কলকাতা: কয়েকদিন আগেও তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে শোনা গিয়েছিল এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় জেলায় প্রচারের উদ্দেশে তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতাদের নিয়ে তালিকায় উপরের দিকেই নাম ছিল সায়নী ঘোষের। কিন্তু সম্প্রতি সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে ১১ ঘণ্টা ইডির দফতরে তাঁকে জেরা করার পর হঠাৎই চিত্রটা বদলে গেল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার সংক্রান্ত লিস্টে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মূলত ওই লিস্ট থেকে সায়নী ঘোষের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, যেহেতু সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে এবং তাঁকে ইতিমধ্যেই ইডির জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাই জেলায় জেলায় তাকে প্রচারে পাঠালে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকেও হয়তো এ বিষয়ে প্রচারের রসদ হয়ে উঠতে পারে। সেজন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Pancahyat Election 2023 | সিপিএমের প্রতীকে হেয়ারকাট, প্রচারে ভাইরাল ভুবন
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আগামী ৫ জুলাই ফের ইডির তলব যুব তৃণমূল সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে। শনিবার এ বিষয়ে সায়নী বলেন, দল আমার পাশে আছে। আমাকে কেউ কোনও চাপ দেয়নি। নির্বাচনী প্রচারে থাকলেও ৫ তারিখ সশরীরে ইডি দফতরে যাব। ১১ ঘণ্টা গতকাল ছিলাম, সহযোগিতা করেছি। কিছু নথি চাওয়া হয়েছে, সেগুলো দিতে হবে। যত বার ডাকা হবে, তদন্তের স্বার্থে ততবারই যাব। প্রচার চলাকালীন কেন ডাকা হল, বুঝতেই পারছেন উদ্দেশ্য কী। তিনি আরও বলেন, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে প্রচুর যুবকের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে। এমন গুরুত্বপূর্ণ তদন্তে আমি সহযোগিতা করব। কুন্তল প্রসঙ্গে সায়নীর মন্তব্য, পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে কুন্তলকে চিনি। কুন্তলের সঙ্গে কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছে কি না, তা তদন্তেই উঠে আসবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার প্রায় প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বের হন সায়নী। সেই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলে, একশো শতাংশ সহযোগিতা করেছি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে। আমাকে যদি একশোবার তলব করা হয় আমি একশোবারই আসব। আজ কিছু নথি নিয়ে আসতে বলেছিলেন সেসব জমা দিয়েছি। আরও কিছু নথি নিয়ে আসতে বলেছেন। ইডি সূত্রে খবর, ইডির সামনে সায়নী স্বীকার করে নেন তিনি তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে চিনতেন। কুন্তলের ডাকা অনেক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন তিনি। এমন কী তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথাও স্বীকার করে নেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। তবে সেই টাকা নিয়োগ দুর্নীতির কি না তা তিনি জানতেন না। এমনটাই ইডির আধিকারিকদের জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্যে শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের তদন্তে উঠে আসে সায়নীর নাম। সম্পত্তি কেনাবেচাতেও নাম জড়িয়েছে সায়নীর বলে ইডির দাবি। সেই প্রসঙ্গেই তৃণমূল (TMC) যুব কংগ্রেসের সভানেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি। সূত্রের খবর, এদিন হাজিরার সময় তাঁকে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একাধিক নথি নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই মতোই এদিন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সায়নী হাজিরার দেন।এদিন সিজিওতে ঢোকার সময় সায়নী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তলব। সব রকম সহযোগিতা করতে এসেছি। এই প্রসঙ্গে ভোটের মুখে হেনস্থা করতেই এভাবে ডেকে পাঠানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেত্রী এবং রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। নির্বাচনের আগে সিবিআই, ইডি নানারকম টিম পাঠিয়ে তৃণমূলকে হেনস্থা করাই উদ্দেশ্য।