Placeholder canvas
কলকাতা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock
স্বাধীনতা আন্দোলনের বীরাঙ্গনারা, যাঁদের কাহিনি আজও বিস্মিত করে
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  প্রিয়া দত্ত
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩, ০৩:৪৩:২৪ পিএম
  • / ৮৯ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • প্রিয়া দত্ত

কলকাতা: ১৫অগাস্ট ১৯৪৭। স্বাধীনতা দিবস (Independence Day )। ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে (Country) স্বাধীন করার গর্বের দিন। সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। যাঁদের জন্য ইংরেজদের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল আমাদের দেশ ভারতবর্ষ (India)। আর ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা আলোচনা করলে প্রথমেই মাথায় আসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস, মহাত্মা গান্ধী, লালা লাজপত রাই, বাল গঙ্গাধর তিলক, ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ সহ একাধিক মহান ব্যাক্তিত্বের নাম। তবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। তাঁরাও দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। যেমন ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই, ম্যাডাম ভিকাজি কামা, সরোজিনী নাইডু, দুর্গা ভাবীর নামই আমরা শুনি। কিন্তু এনারা ছাড়াও এমন অনেক মহান নারী আছেন যাঁরা তাঁদের অসামান্য বীরত্বের কারনে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। এমন কয়েকজন নারীর কথা আজ তুলে ধরব, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শত অত্যাচারের পরও ইংরেজদের কাছে হার মানেননি।

১) কিট্টুরের রানী চিন্নাম্মা-  কর্নাটকের কিট্টুরের রানী চিন্নাম্মা ছিলেন প্রথম কোনও ভারতীয় নারী যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন। ১৭৭৮ সালে কর্নাটকের একটি গ্রামে তাঁর জন্ম। ছোট বেলা থেকেই যুদ্ধ কলা শিখতেন তিনি। তাঁর বিয়ে হয় কিট্টুরের রাজা মাল্লাসারজা দেশাইয়ের সঙ্গে। কিন্তু ১৮২৪ সালে তাঁর একমাত্র পুত্রের মৃত্যুর পর ব্রিটিশরা তাঁর রাজ্য দখল করবার চেষ্টা করাতে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়। আসলে সেসময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি আইন তৈরি করেছিল কোনও ভারতীয় রাজ্যের উত্তরাধিকারি না থাকলে সেই রাজ্য ব্রিটিশদের অধীনে চলে আসবে। কিট্টুর ব্রিটিশদের এই আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। ১৮২৪ সালের অক্টোবরে রানী চিন্নাম্মা তাঁর সেনা নিয়ে ব্রিটিশদের আক্রমন করে। তাতে বেশ কিছু ব্রিটিশের মৃত্যু হয়। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আরও বড় সেনা পাঠায় কিন্তু সেই যুদ্ধেও প্রথমদিকে জয়ী হচ্ছিল রানি চিন্নাম্মা তবে ব্রিটিশরা ছলনা করে রানি চিন্নাম্মার সেনার কাছে থাকা কামানে গোলার বদলে কাদা ভরে দেয়। ফলে যুদ্ধে পরাজিত হয় রানি চিন্নাম্মা এবং তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য জেলে বন্দী করা হয়, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর এই অসাধারন বীরত্ব ভারতীয় নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে উজ্জিবিত করেছিল।

২) মাতঙ্গিনী হাজরা-  দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বড় ভূমিকা ছিল মাতঙ্গিনী হাজরার। ১৯০৫ সাল থেকেই ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে বিশ্বাসী মাতঙ্গিনী হাজরা অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেবার কারনে ১৯৩০ সালে লবন আইন ভঙ্গের কারনে তিনি গ্রেফতার হন। কিছুদিন পর জেল থেকে ছাড়া পাবার পর আবারও তিনি ব্রিটিশ বিরোধীতা করতে শুরু করেন যার কারনে আবারও তার জেল হয়। বলরামপুর জেলে ছয় মাসের জন্য বন্দী করে রাখা হয় তাঁকে। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং শ্রীরামপুরে কংগ্রেসের সভায় যোগ দেন। ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও যোগদান করেন তিনি। ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান গান্ধী বুড়ি। মৃত্যুর সময়েও তাঁর মুখে বন্দেমাতরম স্লোগান ছিল।

৩) কনকলতা বড়ুয়া- অসমের মেয়ে কনকলতা বড়ুয়া বীরবালা নামেও পরিচিত ছিলেন যিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। অসমের বারঙ্গবারি এলকার মহিলাদের সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তিনি। এই প্রতিবাদের লক্ষ্য ছিল, গোহপুর পুলিশ স্টেশনে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়। মাত্র আঠারো বছর বয়সেই স্বাধীনতা আন্দোলনে বীরগতি প্রাপ্ত হন তিনি। এত ছোট বয়সে দেশের জন্য আত্মত্যাগের কারনে ভারতীয় ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

৫) লক্ষ্মী সেহগাল- লক্ষ্মী সেহগাল ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অফিসার। তিনি ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নামেও পরিচিত ছিলেন। লক্ষ্মী ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনানী। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর যোগদান শুরু হয় সিঙ্গাপুর থেকে। সেখানে তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা লিগে কাজ করেন। সেখানে তিনি ভারতীয় শ্রমিকদের চিকিৎসা করতেন। এখানেই তিনি জানতে পারেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের কথা। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের একটি মহিলা রেজিমেন্ট তৈরি করতে চাইছিলেন। এই খবর শুনেই লক্ষ্মী শেহগাল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের সঙ্গে দেখা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের মহিলা রেজিমেন্টের প্রধান হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপরই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস ঝাঁসির রানি রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন করেন তাঁকে। ঝাঁসির রানি রেজিমেন্ট ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে জাপানি সেনার সাথে যৌথভাবে মায়ানমারে ব্রিটিশ সেনার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। ক্যাপ্টেন লক্ষী সেহগালের লক্ষ্য ছিল, উত্তর পূর্ব ভারত হয়ে ভারতে প্রবেশ করা কিন্তু তার আগে ইম্ফলে বিশাল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর রেজিমেন্ট পিছু হটে। ১৯৪৫ সালে ক্যাপ্টেন লক্ষীকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ সেনা এবং মায়ানমারের জেলে বন্দী করে দেয়।১৯৪৬ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি ভারতে এসে পুনরায় স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। 

৬) তারা রানি শ্রীবাস্তব- বিহারের মেয়ে তারা রানি শ্রীবাস্তব তাঁর স্বামী ফুলেন্দু বাবুর সঙ্গে ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, বিহারের শিবান পুলিশ স্টেশনে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা। তারারানি তার সমর্থনে অনেক নারীকে যুক্ত করেছিলেন। তারারানির নেতৃত্বে একটি বিশাল সংখ্যায় মামুষ শিবান পুলিশ স্টেশনের দিকে যেতে শুরু করে। ব্রিটিশ পুলিশ এই ভীড়ের উপর গুলি চালায় যাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফুলেন্দু বাবু। কিন্তু তার পরেও ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিজেকে সমর্পন করে দিয়েছিলেন তারা রানি শ্রীবাস্তব।

আর পড়ুন:ওরা কিছু করে না, অন্যকেও করতে দেয় না, কংগ্রেসসহ বিরোধীদের তুলোধনা মোদির

৭) পামেই গাইডেনলিউ- উত্তর পূর্ব ভারতের নাগা জাতির মেয়ে পামেই গাইডেনলিউ মনিপুরের বাসিন্দা ছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়স থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও নাগা জাতির রক্ষায় যুক্ত হন। তিনি প্রথমে হেরেকা আন্দোলনে যুক্ত হন। ব্রিটিশরা সেসময় নাগা জাতির লোকেদের জোর করে খ্রীষ্টান ধর্মে পরিবর্তিত করছিলো যার কারনে নাগা সম্প্রদায়ের মানুষরা বিদ্রোহ শুরু করে। রীতিমতো গোরিলা যুদ্ধ শুরু হয়। নাগা সম্প্রদায়ের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ব্রিটিশদের বিতাড়িত করা। ১৯৩২ সালে পামেই গাইডেনলিউকে ব্রিটিশরা গ্রেফতার করে এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩৭ সালে জেলে তার সাথে দেখা করেন জওহরলাল নেহেরু, তিনি পামেই গাইডেনলিউকে রানী উপাধ্যক্ষ দেন এবং জানান তিনি তাকে অবশ্যই মুক্ত করবেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার পর পামেই গাইডেনলিউ মুক্তি পান এবং বাকী জীবন নাগা জনজাতির উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

৮) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-  ১৯১১ সালের ৫ মে, বাংলাদেশের চিটাগং এ জন্ম হয় ভারত মায়ের এই বীর কন্যার। তিনি প্রথমে দিপালী সংঘ নামে একটি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, এই সংগঠন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নারীদের বিভিন্ন যুদ্ধ প্রশিক্ষন দিত। মাস্টারদা সূর্যসেনের ভাবধারায় অনুপ্রানিত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কোঠর মিলিটারি প্রশিক্ষন করেন। পাহাড়তালি ইউরোপীয়ান ক্লাবে আক্রমনের মিশন দেওয়া হয় তাঁকে। তার সাথে আরও সাত থেকে দশ জন ছিল এই মিশনে। এই ক্লাবকে আক্রমনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল কারন এখানে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের প্রত্যহ অপমান করতো। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হত। এই ক্লাবের বাইরে ব্রিটিশরা লিখে রেখেছিল কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। পুরুষের ছদ্মবেশে এই ক্লাবে প্রবেশ করে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও তার সাথীরা ক্লাব দখল করে নেয়। পরে ব্রিটিশদের সাথে সংঘর্ষে ক্লাব দখলকে কেন্দ্র করে, যাতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অনেক সাথী মারা যায়। ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতারি এড়াতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সায়ানাইড ক্যাপসুল খেয়ে নেন এবং সেখানেই বীরগতি প্রাপ্ত হন।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২ ২৩ ২৪২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team