ময়নাগুড়ি: ঐতিহ্যবাহী জল্পেশ মন্দিরে শ্রাবণী মেলায় শিবের মাথায় জল ঢালা নিয়ে ফের জটিলতা শুরু। আদালতের নির্দেশে এবছরেও বন্ধ থাকবে মন্দিরের গর্ভগৃহ। চ্যানেল মারফত ঢালতে হবে জল। গতবছরের মতো এ বছরেও শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করে শিবের মাথায় জল ঢালতে পারবেন না ভক্তরা। তার পরিবর্তে গত বছরের মতো তৈরি করা হবে চ্যানেল। যার মাধ্যমে জল গিয়ে পৌঁছবে গর্ভগৃহে। আর সেটা বড় পর্দার মাধ্যমে দেখতে পারবে ভক্তরা।
শুক্রবার সকালে ময়নাগুড়ির জল্পেশ মন্দিরে আসেন ময়নাগুড়ির ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শুভ্র নন্দী, ময়নাগুড়ি থানার আইসিসহ অন্য পুলিশ আধিকারিকরা। তাঁরা ঘটনাস্থলে এসে মন্দির কমিটির সম্পাদককে ডাকলেও তিনি আসেননি। পরবর্তীতে জল্পেশ মন্দির কমিটির অফিসঘরের দেওয়ালে কোর্টের নির্দেশিকাপত্রটি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Nadia | Tmc | ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় জখম দুই জয়ী তৃণমূল প্রার্থী
বিডিও বলেন, একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন আগের বছর যে নিয়ম ছিল, সেই নিয়ম বলবৎ থাকবে। ওই একই নিয়মে জল ঢালা হবে। এদিন কাজ শুরু করে দেওয়া হল চ্যানেল তৈরির জন্য। মন্দির চত্বরে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হবে। এদিকে ইতিমধ্যেই সেই চ্যানেল তৈরির কাজ শুরু করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। তবে আদালতের নির্দেশিকার ফলে আপাতত টিকিট বন্ধ থাকবে ভক্তদের জন্য। যেহেতু মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে বেশ কিছু স্বচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে, ফলে তাদের খরচ বহন করতে না পারায় আপাতত বসিয়ে রাখা হবে। ফলে নিরাপত্তার পুরো বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন দেখবে বলে জানিয়েছেন মন্দিরের সম্পাদক গীরিন দেব।
গতবছর হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের একটি মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি বিচারপতি এও বলেছিলেন, ভক্তদের থেকে যাতে চাঁদা বাবদ কোনও রশিদ না কাটা হয়। সেই নির্দেশও এবার একইভাবে বলবৎ থাকছে জল্পেশ মন্দিরে।
উল্লেখ্য, গতবছর জল্পেশ মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে গর্ভগৃহে ঢুকেছিলেন রাজকুমার দাস নামে এক পুণ্যার্থী। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে গর্ভগৃহে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে সেই নিয়ে হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে তিনি মামলা করেন। মামলা ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। সেই সময় বিচারপতি জল্পেশ মন্দির কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ভক্তরা গর্ভগৃহে প্রবেশ না করে। বিকল্প হিসেবে একটি চ্যানেলের ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন তিনি। একটি জায়ান্ট স্ক্রিনের বন্দোবস্ত করার কথাও বলেছিলেন বিচারপতি, যাতে ভক্তরা দেখতে পায় ওই জল শিবলিঙ্গে গিয়ে পড়ছে।
এই বছরও যাতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ একইভাবে বহাল থাকে, তার জন্য হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। ১৯ জুলাই করা ওই জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্ট ময়নাগুড়ির বিডিওকে জানিয়ে দিয়েছে, এবারও একই নির্দেশ বলবৎ রাখার জন্য। ২২ তারিখের মধ্যে গোটা ব্যবস্থা করে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই মতো ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনও। মন্দিরে দেওয়ালে নোটিস সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে।