কোচবিহার: নাগরিকত্ব-শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাধিক মামলা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক এর আগে একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তবে কী তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোন দেশেরই বা নাগরিক তিনি, সে বিষয়ে কখনও মুখ খোলেননি অমিত শাহের ডেপুটি।
এ বার তথ্যের অধিকার আইন ২০০৫ অনুসারে নিশীথের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়ে আবেদন জমা করলেন কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আলিজার রহমান। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) কানাইলাল দে’র কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন তিনি। জেলা শিক্ষা দফতরের তরফে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে।
তিনি চিঠিতে লিখেছেন, গত জুন ২০২১ সালে সাংসদ নিশীথ প্রামানিক মহাশয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পদে মনোনীত হওয়ার পর জেলা ও রাজ্যজুড়ে সাংসদ নিশীথ প্রামানিকের নাগরিকত্ব ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আমি একজন কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার এবং সচেতন নাগরিক হিসাবে সাংসদ নিশীথ প্রামানিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিম্নে উল্লেখিত তথ্যগুলি জানার জন্য ভারত সরকারের তথ্য জানার অধিকার ২০০৫ সাল বলে আবেদন করছি।
আরও পড়ুন: অমিতের ডেপুটি নিশীথের পড়াশোনা কত দূর, স্পষ্ট তথ্য নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে
আলিজার রহমান একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। নাগরিক হিসেবে আমি জানতে চাই, আমার জেলার এমপি তিনি যে দলেরই হোন না কেন তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে জনমানসে প্রশ্ন উঠেছে। সেটি জানতে পারলে সেখান থেকেই তাঁর নাগরিকত্ব প্রসঙ্গেও আমরা জানতে পারব। সেই মর্মে তথ্য জানার অধিকার আইন বলে আমি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে তথ্য জানতে চেয়েছি।
জেলা আইএনটিটিইউসির সাধারণ সম্পাদক আলিজার ওই চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?, এমপি প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোন স্কুলে পড়াশুনো করেছেন?, প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগ দেওয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার কী প্রমাণ দাখিল করেছেন? এর আগে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের তরফেও অভিযোগ করা হয়েছে, বিধানসভা ভোটে নমিনেশনের সময় জমা দেওয়া নিশীথের হলফনামায় যে শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, তার সঙ্গে লোকসভার ওয়েবসাইটে দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সামঞ্জস্য নেই।
আরও পড়ুন: অসম থেকে দুষ্কৃতী এনে বোমা বাঁধাতেন মন্ত্রী, নিশীথের বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন এক সময়ের সঙ্গী ফিরদৌস
নিশীথের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি কোচবিহারের ভেটাগুড়ি লাল বাহাদুর স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। রাজনীতিতে যোগদানের আগে তিনি প্রাথমিক স্কুলে সহকারি শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু তিনি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই অন্য দুই প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এবং অজয় কুমার মিশ্রের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে ওয়েবসাইটে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে৷
তবে, কেন নিশীথের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে অস্পষ্টতা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লোকসভার ওয়েবসাইটে ৩৫ বছর বয়সী নিশীথ প্রামাণিকের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে বলে হয়েছে, তিনি বিসিএ (ব্যাচেলর অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন) করেছেন। আবার স্বরাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে অনুযায়ী তিনি সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন ভেটাগুড়ি লাল বাহাদুর হাইস্কুল থেকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সাংসদের সঙ্গে নিশীথের ছবি ফেসবুকে, হাতিয়ার করছে তৃণমূল
মোদি মন্ত্রীসভায় সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হলেন নিশীথ প্রামাণিক৷ এমনকী তিনিই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা কোচবিহারের জেলার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ তাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডেপুটি করায় বাংলার বহু মানুষ অবাক হয়েছিলেন৷ কারণ, তিনি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তার আগে তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুব তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ছিলেন৷ নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ১১টা ফৌজদারি মামলা রয়েছে৷ তা সত্বেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলার ৯টি আসনের মধ্যে ৮টি আসন জিতিয়ে আনার উপহার স্বরূপ মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন নিশীথ।