নয়াদিল্লি: বুধবার দুপুর ১২টা অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কে অংশ নেবেন সদ্য সদস্যপদ ফিরে পাওয়া কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এদিন সকালে লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী একথা জানান। প্রথমে কংগ্রেস জানিয়েছিল, অনাস্থা বিতর্কের প্রথমদিনই দলের তরফে প্রথম বক্তা হিসেবে থাকবেন ওয়েনাড়ের সাংসদ। কিন্তু প্রায় শেষ মুহূর্তে রণকৌশল বদল করে আলোচনার সূচনা করেন উত্তর-পূর্বের সাংসদ গৌরব গগৈ। তবে রাহুল যে বুধবার আলোচনায় বক্তব্য রাখবেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। প্রত্যাশামতোই রাহুল এদিন অংশ নেবেন আলোচনায়।
দ্বিতীয় দিন রাহুলের ভাষণ নিয়ে তীক্ষ্ণ কটাক্ষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। তিনি বলেন, গতকাল অনাস্থার উপর বক্তব্য রাখতে নিজের উপরই আস্থা ছিল না কংগ্রেস নেতার। যদিও তিনি আজ বলবেন, তাঁর গুরুমশায় যা শিখিয়ে দিয়েছেন তা বলবেন সভার সামনে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই বিজেপি এমপিরা রাহুল বক্তব্য না রাখায় চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এদিনও তার অন্যথা হবে না বলেই অনুমান।
আরও পড়ুন: সরল অসম রাইফেল, মণিপুরে ঢুকল সিআরপিএফ
এদিকে, এদিন সকালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দৃষ্টান্ত টেনে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস এবং বিরোধীদের একহাত নেওয়ার পরপরই সংসদের বাইরে বিক্ষোভে নেমে পড়েন বিজেপি এমপিরা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে তাঁরা দুর্নীতি, পরিবারবাদ এবং তুষ্টিকরণের রাজনীতির প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। কারণ এদিনই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভাষণ দেবেন। তার আগে থেকেই রাহুলকে মোকাবিলায় আসরে নেমে পড়েছে গেরুয়া বাহিনীর দলবল।
এনিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল। তিনি বলেন, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক কী? স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের কোন লোকটা যুক্ত ছিল? স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধী ছিল বিজেপি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে মণিপুর নিয়ে বলতে বলেছিলাম। তিনি একবারও আসার প্রয়োজন বোধ করেননি। এখন এই সরকারকেই ভারত ছাড়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে গান্ধীজির আন্দোলনের দিনগুলি।
প্রসঙ্গত, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বর্ষপূর্তি এবং অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কের দ্বিতীয় দিনের সকালেই ফের দুর্নীতি, পরিবারবাদ ‘ভারত ছাড়ো’র ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্ক। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পর রাহুল গান্ধী স্বমহিমায় লোকসভায় প্রবেশ করায় কংগ্রেসসহ বিরোধী জোট ইন্ডিয়া চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। অনাস্থা নিয়ে সভায় রাহুল-মোদি দ্বৈরথের আগেই গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ শানালেন মোদি। আর ৯ অগাস্ট, মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দিনটাকেই নিশানা করার সময় হিসেবে বেছে নিলেন। মোদির আক্রমণের তিরের অবশ্য জবাবও এসেছে কংগ্রেস এবং বিরোধী শিবির থেকে।
মহাত্মার ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে স্মরণ করে মোদি এক টুইটে লিখেছেন, দেশ এখন একটা ভাষাতেই আওয়াজ তুলছে। আর তা হল দুর্নীতি, পরিবারবাদ এবং তুষ্টিকরণ ভারত ছাড়ো। মোদির কথায়, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। গান্ধীজির নেতৃত্বে এই আন্দোলন দেশকে স্বাধীন করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি ঘটেছিল দেশের।
এরপরেই মোদির মন্তব্য, আজ ভারতে একটা আওয়াজ উঠেছে। দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, পরিবারবাদ ভারত ছাড়ো, তুষ্টিকরণ ভারত ছাড়ো। উল্লেখ্য রাজস্থানের সিকর থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি কিছুদিন আগেই প্রথম এই ডাক দিয়েছিলেন। তারপর থেকে যে কোনও ভাষণে তিনি গান্ধী পরিবারকে বিদ্ধ করতে এই প্রসঙ্গই উত্থাপন করে চলেছেন। এমনকী ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ভেঙে দু-টুকরো হয়ে যাওয়ার সময়ও মোদি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, শরদ পাওয়ারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। কারণ, তার মূলে রয়েছে কংগ্রেসের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি।