নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদর্শের জন্যই মণিপুর জ্বলছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির অভিযোগের জবাব দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বুধবার রাজ্যসভায় স্মৃতি বলেন, রাহুল গান্ধীই মণিপুরে আগুন জ্বেলেছেন। তার পাল্টা বৃহস্পতিবার রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের জন্য কী করেছেন। তাঁর নীতির কারণেই আজ জ্বলছে মণিপুর। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া এক ভিডিওতে রাহুল বলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে কিছু বলছেন না। মণিপুর নিয়ে মোদিজি কিছু করেননি বলেই আজ এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে, অভিযোগ রাহুলের।
এদিকে, মণিপুর ইস্যুতে এদিন প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। সংসদ চত্বরে তিনি বলেন, সংসদের বাইরে রাজনৈতিক ভাষণ দিতে পারছেন উনি। কিন্তু সংসদে বিবৃতি না দিয়ে গণতন্ত্রের সম্মান খর্ব করছেন। সংসদীয় ইতিহাসে এর থেকে অন্ধকার পর্ব আর কোনওদিন দেখেনি দেশের মানুষ। গত ৮৫ দিন ধরে একটা রাজ্য জ্বলছে। কিন্তু, কেন্দ্র তাকিয়ে দেখছে না। এটা মানবিকতার প্রতি লজ্জা।
আরও পড়ুন: Manipur | INDIA Team | মণিপুরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিদল
কংগ্রেস সভাপতি বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আরও বলেন, ওরা আমার মাইক বন্ধ করে দিচ্ছে রাজ্যসভায়। বলতে দিচ্ছে না। এদিন কালো পোশাক পরে প্রতীকী প্রতিবাদের সপক্ষে খাড়্গে বলেন, এটা আমাদের কাছে প্রতিবাদ ও শক্তির প্রতীক। মণিপুরের মানুষ সুবিচার, শান্তি এবং সম্মান ফিরে পেতে চান।
প্রসঙ্গত, এদিনই রাজস্থানের সিকরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তুলোধনা করেন কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটকে। ভোটমুখী রাজস্থানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন অশোক গেহলট সরকারকে ‘লুট কি দুকান’ এবং ‘ঝুট কা বাজার’ বলে আক্রমণ করেন। রাজ্যের উন্নয়ন কংগ্রেস স্তব্ধ করে রেখেছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী গেহলটের আরোগ্য কামনা করেন মোদি। মঞ্চেই তিনি বলেন, হাঁটুতে আঘাত পেয়েছেন প্রবীণ নেতা। সেই কারণেই সরকারি এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। আমি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
যদিও এই অনুষ্ঠানের আগে বিরাট বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ গেহলটের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রাজস্থানের সিকরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণ দেওয়ার সূচি বাদ দিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানায়, গেহলটের দফতর বলেছে তিনি ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না। তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।
সিকরে এক জনসভায় মোদি বলেন, রাজ্যের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কংগ্রেস। আমাদের সরকার রাজস্থানকে দেড় লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু, কংগ্রেস গদিতে বসার পর থেকে এখানে কোনও উন্নয়নের কাজে হাত পড়েনি। কংগ্রেসের ভিতর থেকেই ওঠা বিতর্কিত ‘লাল ডায়েরি’ প্রসঙ্গ তুলে মোদি বলেন, এই খাতাই রাঘব বোয়ালদের কালো দলিলের ভাণ্ড ভেঙে দেবে। এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী গেহলট বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ একটি সম্মানজনক পদ। আইটি, ইডি, সিবিআইকে অপব্যবহার করা হচ্ছে দেশজুড়ে। লাল ডায়েরি নিয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকেই তো সংগ্রহ করতে পারেন। রাজস্থানকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিশানা করা হচ্ছে। এখন ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলবে। লাল ডায়েরিও তেমনই একটি অবাস্তব দাবি।
কংগ্রেস একটি দিশাহীন দল, এই অভিযোগ তুলে মোদি বলেন, রাজ্যের যুব সমাজকে প্রশ্নপত্র ফাঁস মাফিয়াদের হাত থেকে বাঁচাতে এই সরকারকে সরাতে হবে। এদিন এই অনুষ্ঠানে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী জোটের নাম নিয়েও এদিন তুলোধনা করেন মোদি। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে মহাত্মা গান্ধী ইংরেজ ভারত ছাড়োর ডাক দিয়েছিলেন। আর আজকের মন্ত্র হল, দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, পরিবারবাদ ভারত ছাড়ো, তুষ্টিকরণ ভারত ছাড়ো।