পানাজি: বুথ ফেরত সমীক্ষায় বলা হচ্ছিল, গোয়ায় তৃণমূল (Goa TMC) ৪-৫টি আসনে জয়ী হতে পারে৷ কিন্তু তা ভুল প্রমাণ করে দিলেন গোয়ার মানুষ৷ তৃণমূলকে আরব সাগরে বিসর্জন দিলেন তাঁরা৷ প্রথমবার কোঙ্কন উপকূলবর্তী রাজ্যের বিধানসভা ভোটে (Goa Assembly Polls 2022) লড়াই করতে নেমেছিল তৃণমূল৷ কিন্তু ফলাফল বলে দিচ্ছে, ভোটারদের মনে দাগ করতে পারেনি তারা৷ যদিও তা মানতে নারাজ দলের একাংশ৷ তারা জানিয়েছে, এটা ঠিক যে তৃণমূল একটাও আসনে জয়ী হতে পারেনি৷ কিন্তু প্রথমবার একটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলগুলির সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দেওয়াটাও কম কৃতিত্বের নয়৷ তবে এই হার স্বীকার করে নিয়েছে তৃণমূল৷ টুইটে জানিয়েছে, আমরা গোয়ার মানুষের মতামত মাথা পেতে নিচ্ছি৷
৪০টি আসন বিশিষ্ট গোয়া বিধানসভা ভোটে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধেছিল তৃণমূল৷ প্রার্থী দিয়েছিল ২৬টি আসনে৷ কিন্তু গণনার প্রবণতা বলছে, ২৬টির মধ্যে ৭টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল৷ ১৩টি আসনে রয়েছে তিন নম্বরে৷ বাকিগুলিতে প্রথম তিনেও নেই৷ কয়েকজন প্রার্থীদের নিয়ে তৃণমূলের ভালো ফলের আশা ছিল৷ কিন্তু সবাই হতাশ করেছেন৷ গোয়া তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি কিরণ কান্ডোলকর, তাঁর স্ত্রী কবিতা, এনসিপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া চার্চিল অ্যালেমাও ও তাঁর মেয়ে ভালাঙ্কা নিজের নিজের কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েন৷ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, দুপুর ৩টে পর্যন্ত তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ৫.২২ শতাংশ ভোট৷ অন্যদিকে ৭.৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েও দুটি আসনে এগিয়ে রয়েছে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি৷ শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের জোটসঙ্গী বিজেপিকে সরকার গঠনে সাহায্য করতে রাজি হয়েছে৷ যদি সত্যিই তারা বিজেপিকে সমর্থন করে তবে তা তৃণমূলের কাছে ভোট পরবর্তী আরেকটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সংগঠনকে ভিনরাজ্যে বিস্তারে উঠে পড়ে লাগেন৷ ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করতেই তাঁর এই উদ্যোগ৷ তাই ত্রিপুরা, হরিয়ানা, গোয়া, মণিপুর ইত্যাদি ছোট রাজ্যগুলিকে পাখির চোখ করে তৃণমূল৷ মনে করা হচ্ছিল, প্রথমবার গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে ১১-১২ শতাংশ ভোট এবং ৪-৫টি আসন পেলেই অনেকটাই রাজনৈতিক মাইলেজ পেয়ে যেত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল৷ সেটা হলে জাতীয় রাজনীতিতে আরও গুরুত্ব বাড়ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ কিন্তু গোয়ার মানুষ সব হিসেব-নিকেশ বদলে দিলেন৷
এই ফলাফলে হতাশ হলেও দমে যায়নি তৃণমূল৷ দলের এক নেতার কথায়, আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করতে জানেন৷ তিনি বাংলার বাইরে দলকে প্রতিষ্ঠা করবেনই৷ আপের উদাহরণ টেনে তিনি জানিয়েছেন, গত বছর গোয়া বিধানসভা ভোটে লড়াই করে আপের সব প্রার্থীরা জামানত খুইয়েছিল৷ সেখানে এবছর আপ দুটি আসনে জয়ী হয়েছে৷ বাইরের রাজ্যে সংগঠন বিস্তার করতে সময় লাগে৷ তৃণমূল মাত্র কয়েকমাসে গোয়াতে যা করে দেখিয়েছে সেই তুলনায় এই ফল হতাশজনক নয়৷ সংগঠন গড়ে তোলার জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে৷ টুইট করেও তৃণমূল একই কথা জানিয়েছে৷ লিখেছে, প্রত্যেক গোয়াবাসীর বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জনের জন্য আমরা আরও কঠোর পরিশ্রম করব৷ যতই সময় লাগুক না কেন আমরা এখানে থেকে মানুষের সেবা করে যাব৷