নয়াদিল্লি: ক্যান্সার (Cancer)। মারণ রোগ (Fatal Disease)। এই মারণ রোগের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, তার সবকটিই প্রাণঘাতী। ক্যান্সারের এমন অনেক ধরন রয়েছে, যার ফলে প্রস্রাবের গন্ধে পরিবর্তন ঘটে (Changes in Urine’s Smell)। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা (Scientists and Experts) এই নিয়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু জানেন কি, পিঁপড়েরা (Ants) গন্ধ শুঁকে ক্যান্সার সনাক্ত (Detect) করতে পারে। বলে দিতে পারে, আক্রান্ত রোগীর (Affected Patient) ক্যান্সার রয়েছে কিনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন খোঁজ এই প্রথম। কী বলছেন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা? তাঁদের মতে পিঁপড়েদের মধ্যে বিশেষ ধরণের ঘ্রাণ সক্ষমতা রয়েছে, এর ফলে গন্ধ শুঁকে তারা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার চিনে নিতে পারে।
আরও পড়ুন: IBM Layoff: কর্মী ছাঁটায়ের পথে আইবিএম, কোপ পড়তে চলেছে প্রায় চার হাজার কর্মীর
সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক একটি জার্নালে (Journal) এই নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত (Published Report) হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা লিখেছেন, এই পোকাগুলিকে (Insects) রোগীদের মধ্যে ক্যান্সার চিহ্নিত করতে সাশ্রয়ী উপায় (Cost-effective Way) হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই অধ্যয়নের অন্যতম লেখক সরবোনে প্যারিস নর্ড ইউনিভার্সিটি (Sorbonne Paris Nord University)-র প্রফেসর প্যাট্রিজিয়া ডি’এত্তোরে (Study Author Professor Patrizia d’Ettorre) বলেছেন, টিউমার রয়েছে এমন ব্যক্তি (Tumour-bearing Persons) এবং সুস্থ ব্যক্তির (Healthy Individuals) মধ্যে পার্থক্য করতে বায়ো-ডিটেক্টর (Bio-detectors) হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে পিঁপড়েদের প্রশক্ষিত (Train) করা সহজ, তারা দ্রুত শেখে এবং খুবই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে (Learn Fast and Work Very Efficiently)। পাশাপাশি পিঁপড়ে লালন-পালন করতেও বেশি অর্থ খরচ হয় না।
এর আগে প্রফেসর ডি’এত্তোরে এবং তাঁর সহকর্মীরা (Colleagues) এর আগেও এই নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন। সেই গবেষণার উপর ভিত্তি করেই নতুন এই অধ্যয়নটি চালানো হয়েছে। আগের গবেষণায় পরীক্ষাগারে মানুষের ক্যান্সার কোষ তৈরি করা হয়েছিল (Human Cancer Cells Grown in the Lab) এবং পিঁপড়েরা সেই ক্যান্সার কোষ শুঁকে চিনে নিতেও সক্ষম হয়েছিল (Sniff Out)।
আরও পড়ুন: Pathan Controversy: ‘পাঠান’ নিয়ে নতুন বিতর্ক, সাহেব ভট্টাচার্যের গুরুতর অভিযোগ শাহরুখের সিনেমা নিয়ে
নতুন এই অধ্যয়নের জন্য গবেষকরা ৭০টি পিঁপড়েকে ব্যবহার করেছিলেন। এই পিঁপড়েগুলি ফর্মিকা ফুসকা (Formica fusca) প্রজাতির। তাদেরকে ইঁদুরের প্রস্রাবের (Mice’s Urine) সংস্পর্শে আনা হয়। একদিকে ছিল সুস্থ ইঁদুরের প্রস্রাব (Urine of Healthy Mice), অপরদিকে ছিল টিউমার যুক্ত ইঁদুরের প্রস্রাব (Urine of Mice with Tumour)। গবেষণায় তিনটি ট্রায়াল নেওয়ার পর দেখা গিয়েছিল, টিউমার যুক্ত ইঁদুরের প্রস্রাব এবং সুস্থ ইঁদুরের প্রস্রাবের মধ্যে পার্থ্যক্য করতে পারছে পিঁপড়েরা। এর কারণ হল, পিঁপড়েদের ঘ্রাণতন্ত্র (Olfactory System) খুবই সংবেদনশীল (Very Sensitive)। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মাত্র তিনটি ট্রায়ালেই এই সাফল্য এসেছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বর্তমানে ক্যান্সার কোষ নির্ধারণ করার জন্য যে কালচার টেস্ট (Culture Test) করা হয়, তার চেয়ে এটি অনেক বাস্তবিক ধরণের। পিঁপড়েরা এতটা দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য, তা দেখে গবেষকরাও অবাক হয়ে গিয়েছেন।
ইঁদুরের প্রস্রাব চিনতে পিঁপড়েদের অসুবিধা হয়নি, আগামী দিনে এবার মানুষের প্রস্রাব নিয়ে ট্রায়াল (Trial) চালানো হবে। দেখা হবে, পিঁপড়েরা সুস্থ মানুষের প্রস্রাব এবং বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার রোগীর প্রস্রাব চিনে নিতে সক্ষম হয় কিনা দেখার। এর আগে কুকুর (Dogs) নিয়ে গবেষকরা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষায় সফলতা এসেছিল। কুকুরেরা ক্যান্সার রোগীর প্রস্রাব সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে তার জন্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছিল। এছাড়া, মূত্রাশয়ের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার কিংবা প্রস্টেট ক্যান্সার (Bladder, Breast or Prostate)-এর মতো ক্যান্সারের ধরন সনাক্ত করার জন্য বৈদ্যুতিন যন্ত্রও (Electronic Devices) রয়েছে। প্রসঙ্গত, ক্যান্সার হলে মানুষের প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন হয়। মানুষের নাক সেই গন্ধ পার্থক্য করতে পারে না।