নয়া দিল্লি: লক্ষ্য এক– তার মধ্যেও বিরোধী ঐক্যে ফাটল। ১২ সাংসদের (Rajya Sabha MPs Suspended) সাসপেনশন নিয়ে বিরোধীরা রাজ্যসভায় ওয়াকআউট করলেও সেখানে তৃণমূল (TMC) সাংসদরা কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেন। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খার্গের কক্ষে বিরোধীদের যে বৈঠক রয়েছে, সেখানেও তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি থাকবেন না। সংসদে ওয়াকআউট না করে তৃণমূলের সাসপেন্ডেড দুই সাংসদ শান্তা ছেত্রী ও দোলা সেন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসেছেন। এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ নাদিমুল হক বলেন, ‘আমরা সংসদের বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। আমরা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি। তবে, আমরা আমাদের নিজস্ব পথ বেছে নেব।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের সময়ই কংগ্রেস নিয়ে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি অসন্তোষ ব্যক্ত করে পালটা জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিবার দিল্লি এলেই কি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে হবে?’ এর আগের দিল্লি সফরগুলোয় তিনি কিন্তু সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। ফলে, মমতার এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। সোমবার কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির যে বৈঠক ছিল সেখানে কংগ্রেস নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন নেত্রী।
বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক কংগ্রেস নেতাকে দলে টানায় সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের রসায়নটা যে বদলাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী নিজে কিছু না বললেও দলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে যদি তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়, তা হলে জাতীয় রাজনীতিতে মমতার কৌশল কী? এই কৌতূহলের জায়গা থেকেই তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের দিকে অনেকেরই নজর ছিল। সেই বৈঠকে তৃণমূল সুপ্রিমো স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপি (BJP) বিরোধিতায় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ‘একলা চলো’ নীতি মেনে চলবে ঘাসফুল শিবির।
আরও পড়ুন – সাসপেনশন প্রত্যাহারে নারাজ চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নায়ডু
কংগ্রেস যে এখনও পর্যন্ত প্রধান বিরোধী শক্তি, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। ফলে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে মমতা যদি বিজেপি বিরোধী জোটের কথা ভাবেন, তা কতটা সফল হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কংগ্রেস ছাড়া জোট সোনার পাথরবাটি।
আরও পড়ুন – আরবসাগরের তীরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের খোঁজে মমতা
বিরোধী জোটের মধ্যেও যে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন। এ নিয়ে মমতার বক্তব্য, কংগ্রেস নিজে থেকে যদি জোটে আসতে চায়, তাতে তৃণমূলের কোনও আপত্তি নেই। তৃণমূল আগ বাড়িয়ে কংগ্রেসের কাছে যাবে না। মমতার অভিমত, বিজেপি বিরোধিতায় কংগ্রেসের মধ্যে সেই উদ্যোগ তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। সেই প্রেক্ষাপট থেকে কৌশল বদলে জাতীয় রাজনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেওয়ার জন্য অন্য রাজ্যগুলোকে টার্গেট করেছেন। ত্রিপুরা, মেঘালয়, হরিয়ানা ও গোয়ায় সংগঠন গোছাতে শুরু করে দিয়েছেন। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে ৪০টি আসনে প্রার্থীও দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঘটনাচক্রে তৃণমূলে আসা নেতাদের অধিকাংশই কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা। ফলে, কংগ্রেসের সঙ্গে দুরত্ব স্বাভাবিক। কিন্তু মমতা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।