আগরতলা: জানুয়ারি মাসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। চাটার্ড ফ্লাইটে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল গেরুয়া শিবির। তার পর অমিত শাহের হাত ধরে আনুষ্ঠানিক দলবদল। বিজেপি ডোমজুড় থেকে রাজীবকে প্রার্থী করলেও ৪২ হাজারেরও বেশি ভোটে হারেন তিনি। সেই রাজীব আজ, রবিবার তৃণমূলে ফিরলেন।
আগরতলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় তৃণমূলে যোগ দেন রাজীব। দলে যোগ দিয়ে ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’ স্লোগানও দেন তিনি। রাজীব বলেন, আগামী দিনে গোটা দেশকে নেতৃত্ব দেবেন অভিষেক। অনেককে সভায় আসতে দেওয়া হয়নি। বিজেপি এখানে কোনও কাজ করেনি। ত্রিপুরায় পরিবর্তন আসছে। আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছিলাম। জেদ-রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত।
এর আগে অগস্ট মাসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজীব। তারও আগে রাজীব তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গেও দেখা করেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মা মারা যাওয়ার তাঁর বাড়িতেও গিয়েছিলেন রাজীব।
আরও পড়ুন: দলবদলুদের গুরুত্ব, বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতিতে ঠাঁই মিঠুন-দীনেশের, আমন্ত্রিত রাজীবও
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দল ছাড়ার সময় মমতার ছবি বুকে নিয়ে বিধানসভা ছেড়েছিলেন। ফিরে আসার রাস্তা খোলা রাখার জন্যই হয়তো এমনটা করেছিলেন! নির্বাচনের প্রচারে মমতা-অভিষেককে কার্যত তুলোধোনা করেছিলেন। ভোটের ফল প্রকাশের পর আবার সেই মমতাকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। বিজেপির নীতি নিয়ে একাধিকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখও খুলেছিলেন। দল না ছাড়লেও সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিজেকে একপ্রকার দূরেই রেখেছিলেন।
বোঝাই যাচ্ছিল, রাজীবের দল ছাড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি অবশ্য রাজীবকে দলে রাখতে কম চেষ্টা করেনি। বিজেপির কর্মসমিতিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে জায়গা দেওয়া হয় ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ককে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। গেরুয়া শিবির ছেড়ে জোড়াফুলেই ফিরতে চলেছেন রাজীব। বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি থেকে একাধিক বিধায়ক-নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কলকাতাতে দলের কার্যালয়ে সেই সমস্ত যোগদান অনুষ্ঠান হয়েছে।
আরও পড়ুন: অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক রাজীবের, তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা
প্রশ্ন উঠছে, রাজীব কেন ত্রিপুরায় অভিষেকের মঞ্চে যোগ দিলেন। এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ডোমজুড়ে রাজীবের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এর আগে একাধিকবার রাজীবের তৃণমূলে ফেরার জল্পনা তৈরি হয়। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার পোস্টার পড়ে ডোমজুড়ে। দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীরাও রাজীবকে দলে না নেওয়ার আবেদন জানান। দলের অন্দরে থাকা ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হয়তো রাজীবকে ত্রিপুরায় যোগদান করানো হচ্ছে।
আরেকটি কারণও উঠে আসছে। এর আগেও ত্রিপুরায় সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের সময়ও সে রাজ্যে কাজ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। ফলে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য পরিচিত রাজীবের কাছে। তৃণমূলের পাখির চোখ এখন ত্রিপুরা। সে কারণেই রাজীবকে দলে নেওয়া হচ্ছে বলে খবর। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের তরফে ত্রিপুরায় বড় কোনও সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।