কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের (Rampurhat violence) পিছনে কারা? নেপথ্যে কি বহিরাগত যোগ রয়েছে? নাকি অভিযুক্তরা সকলেই বগটুই গ্রামের বাসিন্দা? একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের অনেকেরই নাগাল এখনও পায়নি পুলিস। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রামপুরহাট-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেনকে (Anarul Hossain) গ্রেফতার করা হলেও এখনও অধরা লালন, নিউটন, পলাশ, নুর আলি, আসিফ, বাপ্পার মতো বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত।
সোমবার সন্ধে। বোমা-গুলি মেরে খুন করা হয় স্থানীয় উপপ্রধান ভাদু শেখকে। সেই ঘটনায় উঠে আসে চারজনের নাম- সফি, নিউটন, পলাশ এবং সঞ্জু। ভাদু শেখের ভাগনা সুজন জানিয়েছিলেন, দুটি বাইকে করা ওরা এসেছিল। সফি আচমকাই একটি বোমা ছোড়ে ভাদুর দিকে। বাইক থেকে লুটিয়ে পড়েন মামা। পরের বোমাটা উড়ে আসে নিউটনের হাত থেকে। ততক্ষণে দূর থেকে দাঁড়িয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে চলেছে সঞ্জু শেখ ওরফে সোনা শেখ। গুলি চালায় কালো জামা পরা পলাশ। গুণে গুণে তিন রাউন্ড সঙ্গে বোমা। এরপরেই ঘটনাস্থল থেকে দুটি বাইকে পালিয়ে যায় ওই চার জন। সূত্রের খবর, এই চারজনের নাগাল এখনও পায়নি পুলিস।
ভাদু খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় বগটুই গ্রামে। ভাদু শেখের খুনে অন্যতম অভিযুক্ত সঞ্জু শেখ সহ এলাকার বেশ কয়েকজনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই আগুনে পুড়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়। কারা সেই আগুন লাগালেন? ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী মিহিলাল শেখের কথায়, আচমকা ওরা এসে বাড়ি ঘিরে ফেলল। আমরা পুরুষ মানুষেরা পালিয়ে গিয়েছিলাম বাড়ি ছেড়ে। মেয়েদের দরজা আটকে বাড়িতেই থাকতে বলেছিলাম। এর পর বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার মিহিলাল জানান, লালন, নুর আলি, বরদেজ, ভিকি, কালো, আসিফ সহ আরও অনেকে সে রাতে এসেছিল।
আরও পড়ুন: Anarul Hossain: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন
রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মিহিলাল শেখ (নিজস্ব চিত্র)
বগটুই গ্রামে পরিবারের যে ৭ জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের একজন ভাসান শেখের মা মিনা বিবি। বাকিরাও ভাসানের নিকট আত্মীয়। কাকিমা, পিসি, ভাগ্নে-ভাগ্নী…। ভাসান শেখের অভিযোগ, মা মিনা বিবিকে পুড়িয়ে মারার আগে ওরা ছুট করিয়েছে। হাতে ছিল কুড়ুল। ঘুরে ঢুকে মাকে হাঁফাতে দেখলে, ভাগ্নেরা জল বাড়িয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ঘরে ঢোকে। এলোপাথাড়ি কোপায়। সকলের গায়ে কেরোসিন-পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ‘ওরা’ কারা? ভাসান জানিয়েছিলেন, ‘ভাদু শেখের লোকজন। লালন, মুর্তেজ, মনির, জাহাঙ্গীর, খুশির, বাপ্পা…।’
মৃত মিনা বিবির ছেলে ভাসান শেখ। (ফাইল চিত্র)
আগুন লাগানোর ঘটানোর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে উঠে আসে দুই শিশুর নাম। তারা জানায়, প্রচুর লোক এসেছিল। তাদের মধ্যে- ভিকি, ভিকির ছেলে, বাপ্পাও ছিল। আজ মুখ্যমন্ত্রীকে বগটুই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও অনেককে পুলিস আটক করেছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান গ্রামবাসীরা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য গোটা বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন বলে মন্তব্য করেন। দুটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে বেশ কয়েকটি নামের মিলও রয়েছে। সেগুলি হল- নিউটন, পলাশ, বাপ্পা, লালল, আসিফ। এখন প্রশ্ন হল এরা কোথায়? কবে সমস্ত অভিযুক্তর নাগাল পায় পুলিস, সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Rampurhat: গ্রামছাড়াদের ঘরে ফেরান, নিরাপত্তা দিন, ডিজিকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর