কাবুল: ‘বদলা নয়, বদল চাই’। ‘বদলে যাওয়া’ তালিবানরা (Taliban) এই স্লোগানেই বিশ্বাসী। কাবুল দখলের পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে অন্তত তেমন সুরই শোনা গেল তালিবানদের মুখে। আফগানিস্তানে (Afghanistan) শান্তি স্থাপনই তাদের লক্ষ্য, একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে তালিবান জমানা, মোদির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অমিত শাহ্, রাজনাথ সিং, অজিত দোভালেরা
তালিবান মুখপাত্রের দাবি, তাদের মধ্যে অনেক বদল এসেছে। ২০০১ সালের তালিবান আর ২০২১ সালের তালিবানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মতাদর্শ এবং বিশ্বাস এক থাকলেও, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে অনেক বদল ঘটেছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞ হয়েছেন তারা।
আমেরিকা সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার কথা ভাবছে না তালিবানরা। আপাতত শান্তি স্থাপনই তাদের মূল উদ্দেশ্যে। যেন তালিবানের মুখেও ‘বদলা নয়, বদল চাই’-এর স্লোগান। জাবিউল্লাহ কথায়, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সরকার চাইছি৷ আমরা আর কোনও প্রকার অশান্তি চাই না৷’
জাবিউল্লাহ মুজাহিদের দাবি, এতদিন যে সব বিদেশি শক্তি তালিবানদের উপর ‘হামলা’ চালিয়েছে, তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। সংবাদিক বৈঠকে তালিবানদের তরফে ‘আশ্বাস’ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি বিদেশি দূতাবাসকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হবে। আফগানিস্তানে আটকে থাকা বিদেশি নাগরিকদের প্রতিও সহানুভূতির সুর শোনা গিয়েছে তাদের গলায়।
আফগানিস্তানে চলা অশান্তির ঘটনায় পূর্ববর্তী সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছে তালিবানরা। ঘানি সরকারের অপদার্থের কারণেই দেশে লুঠতরাজ, সাময়িক অশান্তি চলছে। কড়া হাতে তা দমন করা হবে। বার্তা দিয়েছে তালিবানরা। মুখপাত্র বলেন, দেশ ছেড়ে কেউ পালিয়ে যাক আমরা চাই না৷ এই দেশ যেমন আমাদের, ঠিক তেমনই এ দেশে বসবাসকারী সকলের৷
আরও পড়ুন: সাধারণ মানুষকে গুলি করার পরই কাবুলে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি তালিবানের
তালিবান মুখপাত্র বলেন, ইসলামের বেঁধে দেওয়া কাঠামোর ভিতরে মহিলারা সম্মানের সঙ্গে থাকবেন। আফগানিস্তানের মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করাতেও আপত্তি থাকবে তালিবানদের, মন্তব্য তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের।
তালিবানি শাসনে মহিলারা কেমন থাকবে, তা নিয়ে নানা মহল দোলাচলে। তালিবান মুখপাত্রের স্পষ্ট বার্তা, শরিয়ত আইন অনুযায়ী মহিলাদের যা যা অধিকার প্রাপ্য তা দেওয়া হবে। আমাদের এক ধরণের ধর্মীয় অনুশাসন রয়েছে৷ তা মানার অধিকার রয়েছে৷ দ্রুত সবপক্ষের মতামত নিয়ে শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে।
গত রবিবার আফগানিস্তান দখল করে তালিবানরা। তারপর দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে চরম অরাজগতা। আতঙ্কে আফগানিস্তান ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। পালাতে গিয়ে তালিবানের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। দেশজুড়ে যখন চরম অরাজকতা, তখনই সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল তালিবানরা।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তান ছাড়ার হিড়িক অব্যাহত, বিমান বন্দরের বাইরে হাজার হাজার মানুষ
আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না তালিবানরা। তালিবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশের সমস্ত সীমান্ত তাদের দখলে৷ তাই অস্ত্র পাচার অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ প্রতিবেশী দেশগুলিকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, আমাদের মাটিকে তাদের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।