রামপুরহাট: রামপুরহাটের বগটুইকাণ্ডে (Rampurhat Violence) সিবিআই হেফাজতে থাকা ‘বিতর্কিত’ তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেনকে (Anarul Hossain) নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু, তৃণমূলেরই অন্দরে রামপুরহাটের প্রভাবশালী নেতা তথা ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আনারুলের হয়ে ‘ওকালতি’ করেন বলে সে যাত্রা আনারুল হোসেন ও তাঁর শাগরেদ নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখের চাকরি বেঁচে যায়।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আনারুল হোসেনের আচরণের গতিপ্রকৃতি, কাজকর্ম অনেকদিন থেকেই দলের জেলা নেতৃত্ব ভালো চোখে দেখছিল না। সেই জন্য গত বিধানসভা নির্বাচনে রামপুরহাটের ফল ভালো হয়নি। আনারুলকে দোষারোপ করে সেই সময় জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বগটুইকাণ্ডে ধৃত আনারুলকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সময় সদ্য নির্বাচিত রামপুরহাটের বিধায়ক ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আনারুলকে আর একবার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। এমনকী আনারুল ও নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখ নিজেদের সংশোধন করে নেবে, এই মর্মে অনুব্রতকে মুচলেকা দেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের তদন্তে আনারুল সম্বন্ধে যে অভিযোগ উঠে আসছে, তা নিয়ে দল আগেই তাকে সতর্ক করেছিল, এই চিঠিতেই তার প্রমাণ। এই চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচনের পরেই ব্লক সভাপতিকে সরিয়ে দিলে ভালো দেখাত না। তাই কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। যদিও যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা দলের অভ্যন্তরীণ ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। অনুব্রত মণ্ডলও তাঁকে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
অনেকদিন ধরেই আনারুল হোসেন ও ভাদু শেখ সম্পর্কে বিভিন্ন স্তর থেকে নালিশ আসছিল দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে। তাঁদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজকারবার ও সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ জমা হয়েছিল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দরবারে। তাঁদেরকে এ ব্যাপারে একাধিকবার সতর্কও করেছিল দল। কিন্তু তাতেও তাদের বাগে আনা যায়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: Bhadu Sheikh Murder: ভাদু শেখ খুনে গ্রেফতার আরও দুই, এ পর্যন্ত পুলিসের জালে ৬ জন
এরপর এল বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের ফলাফলে দেখা গেল রামপুরহাটের ফল বেশ খারাপ। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও মার্জিন খারাপ হয়েছে। তখনই টনক নড়ে দলের অভ্যন্তরে। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে জেলা নেতৃত্ব ফলাফলের ময়না তদন্তের বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সেই বৈঠকেই আনারুল হোসেন ও ভাদু শেখকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সে যাত্রায় ওই ২ নেতাকে বাঁচিয়ে দেন বলে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে।