ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে দ্বিতীয়বার বোমা পড়ল। প্রথমবার ১৯৮৯, সরকারের কংগ্রেস দল। খুন হলেন সফদর হাসমি। জাতীয় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে, কবীর বেদী ছিলেন সঞ্চালক। তাঁকে অবাক করে দিয়ে, মন্ত্রী কে এল ভগতের সামনে শাবানা হাসমি, কংগ্রেসি গুন্ডাদের হাতে নিহত সফদর হাসমির কথা বলেন, ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন, বিচার চান। না তাঁকে কেউ আটকায়নি, মন্ত্রী তখন বা পরে কোনও কথা বলেননি, কংগ্রেস সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকেও কোনও কথা বলা হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, টলিউড বা দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বহু মানুষ শাবানাকে সমর্থন করেছিলেন, তার চেয়েও বড় কথা, কেউ বিরোধিতা করেননি, কবীর বেদী কেবল বলেছিলেন আই ওয়াজ ফ্লাভারগাস্টেড। ৩২ বছর পর গোয়াতে ইফি, ইটারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়াতে দ্বিতীয় বোমাটি ফাটালেন ইজরায়েলি চলচ্চিত্রকার, স্ক্রিপ্ট রাইটার নাদাভ লাপিড। মঞ্চে উঠে তিনি জানালেন, প্রতিযোগিতামূলক ছবি বিভাগে রাখা হয়েছে দ্য কাশ্মীর ফাইলসকে, ছবিটি ভালগার, অশ্লীল। ছবিটি প্রপাগান্ডা, প্রচারধর্মী। মঞ্চে উঠেই বললেন, ছবিটি এই বিভাগে রাখাটাই অন্যায়, জুরিরা ছবি দেখে যা বলেছেন, তাই আমি আপনাদের জানাচ্ছি। তিনি বলার পরেই ছবির অন্যতম অভিনেতা বিজেপির অন্যতম প্রচারক অনুপম খের বলেছেন, এরা হল ভারত বিদ্বেষী, অর্থাৎ দেশদ্রোহী। একজন ইজরায়েলি নাগরিক, যিনি থাকেন ফ্রান্সে, তিনি কেন দেশপ্রেমী, মানে ভারতপ্রেমী হবেন, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য অনুপম খের দেননি। সাধারণত দেশের তাবৎ সরকার বিরোধী দল ও মানুষকে যা বলা হয়, সেই দেশদ্রোহী শব্দটাই তিনি বেছে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়ার স্বর আরও একটু উঁচু করেই বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মঞ্চ ব্যবহার করে ইসলামিক জঙ্গিদের সমর্থন জানানো হচ্ছে। এই কাশ্মীর ফাইলস যে এক নিম্নমার্গের প্রচারধর্মী ছবি, এটা যে ছবির মান সাপেক্ষে এক জঘন্য অশ্লীল সিনেমা, তা কি প্রথম বলা হল? না। দেশ ও দুনিয়ার অনেকেই এই সারসত্য অনেক আগেই বলেছে। মোদি সরকার তৈরি হওয়ার পরে বলিউড এবং দেশের বিভিন্ন রিজিওনাল ল্যাঙ্গোয়েজে এই ধরনের নিম্নমানের প্রচারধর্মী ছবি তৈরি হচ্ছে তা অনেকেই বলেছেন, আমাদের চতুর্থ স্তম্ভেও আমরা সেকথা জানিয়েছি, যদিও সেগুলোর মধ্যেও এই ছবি অশ্লীলতম। জঘন্যভাবে একপক্ষের ঘটনাগুলোকে সাজিয়ে রেখে এক গোয়েবলসীয় প্রচার চালানো হয়েছে। তাহলে নাদাভ লাপিড নতুন কী বললেন? না তিনি নতুন কিছুই বলেননি, কিন্তু এটা একটা সেমসাইড গোল, তাই এত হই চই হচ্ছে। ইফি মানে এই আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সরকারি পয়সায় হয়, এই ফেস্টিভ্যাল বা জাতীয় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কোনওটাই দুধ কা ধুলা নয়। সরকারি দল সেই কবে থেকেই তাদের পেটোয়া লোকজনকে এই আসরে পুরস্কৃত করে, পিঠ থাবড়ানো চলে, সেসব তো আমরা জানি। পুরস্কারের জন্য হেঁদিয়ে যাওয়া সাংসদ অভিনেতা কোনও এক জাত গোখরোর সঙ্গে হবনবিং-এর পরেই জাতে উঠতে পারেন, এসব তথ্য তো সবার জানা। তাহলে সেমসাইডটা হল কেন এবং কীভাবে? সরকারি কর্মকর্তা আর কর্তাভজাদের জানা আছে, ইজরায়েল হল ইসলামিক টেররিজমের ভয়ঙ্কর বিরোধী, আজ নয়, এটা ঐতিহাসিক তথ্য। তাদের মনে হয়েছে ইজরায়েলি চলচ্চিত্রকার, ইজরায়েলি স্ক্রিপ্ট রাইটার, কান চলচ্চিত্র, বিশ্বের বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার পাওয়া নাদাভ লাপিড ও এক জায়নবাদী ইসলাম বিরোধী মানুষ। শ্রেষ্ঠ চলচিত্র না হোক, দ্য কাশ্মীর ফাইলস পেতেই পারে এক আধটা ললিপপ। তাই ওনাকে কেবল জুরি বোর্ডে রাখা হল তাইই নয়, ওনাকে জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানও করা হল। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। নাদাভ লাপিডকে জুরি বোর্ডের মাথায় বসানোর আগে একটু গুগল করে নিলেই এই ভুল হত না। ওই কর্মকর্তা, মোসাহেব, জো হুজুরের দল বুঝে যেতেন এই লোকটা অসম্ভব তেএঁটে, ইনি ইজরায়েলি জাতীয়তাবাদ, ইজরায়েলি পরিচয় নিয়েই বহুবার বহু প্রশ্ন করেছেন তাঁর সিনেমাতেও। ওই কর্মকর্তারা যদি দেখে ফেলতেন ২০১৩তে ওঁর তৈরি ‘দ্য অ্যামুনেশন হিল’, তাহলেও এই ভুল করতেন না। কিন্তু সে সব জি হুজুরেরা বই দেখেন, ছবি তো দেখেন না, জানেন না এই নাদাভ লাপিড এক জায়গায় বলেছেন, “need someone to be in the opposition, to upset the power structure of cinema, to want to lock horns with it”. মানে হল, সিনেমার ক্ষমতাবান কাঠামোকে নড়বড়ে করে দিতে, তার বিরোধিতায়, কাউকে তো থাকতে হবে, লড়ে যেতে হবে মুখোমুখি। তো এহেন মানুষটাকে কেবল জুরি নয়, জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান করে দেওয়া হল, ফল হাতেনাতে। আচ্ছা তিনি কি কাশ্মীরে জঙ্গি, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর তাদের অত্যাচার, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পলায়ন নিয়ে একটা কথাও বলেছেন? না, বরং বলেছেন, আমি গ্রাউন্ড পলিটিক্স, জমিনি হকিকত জানি না, জানতেও চাই না, জেনে ওঠা সম্ভবও নয়। আমি যা বলেছি তা এই ছবির কাঠামো, এই ছবি যে ভাবে তৈরি হয়েছে, ছবি দেখে যা মনে হচ্ছে, তাই বলেছি। উনি বলার পরে জুরি সদস্যদের মধ্যে বিদেশি আরও তিনজন, জিনকো গোতো, ফরাসি চলচ্চিত্রকার পাস্কল সাভাঞ্জ, ফরাসি তথ্যচিত্র পরিচালক জ্যাভিয়ের অ্যাঙ্গুলো বার্তোঁ নাদাভ লাপিডের বক্তব্য সমর্থন করেছেন। আমাদের দেশের থেকে জুরি ছিলেন সুদীপ্ত সেন, ইনি ক’দিন আগেই বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন, ওঁর এক তথ্যচিত্রের জন্য। সেখানে তিনি বলেছেন, কেরল থেকে নাকি ৩২ হাজার হিন্দু মহিলা আইসিস বা অন্য ইসলামিক টেররিস্টদের খপ্পরে পড়েছে। তো ইনি স্বাভাবিকভাবেই এবারের জুরি বোর্ডে ছিলেন, তিনি বলেছেন, কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে নাদাভ লাপিড যা বলেছেন, তা একান্তভাবেই তাঁর, মানে লাপিডের নিজের বক্তব্য। সুদীপ্ত সেন এই কথা বলার পরেই অন্য তিনজন বিদেশি জ্যুরি নাদাভ লাপিডের বক্তব্যকে সমর্থন করে বললেন, ছবিটি ভালগার এবং নিকৃষ্ট মানের প্রপাগান্ডা। এই কাশ্মীর ফাইলস ছবিতেই, একটা ডায়ালগ আছে, মিথ্যে বলার থেকেও বড় অপরাধ হল, সত্যিটাকে না বলা। কাশ্মীর ফাইলস গোটা ছবিতেই সেটাই হয়েছে, কিছু সত্যি কথা তো বলা হয়েছে, কিন্তু তারচেয়েও বড় কথা হল, বহু সত্যি কথা চেপে গেছেন পরিচালক। আসুন দেখা যাক কোন সত্যি তিনি বলেছেন, কোন সত্যি তিনি চেপে গেছেন, আর তার ফলে তৈরি এক অর্ধসত্য কীভাবে বিদ্বেষ বিষ ছড়ানোর এক যন্ত্র হয়ে উঠেছে, এই সিনেমা, দ্য কাশ্মীর ফাইলস। যেটা সত্যি সেটা কী?
সেটা হল কাশ্মীরে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, কেবল অত্যাচার হয়েছে বললেও কম বলা হবে, নৃশংস অত্যাচার হয়েছে। সেই অত্যাচারের ফলে অনেকে মারা গেছেন, বিরাট সংখ্যক কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের তাঁদের বাসভূমি ছেড়ে পালাতে হয়েছে, নিজভূমেই তাঁরা হয়েছেন উদ্বাস্তু। এ কথাগুলো তো সত্যি, দিনের আলোর মতো সত্যি। কিন্তু সেই সময় কাশ্মীরে কি কেবল কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ খুন হয়েছে? কাশ্মীরের মুসলমানরাই কি তাদের খুন করেছে? এটা কি হিন্দু বনাম মুসলমান দাঙ্গা ছিল?
একবার দয়া করে ভাবুন, ১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই কাশ্মীরে ভারত বনাম পাকিস্তান যুদ্ধ হয়, কাশ্মীরের এক বিরাট অংশ ভারতের সীমার মধ্যে আসে, এক অংশ পাকিস্তানের দখলে থেকে যায়, যে অঞ্চলটিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর বলা হয়। আর লাইন অফ কন্ট্রোলের মধ্যে থাকা, কাশ্মীরের অংশ নিয়ে জম্মু কাশ্মীর রাজ্য তৈরি হয়। সারা দেশে তখন দাঙ্গা চলছে, উদ্বাস্তু আসছে ওপার থেকে এপারে, এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে। কাশ্মীরের বড় অংশই, মানুষের বিরাট ভাগই থেকে গেল ভারতের সঙ্গে, কেন? তাদের নেতা শেখ আবদুল্লার জন্য, ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের জন্য, তাদেরকে দেওয়া হল বিশেষ অধিকার, কিছু সুবিধে, তাঁরা ভারতেই শুধু থাকলেন না, কেবল কাশ্মীরি পুরুষেরাই নয়, কাশ্মীরি মহিলারাও সেদিন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে লড়েছিলেন, অস্ত্র হাতেই লড়েছিলেন, তাঁদের ৯৯ শতাংশই ছিল মুসলমান। না, কাশ্মীরে দাঙ্গা হয়নি। ৪৭ থেকে ৮৬ পর্যন্ত কাশ্মীরে দাঙ্গা হয়নি, কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা সুরক্ষিত ছিলেন, ইসলাম নয়, কাশ্মীরিয়ত ছিল সেই কাশ্মীরের ভিত্তি। ৯৩ শতাংশ মুসলমান আর ২-৩ শতাংশ কাশ্মীরি পণ্ডিত, হিন্দু সাকুল্যে ৪ শতাংশ। দিব্যি ছিলেন তাঁরা। ছবিতে একথা বলা হয়েছে? যদি এই লড়াই হিন্দু মুসলমানের হত, তাহলে কতজন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ বেঁচে থাকতেন? সেদিন এমন কোনও লড়াই ছিল না। হল কখন? কাদের ভুলে, কাদের প্ররোচনায় হল এমনটা?
আসলে সেই শুরু থেকেই কাশ্মীরের খুব কমসংখ্যক কিছু মানুষ, আজাদ কাশ্মীরের কথা বলতেন, তাঁরা পাকিস্তান নয়, ভারতও নয়, আজাদ কাশ্মীরের দাবি তুলতেন। আবার কংগ্রেস বিরোধী কিন্তু প্রো ইন্ডিয়ান কিছু গোষ্ঠী ছিল, কাশ্মীরে পুতুল সরকার রেখে বকলমে কেন্দ্র সরকারের শাসন চলত, তার বিরোধী ছিলেন বহু মানুষ। এরমধ্যে ১৯৮৬-র নির্বাচন হল, চূড়ান্ত রিগিং, সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে, পুলিশকে কাজে লাগিয়ে ন্যাশনাল কনফারেন্স আর কংগ্রেস সেই নির্বাচনে জোট বেঁধেছিল, উল্টোদিকে কিছু ছোট ছোট দল, তাদের জোটের নাম ছিল মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট, মাফ। রিগিং হয়েছিল, কেমন রিগিং? আমির কাদের বিধানসভা কেন্দ্রে ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর প্রার্থী ছিলেন, দলের প্রবীণ একজন নেতা, তিনি হারছিলেন সুনিশ্চিত, এটা দেখেই তিনি গণণাকেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরে যান, মাফ এর প্রার্থী আপত্তি জানান, তাঁকে জেলে পোরা হয়, তাঁর কেন্দ্রে এজেন্টকেও জেলে পোরা হয়, ২০ মাস পরে সেই প্রার্থী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পাকিস্তান চলে যান, এখন তিনি হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার মহম্মদ সালাউদ্দিন, তাঁর এজেন্ট ছিলেন ইয়াসিন মালিক। মজার কথা দেখুন, এঁরা তখনও দেশের সংবিধান মেনে নির্বাচনে লড়াই করছিলেন, এই ভুয়ো নির্বাচনের পর তাঁরা রাষ্ট্র আর সংবিধানের ওপর আস্থা হারান, সুযোগ নেয় পাকিস্তান। পাকিস্তান তার আগে ৬৫তে, ৭১ এ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে, তারা এই সময়ে অপারেশন টোপাজ শুরু করে। কাশ্মীরের সেই সব যুবক যারা মনে করছিল আজাদ কাশ্মীর তাদের ভবিষ্যৎ, তাদেরকে বোঝাতে শুরু করে, এই ভুয়ো নির্বাচন, সেই সুযোগ এনে দেয়, পাকিস্তান তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, তাদের মিলিটারি ট্রেনিং দিতে শুরু করে। যে কাশ্মীরে ১৯৪৭ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত, তেমন কোনও বড় ঘটনা ছিল না, সেই কাশ্মীর হয়ে উঠল অশান্ত।
তো এই মিলিট্যান্টদের শত্রু কারা ছিল? কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা? কেবল কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা? সিনেমাতে দেখানো হচ্ছে, কয়েকজন তাস খেলছেন, খবর আসছে, প্রাক্তন বিচারপতি নীলকন্ঠ গঞ্জুকে খুন করা হয়েছে, যিনি অমর চাঁদ নামে এক পুলিশ ইন্সপেক্টরকে খুন করার অপরাধে, মকবুল ভাটকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন, বলা হল, তিনি ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত, ছিলেনই তো, কিন্তু তাঁকে মারা তো হল মকবুল ভাটের ফাঁসির বদলা নিতে, এটা ছবিতে দেখানো হল, দেখানো হল না, ওই সময়েই ৮০ বছরের বৃদ্ধ রাজনৈতিক নেতা মৌলানা মাসুদিকেও খুন করল, ওই মিলিট্যান্টরাই, কারণ তিনি ছিলেন ভারতের পক্ষে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের অজস্র মন্ত্রী, নেতাদের খুন করা হল ওই একই কারণে। মন্ত্রী ছিলেন হিসামুদ্দিন বন্দে, মুহম্মদ আতাউল্লা সুরাওর্দি, আবদুল ঘনি ভিরা, ভালি আহমেদ ভাট, মুহম্মদ সুবান ভাট, পীর মুহম্মদ সফি, শেখ মঞ্জুর, আবদুল রশিদ দার, নাজির আহমেদ ওয়ানি, গুলাম কাদির মীর, আবদুল মাজিদ বন্দে এরকম আরও অনেক ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারা খুন হল, কেন? তারা কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল, তাদেরকে মিলিট্যান্টরা ভারতবর্ষের এজেন্ট বলে খুন করেছিল, এর একটা খুন, একটা হত্যাও কি দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এ দেখানো হয়েছিল? না হয়নি। কেন? কারণ এগুলো দেখালে ছবিটা হিন্দু আর মুসলমানের লড়াই হয়ে উঠত না, হয়ে উঠত সময়ের ছবি, এক ইতিহাস, যেখানে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা মারা গেছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, তার সঙ্গেই মারা গেছেন অজস্র মুসলমান, এমন রাজনৈতিক নেতা, যাদের মিলিট্যান্টরা মনে করেছে, এরা ভারতের পক্ষে, লড়াইটা ছিল পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত মিলিট্যান্ট আর ভারতের মধ্যে, সেই ইতিহাস না দেখিয়ে এক খণ্ডচিত্র তৈরি করে, হিন্দু মুসলমান বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করছে এই ছবি। এবং সঠিক কারণেই নাদাভ লাপিড দ্য কাশ্মীর ফাইলসকে ভালগার বলেছেন, প্রপাগান্ডা বলেছেন, ঠিক সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদি এই ছবির প্রশংসা করেছেন, বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে ছবিটিকে ট্যাক্স ফ্রি করার ঘোষণা হয়েছে। নাদাভ লাপিড এক পক্ষে আছেন, অন্যপক্ষে নরেন্দ্র মোদি, অনুপম খের, বিবেক অগ্নিহোত্রী। নাদাভ একলা? তাতে কী? উনি তো বলেইছেন, সিনেমার ক্ষমতাবান কাঠামোর বিরোধিতায়, কাউকে তো থাকতে হবে, লড়ে যেতে হবে মুখোমুখি।