Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
Fourth Pillar: হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৩, ১০:৩০:০০ পিএম
  • / ১৪৭ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

সে এক সময় ছিল। এলিট মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত, শিক্ষক, অধ্যাপক, কবি, লেখক ইত্যাদি বাঙালি নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষজনদের এক গুমোর ছিল, গর্ব যাকে বলে। আমি অনৈতিক কিছু করি না, আমি অন্যায় করি না, আমি অন্যায় পথে রোজগার করি না, সেই অবস্থানকেই কাজি নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় এনেছিলেন। বলেছিলেন— 
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কণ্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
দারিদ্রকে আত্মোন্নতির এক মহোত্তম উপায়, পথ ইত্যাদি বলেছেন, গোটা কবিতা জুড়ে। প্রথম লাইনটাই মানুষ মনে রেখেছে, যে সত্যিই দারিদ্র মানুষকে মহান করে তোলে। মানুষ হয় পড়েইনি, নাহলে ভুলেই গেছে এই কবিতার শেষ ক’টা লাইন। 
সহসা চমকি’ উঠি! হায় মোর শিশু
জাগিয়া কাঁদিছ ঘরে, খাওনি ক’ কিছু
কালি হ’তে সারাদিন তাপস নিষ্ঠুর,
কাঁদ’ মোর ঘরে নিত্য তুমি ক্ষুধাতুর!

পারি নাই বাছা মোর, হে প্রিয় আমার,
দুই বিন্দু দুগ্ধ দিতে!-মোর অধিকার
আনন্দের নাহি নাহি! দারিদ্র্য অসহ
পুত্র হ’য়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ
আমার দুয়ার ধরি! কে বাজাবে বাঁশি?
কোথা পাব আনন্দিত সুন্দরের হাসি?
দুবেলা পেট পুরে খেতে পারা মানুষজন দারিদ্রকে মহান বলে গুমোর দেখাতে পারে বই কী, কিন্তু ক্ষুধাতুর শিশু, খাবার চায়, স্বরাজ চায় না, মহান হবার কোনও সাধ আহ্লাদ তার থাকে না। মহান হতে চাওয়াটা আসলে এক ব্যারাম। সব হয়েছে, ঘর বাড়ি, স্ত্রী পুত্র ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, এবার একটু মহান হওয়া যাক, এইরকম আর কী। ওপরতলার কথায় পরে আসব, আগে লোয়ার ডেপথটাই দেখে নিই। পৃথিবীতে যত সেবা কাজ, গরিব, দুঃখি, আতুর মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, সবই কি লোক দেখানো? সবই কি আসলে ভন্ডামো? না তা তো নয়। বন্যায় ঘর হারিয়ে সামান্য ত্রিপল যে পেয়েছে, একটু খাবার, খাবার জল। ভূমিকম্পে পরে কিছু সাহায্য। জানি তো এসব সেবা কাজ দিয়েই সমাজ বদলানো যাবে না, কিন্তু এই সেবা কাজ ছাড়াও সমাজ চলবে না, এটাই বাস্তব। কিন্তু ওই কোট আনকোট ‘মহান হওয়া’ ব্যাপারটা আলাদা। সেসব মহান হতে চাওয়ার কিছু সরল নিয়ম আছে, মানুষের থেকে শত হস্ত দূরত্ব বজায় রেখে মাঝেমধ্যে মানুষের মধ্যে নেমে আসা। দেখেছিস, কোনও ঘ্যাম নেই, পাশের বাড়ির মেয়ে, ঠিক যেন বিষ্ণুদার ভাইপো ইত্যাদি। অনুষ্ঠান শেষ, ৮-১০-১৬ জন বাউন্সার, দাদা দিদি মহান হবার কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গেলেন। এখানে নিজের দারিদ্র নয়, অন্য মানুষ, অনেক মানুষের বুভুক্ষু পেটে, খোলা আকাশের নীচে দিনযাপন, মোদ্দা কথা অনেক মানুষের দারিদ্র তাঁকে মহান হবার সুযোগ করে দেয়। সঙ্গে প্রেস নিয়ে, ক্যামেরা নিয়ে, নিজের সোশ্যাল মিডিয়া টিম নিয়ে ওনারা মহান হতে যান, মহান হয়ে ফিরে এসে ফেসবুক টুইটারে হলচল মচিয়ে দেন। সেই তিনি যে কোনও জগতের হতে পারেন, রাজনীতি, খেলা, গান, কবিতা, সিনেমা, যে কোনও জগতের সেলিব্রিটি, উঠতি, পড়তি, কুঁচো বা বড়। তো এক্ষেত্রে একট অন্তত ভালো দিক হল, যাক অন্তত একটা কম্বল তো পেল গরিব মানুষটা, বা এক দিনের পেটভরা খাবার, বা কিছু ওষুধ বা কিছু খাতা পেনসিল। কিছু তো পেল? সেটাই বা মাগনায় কে দেয় বলুন। কিন্তু আরেক ধরনের মহান হবার প্রবণতা আছে, তাদের মুখের বুলি, অসাধারণ মানবতার বুলি, শান্তির কথা, ক্ষমা আর ভালবাসার কথা। সে সব কথা শুনে মনে হয় এনারা দেবশিশু, বাস্তব সমাজের বহু ঊর্ধ্বে বিচরণ করেন, যেথা আছে শুধু ভালবাসাবাসি, সেথায় বাস করেন। মহীনের ঘোড়াগুলির বড় ঘোড়া বলেছিলেন, আমার মহান হবার সাধ জাগে,
মহান হতে পারি নে,
আমি যে সাধ আহ্লাদ ছাড়িনে!
হ্যাঁ, হক কথা বলেছিল মহীনের ঘোড়াগুলো। সাধ আহ্লাদ ছেড়ে মহান হওয়া যায়। বুকের কাছে, মাথার ভেতর নিত্যদিন যাদের নানান সাধ আর আহ্লাদ ঘুরে বেড়ায়, তাদের মহান হওয়ার চেষ্টাটা এক বিশুদ্ধ নৌটঙ্কি। সেই বিশুদ্ধ নৌটঙ্কিরই আস্বাদ পাচ্ছি গত কদিন জুড়ে, তাই কিছু কথা বলার ইচ্ছে হল। বলতেন নকশাল, আসলে ১০০ শতাংশ ঢপ, কলকাতার কোনও রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক তাঁর এই দাবিকে সমর্থন করেননি, বরং এক রকবাজ ছোকরা হিসেবেই তেনার নাম ছিল। সেই মিঠুন চক্রবর্তী, তো তিনি মুম্বইয়ে ভাগ্য ফেরাতে গেলেন, ফিরল। বাংলার মিঠুন হিন্দির মিথুন হয়ে গেল। চলছিল, ক্যারিয়ারের পড়তির দিকে এসে বাংলায় যাতায়াত বাড়ালেন, সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর হাত ধরে, মাচাও হচ্ছে আবার সেবাও হচ্ছে, মিঠুন দা মহান হবার স্বাদ পেলেন। সিপিএম ক্ষমতা থেকে নামতেই উনি সোজা কালীঘাট, দিদিতে সঁপিয়া দিনু মন। হলেন রাজ্যসভার এমপি। আহা কী আনন্দ। কিন্তু সারদার টাকাপয়সা শুধু নয়, আরও বেশ কয়েকটা চিট ফান্ড মালিকের সংগে মিঠুন চক্রবর্তীর তখন দারুণ দহরম মহরম, এবং ওদিকে ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। অতএব ইডি, ভিজিলেন্স, ব্যস, অমন সাহসী হিরো চুহা বন গয়া। অমিত শাহ এখন মাই বাপ। অমিত শাহ জানেন, ডিস্কো ডান্সারের বচাখুচা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানো যায়। ওমনি মিঠুন চক্রবর্তী মাঠে, হিসসস হিসসস, গোখরো সাপ, এক ছোবলেই… ইত্যাদি। একটা ভাষণ বার করে দেখান যেখানে সৌজন্য বোধের কথা আছে, উলটে জনসভায় দাঁড়িয়ে আগুন লাগানোর উসকানি দিচ্ছিলেন, আগুন লেগেওছিল, বিজেপির ক্যাডার মরেছে, তৃণমূলেরও ক্যাডার মরেছে। আজ তেনার মুখে সৌজন্যের কথা, বলছেন মিডিয়াতে ওপরে সব্বাই নাকি এক, সব্বার সাথে নাকি দারুণ সখ্য। তো একবার যান না কালীঘাটে, সখ্য দেখাতে। ইদানিং সেই সখ্যের কথা আরেক অভিনেতা দেবের মুখে। মিঠুন দা আর উনি বাবা ছেলের মতো থাকেন, ওনার দুঃখ কেন বিজেপি আর তৃণমূল ক্যাডারেরা মারপিট করছে? এ আরেক মহান হবার নৌটঙ্কি। যখন আমাদের চ্যানেল আক্রান্ত, ইডি এসে চ্যানেলের দখল নিয়েছে, আমার বাড়িতে ৪৮ ঘণ্টা তল্লাশি চলছে, কলকাতা টিভি সম্পাদকের বাড়িতে ফ্লাটে অন্যায় ভাবে ইডি ভিজিলেন্স বসে রয়েছে, আরও অন্যায় ভাবে চ্যানেলে সে খবর করতে দিচ্ছে না, তখন কোথায় ছিলেন এই অভিনেতা? সমর্থন চাওয়ার ফোন ধরার সৌজন্যতা দেখিয়েছিলেন? নিন্দা করেছিলেন এই রাষ্ট্রীয় ডালকুত্তাদের অভিযানের? করেননি। কেবল গত ৫ বছরে ৭৮ জনের বেশি তৃণমূল কর্মী নেতা খুন হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের পাশে গিয়ে বলুন আপনি আর ওই গোখরো সাপ, বাবা ছেলের মতো থাকেন, বলে দেখুন। আপনি এমপি, এবং মিঠুন চক্রবর্তী বাংলা বিজেপির বড় নেতা, আগে পিছে পাইলট ভ্যান নিয়েই ঘোরেন, শুটিংয়ের সময়েও, শুটিং লোকেশন দেখতে গেলেও, আপনি সেই সিকিউরিটি পান কারণ তৃণমূল ক্ষমতায় আছে, মিঠুন সেই সিকিউরিটি পান কারণ তিনি বাংলা বিজেপির নেতা আর বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে বলে। আর তৃণমূল ক্ষমতায় আছে কারণ তাদের সমর্থক কর্মীরা প্রতিটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়ছে, মাটির বাস্তব সেটাই, বিজেপির কর্মীদের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। যে ছেলেটি তৃণমূলের জন্যই অটো রিক্সার পারমিট পেয়েছে, সে ভালো করে জানে তৃণমূল সরকারে না থাকলে তার পারমিট বাতিল হবে, এটা তার পেটের লড়াই, সেখানে আপনার মতো রুনুঝুনু সৌজন্যর কোনও জায়গা তার নেই। আর জনসভায় দাঁড়িয়ে মিঠুন চক্রবর্তী যখন নিজেকে গোখরো সাপ হিসেবে সামনে আনেন, এক ছোবলে শুইয়ে দেবার কথা বলেন, তখন মাঠ ভর্তি মানুষ, যুবক, কিশোরের কাছে কোনও সৌজন্যর বার্তা যায় না। কাজেই নিজেদের ফিল্ম প্রোমোট করার জন্য এই মহান অবার নৌটঙ্কি বন্ধ করুন। একে অন্যের পিঠ চাপড়ে ভবিষ্যতের দিশা সামাল দেবার ব্যবস্থা? ইডি ইনকাম ট্যাক্স কিম্বা বাংলার পুলিশ সামলানোর ব্যবস্থা? জাতীয় পুরস্কারে অনায়াস জায়গা পাবার আগাম ব্যবস্থা? করছেন করুন মাননীয় অভিনেতারা, সৌজন্যের কথা বলবেন না, আর সেসব সৌজন্যের কথা বলে মহান হবার চেষ্টাও করবেন না। যাদের ইতিহাস দেশদ্রোহিতার, যাদের ইতিহাস গান্ধী হত্যার, যাদের ইতিহাস গুজরাত দাঙ্গার, যাদের বর্তমান ইডি, ইনকাম ট্যাক্স, ভিজিলেন্স দিয়ে সমস্ত বিরোধিতাকে ভেঙে চুরমার করা, সমস্ত বিরোধীদের মাথা নুইয়ে দেওয়া, সেখানে কোন সৌজন্যের রাজনীতি হবে? কজেই মাননীয় অভিনেতারা অভিনয় করুন, রাজনীতিকে যতটা সম্ভব কাজে লাগিয়ে আর যা যা করার সবই করন, কেবল সৌজন্যের নৌটঙ্কি করবেন না, আড়াআড়ি বিভাজিত, হিংসা আর বিভেদের চক্রান্তে দেশ আর সমাজ ভাঙা কোনও দলের সঙ্গে সৌজন্যবোধ কথাটা মানায় না। এবং হ্যাঁ, এক খ্যাপা বলে গেছে সেই কবে, সাধ আর আহ্লাদ না ছেড়ে মহান হওয়া যায় না, মাথায় রাখুন।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯
২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

সিউড়িতে অস্ত্র হাতে রামনবমীর শোভাযাত্রা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ক্ষমতায় আসার আড়াই মাসেই মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় জনতা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীর দিন অশান্ত দিনহাটা! ফের তৃণমূল-বিজেপি তরজা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা মমতার
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীতে পাম্বান সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রবিবাসরীয় সকালে কলকাতায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা উপেক্ষা করে রামনবমী উপলক্ষে সাজো সাজো রব যাদবপুরে
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে কড়া নজরদারি পুলিশের, আইন ভাঙলেই কড়া পদক্ষেপ!
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীকে ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে, অযোধ্যায় ভক্তদের ভিড়
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ওয়াটার পার্কে দুর্ঘটনা! রোলার কোস্টার থেকে পড়ে মৃত্যু তরুণীর
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
পিচভেজা বৃষ্টিতে ভিজতে চলেছে রাজ্য, কোন কোন জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস?
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ডোমজুড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড!
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীতেও খোলা নবান্ন, থাকবেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
2020 Delhi Riots : বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে ফের তদন্তের নির্দেশ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team