শিলিগুড়ি: উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ডুয়ার্স রুটের শিলিগুড়ি জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশন পর্যন্ত ১৬২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে থাকা মোট ১৩ টি এলিফ্যান্ট করিডরকে ‘ইন্ট্রুশন ডিভাইস সিস্টেম’ এর আওতায় আনার যৌথ সিদ্ধান্ত নিল রেল ও রাজ্য বনদফতর। ওই রেলপথের মধ্যে থাকা মহানন্দা অভয়ারণ্য, চাপরামারি, গরুমারা জাতীয় উদ্যান, জলদাপাড়া ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ২০০৪ সালে গেজ পরিবর্তনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭৭ টি বুনো হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শেষ দুর্ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ১০ অগাস্ট চালসা ও নাগরাকাটা স্টেশনের মাঝখানে।
এছাড়াও ওই মারণ রেলপথে হাতি ছাড়াও অগুনতি বাইসন, বাঁদর, হরিণ, চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ইতিপূর্বে ওই মৃত্যু মিছিল ঠেকাতে বারবার সমন্বয় বৈঠকে বসেছেন রেল ও বনদফতরের কর্তারা। চলেছে পরস্পরের মধ্যে তুমুল তর্জা। এর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে কৃত্রিম মৌমাছির গুঞ্জন, সাইরেন বাজিয়ে হাতিদের রেলপথ থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও, কার্যত সব চেষ্টাই বিফলে গেছে। মাঝখান থেকে খরচ হয়ে গেছে লক্ষ লক্ষ টাকা। হালে ভারতীয় রেলের তরফে অপটিক্যাল ফাইবার ও সফটওয়ার নির্ভর এমন একটি ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে, যার নাম ‘Intrusion Device System’ সংক্ষেপে যা আইডিএস নামে পরিচিত। রেলের দাবি উন্নত প্রযুক্তির ওই সফটওয়ার ব্যবহার করে রেলপথে শুধুমাত্র বন্যপ্রাণির মৃত্যু যেমন রোধ করা যাবে, ওই ডিভাইসের আওতায় থাকা ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেলপথে ঘটতে চলা কেনোরকম নাশকতা, রেললাইনে ফাটল, ভূমিধস ও বন্যার জল ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গেই অ্যালার্ট চলে আসবে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিকটবর্তী গেটম্যান, স্টেশন মাস্টার, লোকোপাইলট ও রেলওয়ে কন্ট্রোল রুমে। ফলে এড়ানো যাবে দুর্ঘটনা। আপাতত ভারতীয় রেল সারা দেশে ওই ডিভাইস প্রতিস্থাপনের জন্যে ৭৯.১২ কোটি টাকা খরচ করবে। ইতিমধ্যেই অসমের লামডিং ডিভিশন, আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের নাগরাকাটা থেকে হাসিমারা, ওডিশা ও কর্ণাটকে ভারতীয় রেল ওই আইডিএস প্রযুক্তি চালু করে ফেলেছে। ধাপে ধাপে সারা দেশের রেলপথকেই ওই প্রযুক্তির আওতায় আনার কথা ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
আরও পড়ুন: জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গেল ট্রলার
শনিবার আলিপুরদুয়ার ডিআরএম অফিসে রেল ও রাজ্য বনদফতরের মোট কুড়ি জন শীর্ষ কর্তা এক সমন্বয় বৈঠকে বসে দুর্ঘটনা প্রবণ ডুয়ার্স রেলপথকে ইন্ট্রুশন ডিভাইস প্রযুক্তির আওতায় আনার কথা ঘোষণা করে। দুই তরফই আশাবাদী, ওই প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুসহ যে কোনও রেল দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। সঙ্গে বনদফতর ঘোষণা করেছে যে, এখন থেকে রেলের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে একজন উচ্চ পদমর্যাদার বনকর্তা ২৪ ঘন্টার জন্যে রেলওয়ে কন্ট্রোল রুমে থাকবেন।