উত্তরবঙ্গে কি বিজেপির পায়ের তলার মাটি আলগা হয়ে গেল? ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে বিজেপি আসন হারানোয় সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের সব কটি আসন দখল করেছিল বিজেপি। তারপর থেকে সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার বদলে উত্তরবঙ্গে বিজেপির হাল খারাপ হতে শুরু করে। যে লোকসভা ভোটে ধূপগুড়ি বিধানসভা ক্ষেত্রে বিজেপির মার্জিন ছিল প্রায় ১৯ হাজার, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সেই মার্জিন কমে সাড়ে চার হাজারে এসে দাঁড়ায়। কেন এই মার্জিন দুবছরের মধ্যে এত কমে গেল, বিজেপির দলীয় স্তরে তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। দলের উত্তরবঙ্গের একাধিক নেতা রাজ্য বিভাজনের কথা বলে গিয়েছেন। তা নিয়ে যে দলের মধ্যে নানা মত রয়েছে, তা বারবার প্রকাশ্যে এসেছে।
উত্তরবঙ্গের দুই সাংসদ কেন্দ্রের মন্ত্রী। তাঁরা নিজেদের এলাকায় না করেছেন সংগঠনের কাজ, না করেছেন মন্ত্রীর কাজ। এলাকার উন্নয়নের দিকেও তাঁদের কোনও নজর ছিল না। স্থানীয় মানুষের আশা ছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকায় তাদের কিছু উন্নতি হবে। কিন্তু তা হয়নি।
এবার বড় ফ্যাক্টর ছিল রাজবংশী ভোট। মূল তিন দলেরই প্রার্থী রাজবংশী সম্প্রদায়ের। সেই ভোট কব্জায় রাখতে বিজেপি গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের নেতা অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সাংসদ করে। তিনি ধূপগুড়িতে প্রচারেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রচার কাজে আসেনি।
রাজনৈতিক মহল বলছে, বাংলার মানুষ বিভাজনের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। এটা আবার প্রমাণিত হল। একইসঙ্গে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিও এখানে কখনও দাগ কাটতে পারে না, এটা যে কবে বাংলার বিজেপি নেতারা বুঝবেন, সেটা কে জানে।
এর পাশাপাশি আছে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল, সাংগঠনিক দুর্বলতা। স্থানীয় মানুষের উন্নতির দিকে বিজেপির সাংসদ, বিধায়করা মোটেই নজর দেননি। চা বাগানের ভোট কিছুটা পেলেও বিজেপি গ্রাম এবং শহরের ভোট পায়নি। সেটাও বোঝা যাচ্ছে।
এবার ধূপগুড়ি মহকুমা নির্বাচনের বড় ইস্যু ছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে এসে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ধূপগুড়ি মহকুমা হবে বলে ঘোষণা করে মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছেন। মহকুমা হবে কী হবে না, সেটা পরের কথা। কিন্তু এটা একটা ভাবাবেগের কাজ করেছে ধূপগুড়ির মানুষের কাছে। বিজেপির পরাজিত প্রার্থী তাপসী রায় মেনেও নিয়েছেন যে, মহকুমা করার ঘোষণা ভোটের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে।
শেষে বলতে হয় বাম, কংগ্রেস জোটের কথা। তারা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোট হলেও ধূপগুড়িতে ত্রিমুখী লড়াই হয়েছে বাম, বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে। সিপিএম প্রার্থী মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফল প্রকাশের পর বলেছেন, এটা ইন্ডিয়া জোটের জয়। তাঁর এই ঘোষণা বাম এবং কংগ্রেসের পক্ষে অবশ্যই বিড়ম্বনার বিষয়। একই সঙ্গে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে ধূপগুড়িতে মুখ থুবড়ে পড়া বিজেপির কাছে একটা বড় ধাক্কা