মুম্বই: একসময় ভারত (India) ব্রিটিশদের শাসনে (British Raj) পরাধীন ছিল। সেই সময়ই ভারতে রেল পরিষেবার (Rail Service) সূচনা। ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা (Freedom) অর্জন করে। তারপর থেকে বিগত সাড়ে সাত দশকে ভারতীয় রেল (Indian Railways) অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে। স্বাধীনতার পর দেশ যেমন উন্নতি করেছে, ভারতীয় রেলও তার সঙ্গে আধুনিক (Modern) হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে দেশের খুব কম স্থানেই রেল পরিষেবা উপলব্ধ ছিল। কিন্তু, স্বাধীনতার পর ভারতের প্রায় প্রতিটি কোণা রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ট্রেনের সংখ্যাও বেড়েছে অতীত দিনের তুলনায়। ভারতের রেল পরিষেবা পৃথিবীর অন্যতম বড় রেল ব্যবস্থা (Rail System)। কিন্তু জানেন কি, ভারতে এখনও এমন একটি জায়গা আছে, যেখানকার রেল পরিষেবা আজও ভারতীয় রেলের হাতে নেই। বরং রেল পরিষেবা চালু রাখার জন্য একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে (British Company) আজও টাকা দিতে হয় ভারত সরকারকে।
আরও পড়ুন: WhatsApp | হোয়াটসঅ্যাপ কিবোর্ডে ২১টি নতুন ইমোজি, কী করতে হবে দেখে নিন!
পশ্চিম ভারতের (West India) রাজ্য মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) অন্তর্গত যবতমাল (Yavatmal) এবং মূর্তিজাপুর (Murtijapur), এই দুই জায়গার মাঝে ১৯০ কিলোমিটার ন্যারো গেজ রেললাইন রয়েছে। প্রায় ২০০ কিলোমিটারের এই রেলপথ পরিচিত শকুন্তলা রেলওয়েজ (Shakuntala Railways) নামে। ভারতে ব্রিটিশ রাজের আমলে এই রেলপথ তৈরি হয়েছিল। আজ যাকে ভারতে আমরা সেন্ট্রাল রেলওয়ে (Central Railway) নামে চিনি, সেই সময় তাকে গ্রেট ইন্ডিয়া পেননিসুলার রেলওয়ে (The Great Indian Peninsular Railway – GIPR) বলা হতো। ঔপনিবেশিক শাসনের (Colonial Rule) সময় গোটা মধ্যভারতে যে সমস্ত রেল ছুটে বেড়াত, তার সবকিছু দেখভাল করত জিআইপিআর। কিন্তু ১৯৫২ সালে ভারতীয় রেল যখন জাতীয়করণ (Nationalized) হয়, তারপর থেকে এই নির্দিষ্ট অঞ্চল অবহেলিতই (Ignored) থেকে গিয়েছে। যে ব্রিটিশ সংস্থা এই অঞ্চলে রেললাইন পেতেছিল, তাদের দখলে থেকে গিয়েছে এই ১৯০ কিলোমিটার রেলপথ। ১৯১০ সালে শকুন্তুলা রেলওয়েজ প্রতিষ্ঠা করেছিল বেসরকারি ব্রিটিশ সংস্থা কিলিক-নিক্সন (Killick-Nixon, Private British Company)। আজও তাদের অধীনে আছে এই ১৯০ কিমি রেলপথ। ট্রেন চলাচলের জন্য ওই ব্রিটিশ কোম্পানিকে ১ কোটি করে টাকা দেয় ভারত সরকার (Government of India)।
ন্যারো গেজ এই রুটে দিনে একটি ট্রেন যায় এবং সেটিই ফেরত আসে। মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার (Amravati District) যবতমাল থেকে অচলপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার যাত্রাপথে আসা-যাওয়াতে ২০ ঘণ্টা মতো সময় লাগে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য এই রেলপথ বলতে গেলে জীবনরেখার (Lifeline) সমান। এই দুই গ্রামের মধ্যে যাতায়াত করতে টিকিটের জন্য খরচ হয় প্রায় ১৫০ টাকা। আর যে জেডডি-স্টিম ইঞ্জিন (ZD-steam engine) এই পথে একটি মাত্র ট্রেনকে টেনে নিয়ে যেত, সেটি ১৯২১ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে (Manchester) তৈরি হয়েছিল।
১৯২১ সালে স্টিম ইঞ্জিনটি ইংল্যান্ডের ম্যাচেঞ্চারে তৈরি হয়েছিস, তারপর তা ব্রিটিশ ভারতে (British India) আসে। শকুন্তলা রেলওয়েজের ব্যবহার শুরু ১৯২৩ সাল থেকে। প্রায় ১০০ বছর হলেও, এই রেলপথ এখনও অক্ষত। তবে এখন আর স্টিম ইঞ্জিন নেই, ১৯৯৪ সালে পুরনো ইঞ্জিনটি খুলে ফেলে ডিজেল মোটর বসানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, সেন্ট্রাল প্রভিন্স রেলওয়ে কোম্পানি (Central Province Railway Company – CPRC) প্রতিষ্ঠা করেছিল কিলিক-নিক্সন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার। এই রেলপথ পাতার উদ্দেশ্যই ছিল যবতমাল থেকে তুলো (Cotton) মুম্বই পাঠানো (তখনকার বম্বে)। তারপর জলপথে জাহাজে করে তুলো ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টারে পাঠানো হতো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারত সরকার আজও এই রেলপথের জন্য টাকা দেয় ওই ব্রিটিশ কোম্পানিকে। বর্তমানে এই রেল পরিষেবায় সাতজন কাজ করেন। তাঁরাই ট্রেনকে সিগন্যাল দেখানো (Signalling), টিকিট বিক্রি করা (Selling Tickets), বগি থেকে ইঞ্জিন আলাদা করার (Engine Detaching) কাজ করেন। উল্লেখ্য, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু (Former Union Minister of Railways Suresh Prabhu) যবতমাল-মূর্তিজাপুর-অচলপুর (Yavatmal-Murtizapur-Achalpur) রেলপথকে ন্যারো গেজ (Narrow Gauge) থেকে ব্রড গেজে (Broad Gauge) পরিণত করার জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিলেন।