কলকাতা: নির্বাচন বাতিলের ঘোষণার দাবিতে দায়ের জনস্বার্থ মামলা খারিজ। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা খারিজ। এদিন মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া পর্যাপ্ত নয়। আজকেও কমিশনের কেউ আদালতে নেই, তারা কেন সক্রিয় নয়? শুভেন্দু অধিকারীর তরফে পুনরায় নির্বাচনের জন্য কমিশনের কাছে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা জানানো প্রয়োজন ছিল। আদালত এদিন জানায়, খুব দুঃখের যে, ফল ঘোষণার পরে রাজ্য অশান্তি আটকাতে পারছে না, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। যদি রাজ্য তার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে সেটা উদ্বেগের। সব অভিযোগ নিয়ে রাজ্য, কেন্দ্র ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হলফনামা তলব।
আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, আদালত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখছে। তাই এটা বলাই বাহুল্য যে এখনও পর্যন্ত যা যা হয়েছে, সেগুলি এই সব মামলার উপর নির্ভরশীল. এটা সবাইকে এবং জয়ী প্রার্থীদের মনে রাখতে হবে। এই মামলার ভবিষ্যতের উপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করবে।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশ দেন, নির্বাচন সংক্রান্ত সব নথি সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যালট, সিসিটিভি ফুটেজ সহ সব তথ্য সংরক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। যে স্কুলগুলো ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, সেগুলিকে অবিলম্বে নিজের খরচে মেরামত করার ব্যবস্থা করবে রাজ্য। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ জুলাই।
আরও পড়ুন: Rajya Sabha Nomination | রাজ্যসভার জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা আজ
এদিন পঞ্চায়েত ভোটের অশান্তির ভিডিও ফুটেজ আদালতে পেশ করেন শুভেন্দু অধিকারী। আদালতে বসেই কম্পিউটারে তা দেখলেন প্রধান বিচারপতি। শুভেন্দু অধিকারীর কৌঁসুলি বলেন, ৭ জুলাই রাতেও দুষ্কৃতীরা ভোট দিয়েছে। পোলিং অফিসার আক্রান্ত হয়েছেন, কাঁদছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে যে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশনের হলফনামা চাওয়া হোক যে কেন এই পরিস্থিতি হল? বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হোক। ৫০ হাজার বুথে আবারও ভোট নেওয়া হোক। ধূলাগড় থেকে অভিযোগ এসেছে যে, পুলিশ নিজে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। কিন্তু বুথের ভিতরে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক প্রিয়া পাল ভেতরে ছিলেন। শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীর আরও দাবি, ব্যালট পেপার, সিসিটিভি ফুটেজ আর ভিডিও ফুটেজ স্ক্রুটিনি করা হোক, ফরেনসিক পরীক্ষা করা হোক।
এ বিষয়ে কমিশনকে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির, আপনারা নিশ্চয়ই কিছু একটা মূল্যায়ন করেই ৬৯৮টি বুথে পুনরায় ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত, কমিশনকে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। আমরা একাধিক নির্দেশ দিয়েছি। তার কোনও প্রভাব আছে? কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী বলেন, কীভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে সেটা রিপোর্টে আছে। এখনও পর্যন্ত কোনও স্পর্শকাতর বুথের তালিকা দেওয়া হয়নি। কোনও বিস্তারিত তথ্যই দেওয়া হয়নি। একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা লেহ থেকে বাহিনী নিয়ে এসেছি। কিন্তু তাদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পর্যন্ত পাঠাতেও চরম অসহযোগিতার সম্মুখীন আমরা হয়েছি।
প্রধান বিচারপতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে বলেন, আমাদের নির্দেশ অপছন্দ হলে আপনারা চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। কিন্তু নির্দেশ যাতে কার্যকর না করা যায় এই পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক নয়। এত ক্ষয়ক্ষতি! পুলিশকর্মী পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে। কমিশনের আরো সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। এই সব মামলার শুনানির সময় কমিশনের দু-তিনজন আধিকারিকের উপস্থিত থাকা উচিত। এতে কমিশন সম্পর্কে অন্য ভাবমূর্তি তৈরি হয়।