মুহূর্ত-১
বিকেলের বৃষ্টিস্নাত কলকাতা। ঘড়ির কাটায় ৫টা বেজে ২৫ মিনিট। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রত। মঞ্চের বাঁ-দিক থেকে চলছে অবিরাম কোরাস- ‘কার্লেস’! ‘কার্লেস’! ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ মূলমঞ্চ। সব লাইমলাইট যেন একাই কেড়ে নিচ্ছেন নতুন লাল-হলুদ কোচ। লাল-হলুদ সমর্থকদের পালস বোঝার জন্য কুয়াদ্রতের আজকের এই মুহূর্তটাই যথেষ্ট। মঞ্চে যখন উঠলেন তখন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বলে গেলেন- ‘আশা রাখছি ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের এই মরশুমটাই সেরা মরশুম হবে। এখানে আসতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’ তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনবার ‘স্পিরিট’ শব্দটি উচ্চারণ করেন।
মুহূর্ত-২
জীবনকৃতি সম্মানে সম্মানিত হওয়া তরুণ বোসকে নিয়ে মঞ্চে উঠছেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। তরুণ বোসের পাশে বসে বলে গেলেন- ‘উনি পাশে না থাকলে আমার গোলকিপার হয়ে ওঠা হত না। আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে পাশে ছিলেন তরুণ দা। নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরকম নজির ভারতবর্ষ কি পৃথিবীতেও নেই।’ যখন বলছিলেন, তখন দু’জনের চোখই ভিঁজে আসছিল। ৭০-দশকের কোনও বিকেলকে যেন ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে আসল এই আবেগঘন মুহূর্ত। যেখানে ‘জুনিয়র’ স্বীকৃতি দিচ্ছেন ‘সিনিয়র’-কে। যে সংস্কৃতি ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে।
মুহূর্ত-৩
‘আত্মজন স্মৃতি’ সম্মান নিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার মোনেম মুন্নার স্ত্রী এবং পুত্র। মোনেম মুন্না প্রয়াত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। স্ক্রিনে যখন মোনেম মুন্নার এভি দেখানো হচ্ছে- শেষ দৃশ্যে তাঁর সন্তানের সঙ্গে মোনেম মুন্না। সেই সন্তান আজ ইস্টবেঙ্গলের মঞ্চে। পাশে রয়েছেন তাঁর মা ইয়াসমিন মোনেম। এ বাংলায় তাঁর বাবার কীর্তি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেখার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন জুনিয়র মোনেম। ওপর থেকে নিশ্চয়ই সবই দেখছেন স্বর্গীয় মোনেম মুন্না।
মুহূর্ত-৪
স্বপন বল মেমোরিয়াল ‘সমর্থক’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় প্রদীপ দাস এবং সাগ্নিক ব্যানার্জিকে। এই দু’জনের মধ্যে একজন অন্ধ এবং অপরজন ক্যান্সারে আক্রান্ত। জীবনদায়ী প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও ক্লাবের প্রতি এই দুই সমর্থকের ডেডিকেশনে কোনও কার্পণ্য নেই। প্রিয় ক্লাবের জন্য গলা ফাটাতে যেকোনও পরিস্থিতেই প্রস্তুত তাঁরা। প্রার্থনা শুধু, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে তাঁদের জীবনেও জ্বলে উঠুক ‘মশাল’- এই ‘মশাল’ জীবনের জয়গানের উচ্ছ্বাস প্রকাশের প্রতীকীমাত্র।
তবে শেষে একটাই কথা বলার, আজকের প্রত্যেকের মধ্যমণি যেন হয়ে উঠলেন নয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রত। কোচের কাছে মঞ্চেই আবদার করে বসলেন কলকাতার মেয়র তথা আদ্যান্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ফিরহাদ হাকিম- ‘আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, অনেক অপেক্ষা করেছি- এবার একটা ট্রফি দিন। আপনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’ (নিশ্চিতভাবেই বলা যায় করতালির আওয়াজ ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র থেকে সবুজ-মেরুন তাঁবুতে পৌঁছে গিয়েছে।)