নয়াদিল্লি/বেজিং: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের (World’s Most Populated Country) তকমা ভারত (India) সম্ভবত ২০২৩ সালেই ছিনিয়ে নিতে চলেছে চীনের (China) থেকে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ (United Nations) গত বছর নভেম্বরেই একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল এই কথা। একদিকে চীনের জনসংখ্যা (China’s Population) হুহু করে নামছে, আরেকদিকে ভারতের জনসংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ২০২৩ সালেই ভারত ও চীনের জনসংখ্যা প্রায় সমান সমান হতে চলেছে এবং বছরের শেষের দিকে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে ছাপিয়ে যেতে পারে ভারত। যতদিন যাবে ভারত ও চীনের জনসংখ্যার মধ্যে ব্যবধান কমতে থাকবে এবং এই ট্রেন্ড (Trend) ২০৫০ সাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২০৫০ সালে গিয়ে ভারতের জনংসখ্যার পরিমাণ হবে ১.৬৬৮ বিলিয়ন (১৬০ কোটিরও বেশি), আর চীনের জনসংখ্যার অনুমেয় পরিমাণ দাঁড়াবে সেই সময় ১.৩১৭ বিলিয়ন (১৩০ কোটির বেশি)। ২০২২ সালের শেষে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন) ছাড়িয়েছে, ২০৫০ সালে গিয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা (World’s Population) দাঁড়াবে ৯৭০ কোটিতে (৯.৭ বিলিয়ন)।
আরও পড়ুন: China Population Shrinks: ৬০ বছর পর কমল চীনের জনসংখ্যা, সুখবর নয় বরং প্রবল চাপে অর্থনীতি
কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসই (Experts’ Prediction) বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি, ২০২৩) চীনের বর্তমান জনসংখ্যা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে চীনা সরকার (Chinese Government)। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে চীনের জনসংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিগত ছয় দশকে এই প্রথম এরকম ঘটনা সেদেশে। অতএব, পূর্বাভাস কিংবা আশঙ্কা যাইহোক না কেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের শিরোপা শীঘ্রই খোয়াতে চলেছে চীন। চীনা সরকার সেদেশের জনসংখ্যার এই নিম্নগতিকে জনসংখ্যাগত সঙ্কট (Demographic Crisis) হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু কেন এই নিম্নগতি? এর মূল কারণ হল, চীনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ যত কর্মমুখী হয়ে উঠছে, ততই কমছে সেদেশের শিশু জন্ম নেওয়ার হার (Child Birth Rate)। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে, আগামিদিনে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economical Growth) বাধাপ্রাপ্ত হতে চলেছে, যার জেরে চীনের জনগণ (Chinese Citizen) এবং সরকারি কোষাগারের (Public Coffers) উপর চাপ বাড়বে। এই নিয়ে সর্তকবার্তা (Warning) জারি করা হয়েছে।
গত বছর চীনের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে (International Media) একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল। সেখানে আশঙ্কার কথা শোনানো হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, দেশ যত আধুনিক হচ্ছে, চীনের তরুণ প্রজন্ম (Chinese Young Generations) তত বেশি কর্মমুখী হয়ে পড়েছে ও আয় বাড়ছে তাঁদের। এখানেই বিপত্তি, কারণ আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বনির্ভর হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, ফলে তাঁদের মধ্যে বিবাহ নিয়ে অনিচ্ছা (No Interest in Marriage) বাড়ছে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্য। যার জেরে দেশে শিশু জন্মানোর হারে পতন দেখা দিয়েছে। বলা হয়েছে, এই ট্রেন্ড চলতে থাকলে, শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, চীনের সেনাবাহিনীও (China’s Armed Force) প্রভাবিত হবে এর ফলে। এই মুহূর্তে চীনের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে বড় সশস্ত্রবাহিনী হিসেবে পরিচিত। দেশে জনসংখ্যা কমলে, স্বাভাবিকভাবেই চীনের সেনাবাহিনীতেও প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন: Shahrukh Khan Pathan ‘Chalenge’: ‘চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ করে শাহরুখ তাঁর মেয়ের সঙ্গে বসে ‘পাঠান’ দেখলেন
কবে চীনকে পিছনে ফেলতে চলেছে ভারত?
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের শেষে চীনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪১,১৭,৫০,০০০ (১৪১ কোটি ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার)। বেজিংয়ের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স (National Bureau of Statistics – NBS)-এর রিপোর্ট, তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় এই পরিসংখ্যান ৮,৫০,০০০ কম। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর চীনে ৯.৫৬ মিলিয়ন (৯৫ লক্ষ ৬০ হাজার) শিশু জন্মেছে, অন্যদিকে মৃত্যুর পরিসংখ্যান ১০.৪১ মিলিয়ন (১ কোটি ১৪ লক্ষ ১০ হাজার)। শেষবার চীনের জনসংখ্যা এইভাবে হ্রাস পেয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে। সেই সময় চীনে দুর্ভিক্ষ (Famine) দেখা দিয়েছিল। মাও জেদং (Mao Zedong)’-এর কৃষি নীতিকেই এইজন্য দায়ী করা হয়, যাকে সেদেশের আধুনিক ইতিহাসে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড (Great Leap Forward) নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
ভারতে শেষবার আদমশুমারি (Census) হয়েছিল ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে। নিয়মমাফিক দশ বছর অন্তর ভারতে জনগণনা হয়ে থাকে। কিন্তু কোভিড প্যানডেমিকের (Covid Pandemic) জেরে ২০২১ সাল থেকে তা এখনও স্থগিত (Postponed) হয়ে আছে। বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান (Private and International Statistics) বলছে, ভারতের জনসংখ্যা ২০২২ সালের শেষে এসে ১.৪১৭ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে চীনকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আগামী জুন মাসের মধ্যেই চীনকে জনসংখ্যাকে ছাপিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠবে ভারত।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২১০০ সালে গিয়ে বিশ্বের মোট আনুমানিক জনসংখ্যার পরিমাণ দাঁড়াবে ১১.২ বিলিয়ন। বলা হচ্ছে, ভারতের জনসংখ্যা সেই সময় হবে ১.৫৩ বিলিয়ন (১৫৩ কোটি), অন্যদিকে চীনের জনসংখ্যা সেই সময় ক্রমশ কমতে কমতে হবে ৫৮৭ মিলিয়ন (৫৮ কোটি ৭০ লক্ষ)।