মণিপুর: স্বাধীনতা দিবসের আগে ব্যাপক নিরাপত্তার তোড়জোড় মণিপুরে। রবিবার থেকেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হল মণিপুর জুড়ে। আগামী ১৫ অগাস্ট কিছু নিষিদ্ধ সংগঠন বনধের ডাক দিয়েছে। সে কারণে কোনও নাশকতা বা নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যজুড়ে পুলিশ ব্যাপক খানাতল্লাশি চালাচ্ছে। এবং সন্দেহভাজনদের আটক করছে। ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট, পিপলস লিবারেশন আর্মি এবং প্রেপাক সংগঠনগুলি সম্মিলিতভাবে স্বাধীনতা দিবসে ১৪ অগাস্ট রাত ১টা থেকে ১৫ অগাস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বনধের ডাক দিয়েছে। এছাড়াও আরও দুটি সংগঠন পৃথকভাবে বনধ ডেকেছে ওইদিন।
রাজধানীর লালকেল্লার অনুষ্ঠানের সময়ও মণিপুর ইস্যুতে বিক্ষোভের আঁচ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। কুকি বা মেইতিরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ফেস্টুন, ফ্ল্যাগ, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে পারে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। বনধ ডাকার কারণে বম্ব স্কোয়াডের লোকজন মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও স্থানগুলিতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী নাকা চেকিং করছে।
আরও পড়ুন: ১৫ অগাস্ট মোদির পাশে দুই মহিলা মেজর, প্রথমবার দেশীয় কামানে ২১ তোপধ্বনি
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তোইবা কিংবা জয়েশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিরা দেশে বড়সড় হামলা চালাতে পারে। এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। জম্মু-কাশ্মীর, নয়াদিল্লি সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বিশেষ সতর্কতা হিসেবে নিরাপত্তার কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানে নির্বাচন হওয়ার কথা। পাক ভোটে বরাবরই ভারত বিরোধিতার একটা ছবি চোখে পড়ে। তাই পাক গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই কট্টর জঙ্গিদের কাজে লাগিয়ে ভারতে হামলা চালানোর কৌশল নিয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি) সব রাজ্যের প্রশাসনকে জয়েশ ও লস্কর হামলার সতর্কতা বার্তা পাঠিয়েছে। শুধু পাক জঙ্গিরা নয়, অন্যান্য কট্টরপন্থী সংগঠনও হামলার ছক কষছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ১০ পাতার ওই রিপোর্টে আইবি বলেছে, জয়েশ, লস্কর এবং অন্য কট্টরপন্থী সংগঠন থেকে হামলা চালানোর আশঙ্কা রয়েছে। আর তার উপর ভিত্তি করেই গোটা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রিপোর্টে ১৫ অগাস্টের দিন লালকেল্লার কাছাকাছি আসার ব্যাপারে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে আইবি। অমরাবতী, উদয়পুর এবং জাপানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে আইবি রিপোর্টে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পাক চর সংস্থা জঙ্গিদের অর্থ-অস্ত্র দিয়ে মদত করছে। দেশের বড় বড় নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার ছক রয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আগে সমস্ত কট্টরপন্থী সংগঠনের উপর কড়া নজর রাখার সুপারিশ করেছে আইবি। সম্প্রতি আফগান যোদ্ধাদের নিয়োগ করে লস্কর-ই-খালসা নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়েছে আইএসআই।
জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলার ছক ছেড়ে ড্রোন হামলাও চালাতে পারে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আশপাশে প্যারা গ্লাইডার নামাতে পারে বলেও সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে। সে কারণে বিএসএফকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র-বিস্ফোরক পৌঁছে দিতে পাক চর সংস্থা ড্রোন ব্যবহার করতে পারে বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছেন। সম্প্রতি পঞ্জাবে গ্রেফতার করা কয়েকজন জঙ্গিকে জেরা করে এই তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। দিল্লি পুলিশ দু-তিন আগেই ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ২২৫২ তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় হাজারখানেক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা বসানো হয়েছে।