Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
Fourth Pillar | মোদিজির মুসাফিরনামা 
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩, ১০:৩০:০০ পিএম
  • / ১২০ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

হলিউড থেকে বলিউড হয়ে টলিউড বা কলিউডের এক ফর্মুলা পিকচারের চেনা ছক আছে। সমস্ত অত্যাচারের শেষে নায়ক একা হাতে ঢিসুম, ঢিসুম, ঢিসুম। ভিলেন আর দলবলের প্রত্যেককে কুপোকাত করে হিরোইন আর তার বুড়ো বাপ-মা বা হিরোইনের ছোট্ট ভাইকে উদ্ধার করে, অজস্র গুলি নায়কের বাঁ ডান ওপর নীচে দিয়ে চলে যায়, কিন্তু তাকে ছোঁয় না। ছুঁলেও তাতে কেবল রক্ত পড়ে, চারিদিকে বোমা ফাটে কিন্তু তাতে নায়ক মরে না কেবল তার চোখমুখ জামাকাপড়ে কালো ছোপছোপ দাগ পড়ে, নায়ক এক অজড় অমর অক্ষয় চরিত্র। তো আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও তেমনই এক চরিত্র। দেশের মন্ত্রিসভার পাঁচটা মন্ত্রীর নাম আর দফতর আপনার মনে নেই, লজ্জা পাবেন না, মনে থাকার কথাও নয়, কারণ সর্বত্র ওমনিপ্রেজেন্ট, ওমনিপোটেন্ট, ওমনিসিয়েন্ট নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। তিনি সর্বব্যাপী, তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি সর্বশক্তিমান। সেই প্রভুর কৃপায় দাড়ি গজায়, ভাল্লুকে খায় শাঁকালু, প্রভু আমার পরম দয়ালু, সেইরকম। অন্তত সেরকমই এক প্রচার ভিডিয়ো বাজারে ছেড়েছে বিজেপি। 

মুঝে চলতে জানা হ্যায়। মোদিজি কেবল চলছেন, আর চলার পথে বাধা কারা? দেশের বিরোধী দলের অন্যতম নেতানেত্রী, রাহুল, সোনিয়া গান্ধী, একবার দিগ্বিজয় সিংকে দেখা গেল। এবং অবশ্যই বিবিসি, যারা এতদিন পরে গুজরাত দাঙ্গার সেই দগদগে ছবি সামনে এনে তার পিছনের দায় আর দায়ী মানুষগুলোকে সামনে এনেছে। আর কেউ নেই। মানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আঞ্চলিক দল, তাদের নেতারা নেই, কমিউনিস্টরা নেই। তাঁর এই যাত্রাপথে কেন নেই এঁরা? ছকটা পরিষ্কার, আগে কংগ্রেসমুক্ত ভারত চাই, তারপর একে একে বিচ্ছিন্ন এই আঞ্চলিক দলেদের হয় ইডি সিবিআই ভিজিলেন্স লাগিয়ে অনুগত করে তোলা হবে, না হলে জেলে পুরে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হবে। কংগ্রেস সরে গেলে রাজস্থান, ছত্তিশগড়, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল হাতে এসে গেল, বাকি আর কী রইল? এবং কংগ্রেসের পেছনে এই আদাজল খেয়ে লাগার অন্যতম কারণ হল কংগ্রেসের দর্শন, গণতন্ত্রের ধারণা, সংবিধান নির্ভরতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধারণা ইত্যাদি যা কিছু আমাদের দেশের ঐতিহ্য তাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার দিকে চলার পথ মসৃণ হবে। তাই রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা, তড়িঘড়ি সাংসদপদ খারিজ, সরকারি বাংলো ছাড়তে বলা, এমনকী এই যে ভিডিয়ো, সেখানেও খুব স্পষ্ট যে আপাতত টার্গেট রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস। কিন্তু সব কি আর চেনা ছকেই চলে, আপনি যা ভেবে ঘুঁটি চালবেন, তা ভুলও তো হতে পারে। বিজেপির এই হঠাৎ তীব্র রাহুল বিরোধিতার ফলে এতদিনের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে বিরোধীরা সরব এবং ক্রমশ তাদের জোট একটা আকার নিচ্ছে। আবার ফেরা যাক মোদিজির কার্টুন ভিডিয়োতে। মোদিজি কেটলিকে সিংহাসনে বসিয়ে ২০১৪তে প্রধানমন্ত্রী হলেন, এরপর একে একে তিনি কী করলেন তা এসেছে, কিন্তু অনেক কিছুই আসেনি, কোন কোনটা আসেনি? প্রথমেই আসেনি নোটবন্দি, সেই যে, মিত্রোঁওঁওওও… না সেই নোটবন্দির তামাশা আসেনি। মানুষের চূড়ান্ত হেনস্তার কথা আসেনি, কেন আসেনি? মোদিজি লজ্জা পেয়েছেন? তাঁর প্রশাসনিক সময়কালের ইতিহাস লেখা হলে এত বড় মূর্খামি তো থাকবেই, কিন্তু প্রচার ভিডিয়োতে কি সেটা রাখা সম্ভব? কাজেই আসেনি। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | শ্রমিকের ঘাম রক্তে ফুলে ফেঁপে উঠছে মোদিসখা আদানির ভাণ্ডার  

আসেনি জিএসটি, কেন? মধ্যরাতে জওহরলাল নেহরু সংসদে ভাষণ দিয়েছিলেন, মোদিজিও দিলেন, তারপর থেকে আজও জিএসটি এক ধাঁধা। মাত্র গতকাল সিঙ্গুরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, জিএসটি সমর্থন করে ভুল করেছি। বিভিন্ন রাজ্যের সরকার একসুরে বলছে এই জিএসটি লাগু করার ফলে ক্ষতি হয়েছে, এবং জিএসটি বাবদ বিরাট টাকা বকেয়া পড়ে আছে, তা রাজ্যের খাতে নিয়ে আসার কোনও সরল বন্দোবস্তই হয়নি। অতএব মোদিজি লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়িতে উঠছেন বটে কিন্তু সেই মধ্যরাতে জিএসটির বিষয়টা চেপে গেছেন। এরপর দু’কান কাটার তো লাজ থাকে না, রাস্তার ধার দিয়ে নয় মধ্যিখান দিয়েই হাঁটে। মোদিজি উজ্জ্বলা যোজনার কথা বললেন, চলার পথে এক বুড়িমা, আহা, কাঠের ধোঁয়ায় রান্না করছিলেন, তো অমনি মোদিজির দুকখু হল, তিনি হুশ করে ঘুরে অ্যাব্রা কা ড্যাবরা না বলেই হাজির করলেন গ্যাস সিলিন্ডার। তিনি ভুলেই গেছেন আপাতত এই যোজনায় ফ্রি গ্যাস আর কেউ পাচ্ছেন না, ভরতুকি উঠে গেছে কাজেই গ্যাসের দাম এখন ১১২৯ টাকা। ২০১১তে ভরতুকি দেওয়া সিলিন্ডারের দাম ছিল ৯০০ টাকার কম। এখন ১১২৯ টাকায় ১৯ টাকা ৫৭ পয়সার ভরতুকি। কিন্তু ওই যে দু’কান কাটা, তাই এলপিজি সিলিন্ডারের ছবি এল। এরপর এমএসএমই, মাইক্রো স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ নাকি ঝকঝক করছে, মোদিজি তাতে জিয়ন কাঠি ছুঁইয়ে দিয়েছেন। সত্যি অবস্থাটা কী? 

২০২২–২৩-এ ১০৬৫৫টা কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, প্রাক্তন চিফ স্ট্যাটিস্টিয়ান প্রণব সেন জানাচ্ছেন, দেশের ৪০ শতাংশ চাকরি এই এমএসএমই থেকে আসে, অর্থনীতির ৩০ শতাংশ জুড়ে আছে এই সেক্টর কিন্তু তা এখন এক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে কী? বিজ্ঞাপনে তো যা খুশি দেখানোই যায়। তারপরে এল দুই দেশের নাগরিক, তাদের হাল বেহাল, তো মোদিজি আবার হুউউউউশ করে শূন্য থেকে হাজির করলেন ফ্রি চাল, গম। খানিকটা ওই রাস্তার ধারে ভণ্ড সাধুরা যেরকম শূন্য থেকে আংটি পাথর মিষ্টি এনে হাজির করে, সেরকম। ফারাকটা হল, ওই আংটি বা পাথর বা মিষ্টি ওই ভণ্ডের নিজের টাকায় কেনা, এখানে ওই চাল গম মোদিজি নিজের পয়সায় কেনেননি, তা আদতে আমজনতার ট্যাক্সের পয়সায় কেনা। কিন্তু ভাবভঙ্গিমা হল, আহা তোমার কত দুকখু, এই নাও তোমাকে কিছু দিলাম। এরপর ওই সিঁড়িতে, মানে মোদিজির চলার রাস্তাতে এক কৃষক, যে কৃষকের আমদানি দ্বিগুণ করে দেওয়ার বাওয়াল আমাদের শোনা, তাকে ফসলের ইনসিওর‍্যান্স হাতে ধরিয়ে দিলেন দেশের কৃষিমন্ত্রী নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী। কারণ যা করবেন উনিই করবেন, যা করছেন উনিই করছেন। ইতিহাস বলছে আমাদের দেশে ফসল বিমা যোজনার প্রথম রূপকার হলেন অধ্যাপক ভি এম ডান্ডেকর। তাঁর ফর্মুলা মেনেই ১৯৭৯-এ জেনারেল ইনসিওর‍্যান্স অফ ইন্ডিয়া প্রথম এই শস্য বিমা যোজনা চালু করেছিল। এরপর থেকে এই যোজনাতে কিছু পরিমার্জন হয়েছে, পরিবর্ধন হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এই পরিকল্পনাকেই প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা বলে নতুন নাম দিয়ে বাজারে আনলেন। কিন্তু অবস্থা দেখুন, ৩৩০০ কোটি টাকার বেশি বিমার দাবি বকেয়া পড়ে আছে। মানে ফসল বিমার প্রিমিয়াম পেয়ে গেছে বিভিন্ন ইনসিওর‍্যান্স কোম্পানি কিন্তু কৃষকের হাতে পেনসিল। কিন্তু সেই বিমা যোজনার বিজ্ঞাপন চলছে। 

এরপর বিজ্ঞাপনে আছে সাহেবদের জড়িয়ে ধরা, মোদিজির এই সাহেব জড়িয়ে ধরার বহু ছবি আমরা দেখেছি, কাজেই এই কার্টুন ছবিতে তা বাদ যাবে কেন? জড়ামড়ির পরে মোদিজি সহাস্য মুখে চললেন আরও ওপরে, কোভিডের সরু দড়ি পেরিয়ে, হাততালি বাজানো, বা থালা বাজাও দিয়া জ্বালাও-এর বোকামির কথা নেই, যেমন নেই লক্ষ মানুষের অনির্দিষ্ট যাত্রার ছবি। সেই পরিযায়ী শ্রমিকরা নেই, মোদিজি এগিয়ে চলেছেন ফাইভ ট্রিলিয়ন ইকোনমির দিকে, গান বাজছে মুঝে চলতে জানা হ্যায়। গোটা বিজ্ঞাপন জুড়ে কেবল মোদি, আর কেউ নেই, আরএসএস-এর কেউ নেই, বিজেপির কেউ নেই, মার্গদর্শক মণ্ডলীর কেউ নেই, মন্ত্রিসভার কেউ নেই, অ্যাডভাইজরি বোর্ডের কেউ নেই, আদানিও নেই। কেবল একা নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি একলা ভারতবর্ষকে ফাইভ ট্রিলিয়ন ইকোনমির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এক চূড়ান্ত মেগালোম্যানিয়াক মানুষের পক্ষেই এ ধরনের কাজে সায় দেওয়া সম্ভব। আসলে দেশ, সমাজ, দেশের মানুষের বিকাশ, উন্নয়ন, উত্তরণ জীবনানন্দের ভাষায় ‘অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ’। এক বিশাল দেশের এতগুলো ভাষাভাষি মানুষ, এত বৈচিত্র, স্বাধীনতা সংগ্রামের এত ইতিহাস, গবেষক বিজ্ঞানীদের এত প্রচেষ্টা, বিভিন্ন শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের মিলিত প্রয়াস, শিক্ষক অধ্যাপক চিকিৎসক বিভিন্ন পেশার মানুষজন, দেশের প্রতিপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শ্রমশক্তি এবং অবশ্যই আমাদের অন্নদাতাদের মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের দেশ চলছে, সভি কা খুন হ্যায় সামিল ইয়াহা কি মিট্টি মে, কিসি কা বাপ কা থোড়ি হ্যায়? কিন্তু আরএসএস–বিজেপি আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্যকে মুছে এক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা তা হতে দিতে পারি না। দেশটা সত্তর দশকের ইস্টম্যান কালারে ছোপানো এক মেইন স্ট্রিম মুভি নয়, দেশ অরণ্যদেবের হাতেও চলে যায়নি। এ দেশ আমাদের প্রত্যেকের, এ দেশের একটা শক্তপোক্ত সংবিধান আছে, সংসদ আছে, লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা আছে, দেশের প্রশাসন আছে, বিচার বিভাগ আছে, কেউ যদি সবকছুর দখল নিয়ে একলা চলতে চান, তাহলে আমরাই তা রুখব।   

 

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

গত এক সপ্তাহে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ৩৩ জনের
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
শনি ঠাকুরের কৃপা পাবেন এই ৫ রাশির জাতক
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ঘরের মাঠে হারাল কলকাতা নাইট রাইডার্স
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
Aajke | রাজভবনেও গোকুল পিঠের গপ্পো
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
‘রেক্কা’-র পর ফের টলি ছবিতে বাঁধন!
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
বিজেপি কর্মীদের বাস লক্ষ্য করে পাথর, এলাকায় চাঞ্চল্য
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
রাজভবনে চর ঢোকানো হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, বিস্ফোরক বোস
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
জামিনে না, কাকার অন্ত্যেষ্টিতে যাওয়ার অনুমতি হেমন্তকে
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্তে বিশেষ দল পুলিশের
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
এমন ভোট হবে, দেড় মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন, হুমকি শুভেন্দুর
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
মনোনয়নে তৃণমূলের বিপুল উচ্ছাস, বিরোধীদের মৃত্যুঘন্টা বলে দাবি অরূপ চক্রবর্তীর
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
যোগ্য, অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব, অবস্থান পাল্টে জানাল এসএসসি
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
পুকুরে স্নান করতে নেমে মৃত্যু ৩ কিশোরের
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া যায় কিনা বিবেচনা করা হবে, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
রাজভবনে মহিলা শ্লীলতাহানি প্রতিবাদে রাজপথে তৃণমূলের মহিলা কংগ্রেস
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team