নয়াদিল্লি: রাহুল গান্ধীর সাজার উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশে কি ফের সাংসদ পদ ফিরে পেতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা? সুরাতের নিম্ন আদালতের রায়ে বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারেননি রাহুল। বাদল অধিবেশনেরও বেশিরভাগ সময়টাই তিনি বাইরে রয়েছেন। ফলে এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আবার লোকসভার আসনে বসতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা। এই স্থগিতাদেশের ফলে রাহুলের দোষী সাব্যস্তের রায় আপাতত হিমঘরে চলে গেল। পক্ষান্তরে ওই রায়ের কোনও অস্তিত্ব আপাতত রইল না। সমান্তরালভাবে বলা যায়, তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্তটিরও আর যৌক্তিকতা কিংবা বৈধতা থাকছে না। স্বভাবতই এদিন বেজায় খুশি কংগ্রেস নেতৃত্ব মায় বিরোধী ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলি। এককথায় রাহুলের স্বস্তিতে একবেলায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ‘ইন্ডিয়া’।
প্রসঙ্গত, সুরাতের বিচারাধীন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এখন একটি মামলা দায়রা আদালতে চলছে। রাহুলকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তটি তাই ওই আদালতে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ঠান্ডাঘরেই তোলা থাকল। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এ ধরনেরই একটি মামলায় লোকসভা সদস্যপদ খারিজের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। তাতে বলা হয়েছিল, নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়ার দিন থেকে সদস্যপদ খারিজের নির্দেশ কার্যকর থাকে না।
আরও পড়ুন: কোটায় মেধাবী ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু
ঘটনা হচ্ছে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা কিংবা সচিবালয় থেকে এখনও রাহুলের সদস্যপদ ফিরিয়ে না দেওয়া হলেও স্থগিতাদেশের ফলে সদস্যপদ খারিজের কোনও ভিত্তি আর রইল না। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এদিন বলেছে, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় শুধুমাত্র রাহুলের রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে তাই নয়, তাঁকে যাঁরা নির্বাচিত করেছিলেন তাঁদের অধিকারেও প্রভাব পড়েছে। সুতরাং, লোকসভার সচিবালয়ের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্যপদ খারিজের সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়া হলেই রাহুল গান্ধী সোমবার ঢুকতে পারবেন সংসদে। তাঁর বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও চালু হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, মোদি পদবি অবমাননা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে শুক্রবার বড় স্বস্তি পান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ‘সত্যমেব জয়তে’— রাহুল গান্ধীর সুপ্রিম-স্বস্তি মেলায় প্রথম প্রতিক্রিয়া কংগ্রেসের। বিচারপতি আরএস গাভাই, পিএস নরসিমা এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এদিন রাহুলের দু’বছরের জেলের সাজার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে এ সংক্রান্ত সুরাত আদালতের রায় আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। সেই সঙ্গে কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ পদ থেকে যে রাহুলকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তাও ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হল।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের এই স্থগিতাদেশকে স্বাগত জানিয়ে কংগ্রেস বলেছে, ঘৃণার প্রতিবাদে ভালোবাসার জয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে এক নির্বাচনী জনসভায় রাহুল গান্ধী মোদি পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তা নিয়ে সুরাতের নিম্ন আদালতে মানহানির মামলা করেন বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি। সুরাতের নিম্ন আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে ২ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয়। সেই রায়ের স্থগিতাদেশ জারি করতে গিয়ে আদালত প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিরও সমালোচনা করেছে। বেঞ্চ বলেছে, কোনও সন্দেহ নেই যে, এই ভঙ্গিমায় কথা বলা সুরুচির পরিচয় বহন করে না। জনতার হয়ে কাজ করা কোনও ব্যক্তির ভাষণ দেওয়ার সময় সতর্ক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
বেঞ্চ আরও বলেছে, এই মামলায় বিচারক কেন সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান দিলেন, তার কোনও কারণ দর্শাননি। সুতরাং, এই আবেদনের চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত দোষী সাব্যস্তের রায় স্থগিত রাখাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, এটা একটা খুশির দিন। রাহুলের সাংসদ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আজই তিনি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে কথা বলবেন এবং লিখিত জানাবেন বলে বলেন অধীর।