইতিহাসে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ, রবিবার। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনে দু’দশকের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোগানের তখত-এ-তাউস খতম হবে বলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিকদের ধারণা। এই সঙ্গে অবসান হতে চলেছে তাঁর সরকারের কর্তৃত্বময় প্রশাসনের একচ্ছত্র প্রভুত্ব। দেশের মানুষ, বিশেষত যুব সম্প্রদায় প্রবলভাবে এর্দোগান হটাওয়ের ডাক দিয়েছেন। যার ফলে গত কুড়ি বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট এর্দোগান এবারেই প্রথম এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
তুর্কি ভোটাররা তাঁদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এমন একটা সময়ে, যার তিন মাস আগেই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছিল দেশ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পে দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ৫৯ লক্ষ নাগরিক গৃহহীন হয়েছিলেন। এছাড়াও দেশ এখন প্রবল অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে চলছে। পাশাপাশি এর্দোগানের একনায়কোচিত মনোভাবে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। এই আবহে তুরস্কের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছেন দেশের মানুষ।
আরও পড়ুন: Universe | বসবাসের উপযোগী আরও দুই গ্রহ, তাপমাত্রা 24 থেকে 74 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে
এই ভোট শুধুমাত্র ন্যাটোভুক্ত দেশের সাড়ে ৮ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ-পন্থা ঠিক করতে চলেছে তা নয়। তুরস্কের সাধারণ মানুষের জীবনধারণ, অর্থনীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক কোন পথে প্রবাহিত হবে, তাও ঠিক হবে আজই। এসব দিক মাথায় রেখে দেশ আজ এক নতুন বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জনমত সমীক্ষা বলছে, এর্দোগানের মুখ্য প্রতিপক্ষ কামাল কিলিচদারোগলু এগিয়ে রয়েছেন। ৬ বিরোধী দলের জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ, প্রাক্তন আমলা ও সমাজতন্ত্রী-গণতন্ত্রপন্থী এই নেতা বর্তমান প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের সামনে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট পদে জেতার জন্য যে কোনও প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। সেদেশের সংবিধান অনুযায়ী তা না হলে আগামী ২৮ মে ফের নির্বাচনে জেতে হবে।
মূল লড়াইটা হচ্ছে পিপলস অ্যালায়েন্স যাতে রয়েছে এর্দোগানের ইসলামপন্থী রক্ষণশীল একে পার্টি, ন্যাশনালিস্ট এমএইচপি এবং অন্য কয়েকটি দল। অন্যদিকে, কিলিচদারোগলুর জোটে রয়েছে তুরস্কের প্রবাদপ্রতিম নেতা মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান পিপলস পার্টিসহ ৬ দলের জোট। এদিনই গভীর রাতের দিকে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে কিনা তা বোঝা যাবে বুথ ফেরত সমীক্ষায়।
কিলিচদারোগলু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরলে তুরস্কের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন। যা প্রায় হরণ করে নিয়েছেন এর্দোগান। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবেন। তাঁর সরকারের সমালোচক ও বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করতে এর্দোগান বিচারব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের আইন প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। যা নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলনের ঢেউ ওঠে।
ক্ষমতায় থাকাকালীন এর্দোগান তুরস্কের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কবজা করেছিলেন। মুক্ত চিন্তাবিদ ও সমালোচকদের কোণঠাসা ও মানবাধিকারকে পায়ের নীচে দাবিয়ে রেখেছিলেন। সেই শাসনের অবসান হবে কিনা তা জানতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।