কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: প্রায় দু’দশকের সম্পর্ক ছেদ করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের (ISS) সঙ্গত্যাগ করতে চলেছে রাশিয়া (Russia)। ২০২৪ সালে তারা এই গবেষণাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল। রাশিয়ার সহযোগিতায় এখান থেকে বেশ কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার, মহাকাশ গবেষণা সম্ভব হয়েছে। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রস্কোমসের নবনিযুক্ত প্রধান উরি বরিসভ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার এই ঘোষণা অবশ্য আশাতীত কিছু না-হলেও, বিশ্বের অনেকেই এতে আশ্চর্য হয়েছিলেন। কারণ, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ পৃথিবীর বুকে দীর্ঘদিন ধরে ঠান্ডাযুদ্ধ চালিয়ে গেলেও মহাকাশ গবেষণায় তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। কিন্তু, রাশিয়ার আচমকা এই ঘোষণায় এবার ব্রহ্মাণ্ড ছেড়ে মাটির বুকেও ক্ষমতা ও জমি দখলের লড়াই কোনদিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হানার পর থেকেই আমেরিকা ও ইউরোপের ভূমিকায় এমনিতেই অসন্তুষ্ট ছিল মস্কো। কারণ, বিভিন্ন আর্থিক অবরোধের কথা ঘোষণা করেছে তারা। ফলে, এই শতাব্দীর রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। যার ফলশ্রুতি হল এই সিদ্ধান্ত।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
রস্কোমসের নবনিযুক্ত প্রধান উরি বরিসভ আসলে চেয়ারে বসেই ক্রেমলিনের কর্তাদের খুশি করতে সক্রিয়তা দেখাতে এই সিদ্ধান্ত নেন। এই পদে বসার আগে তিনি দেশের অস্ত্র কারখানার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর পূর্বসূরি দিমিত্রি রোগোজিনও ইউক্রেন যুদ্ধের সমর্থক ছিলেন এবং পশ্চিমী দেশগুলির কড়া সমালোচক ছিলেন। তিনি তো একধাপ এগিয়ে আমেরিকাকে এও হুমকি দিয়েছিলেন যে, মার্কিন অবরোধ না-তুললে তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র উড়িয়ে দেবেন। এবার এই সিদ্ধান্তের পর মস্কোর দীর্ঘদিনের মনোবাসনা পূরণ হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন এবার মহাকাশে নিজস্ব গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করতে পারে তারা।
রাশিয়ার সিদ্ধান্তে চীনের সুবিধা হল?
ইতিমধ্যেই চীন রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত জেনে গিয়েছে। কারণ, বেজিংয়ের নেতারাও মহাকাশে নিজস্ব গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করছেন। তিয়ানগং নামে ওই কেন্দ্রটি এই বছরের শেষাশেষি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। রাশিয়ার এই সরে আসার ফলে চীনের জাতীয় মহাকাশ কর্তৃপক্ষ আর্থিক দিয়ে লাভবান হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে গবেষণার প্রস্তাব ও বিনিয়োগ তুলতে পারবে। কারণ এই দশকের শেষ নাগাদ আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রকে ধ্বংস করার পক্ষে যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম চীনও। আমেরিকাকে চাপে রাখতে মস্কো ও চীন অনেকদিন ধরেই ভাবছে, তারা যৌথভাবে একটি মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করবে চাঁদের মাটিতে।
বিশেষত রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে এই কেন্দ্রের শেষের শুরু হয়ে গেল। প্রায় ২ দশক ধরে এই কেন্দ্রের উপর নির্ভর করে ১১০টি দেশ তথ্যপ্রযুক্তিগত সাহায্য পাচ্ছিল। একটি ফুটবল মাঠের আয়তনের এই গবেষণাকেন্দ্রে প্রধান দুটি অংশ আছে। যার একটি চালায় আমেরিকা এবং অন্যটি চালায় রাশিয়া। এখানে মোট সাতজনের থাকার মতো জায়গা আছে। এখন সেখানে তিনজন রুশ, চারজন মার্কিন ও একজন ইউরোপীয় নভোশ্চর তথা জ্যোতির্বিজ্ঞানী রয়েছেন।