বেঙ্গালুরুর বৈঠকের আগেই মমতা জানিয়েছিলেন তিনি ওই ডিনারে যেতে পারবেন না, শারীরিক কারণে। তার আগে এক তিক্ত লড়াই শেষ হয়েছে, একধারে সেলিম অন্যধারে অধীরের চোখা চোখা কথা প্রায় নিঃশব্দে হজম করেছেন, ডিনারে না যাবার সিদ্ধান্ত কি তখন নিয়েছিলেন? আমাদের ঠিক জানা নেই। কিন্তু বেঙ্গালুরুর মিটিং এ তিনি গেলেন, প্রাক ডিনার বৈঠকেও বসলেন, বসলেন সোনিয়া গান্ধীর পাশে, অন্যপাশে মল্লিকার্জুন খাড়গে। বরফ গলেছে প্রমাণ তো মিলল। বলেছিলেন ঘন্টাখানেক থেকে ফিরে যাবো হোটেলে। থাকলেন সাড়ে তিন ঘন্টা, তারপর ডিনারের জায়গায় আরও আধ ঘন্টা। পরেরদিন একপাশে সোনিয়া, অন্যপাশে রাহুল। কেবল কি তাই? ইন্ডিয়া নাম উথ্বাপন করলেন মমতা, সবাই সমর্থন করলেন, শেষে রাহুল তাঁর বক্তৃতায় শিলমোহর দিলেন, মমতা বক্তৃতায় বললেন আমাদের ফেবারিট রাহুল গান্ধী। বোঝা গ্যালো গোমুখের সব বরফ জল হয়ে নেমে আসছে হু হু করে। এরই মধ্যে লালু প্রসাদ যাদব বলেছেন, এই যে ভায়া ইয়েচুরি এসব কী হচ্ছে? জানা গেছে ইয়েচুরি সাহেব রা কাড়েননি। অন্যদিকে খবরে প্রকাশ মঞ্চে আলোচনা চলছে তো চলছে, উপস্থিত সবাই বলেছেন লাঞ্চ থাক, আলোচনা শেষ করা যাক। তাই টেবিলে রাখা লজেন্স আর বাদাম ছিল ভরসা। রাহুল বাদাম বার করে মমতা কে দিলেন, মমতা নাকি লজেন্স দিলেন। এগুলো খুব সাধারণ ব্যাপার, রাজীব সোনিয়ার সঙ্গে মমতার সম্পর্কতো কম দিনের নয়, বরফ জমেছিল গলে গেছে। এই তো। কিন্তু এ বাংলার সেলিম সাহেব এবং অধীর চৌধুরির কী হইবে? সেটাই বিষয় আজকে, রাহুল মমতা রসায়নে সিপিএম, অধীর চৌধুরির অস্বস্তি বাড়ল?
আরও পড়ুন: বিজেপি সরকারের একটাই দাওয়াই, বিরোধিতা করলেই ইডি আর সিবিআই
আসলে বিরোধী ঐক্যের যে কটা ফল্ট লাইন আছে তারমধ্যে অন্যতম হল বাংলা, আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। আবার বিরোধী ঐক্য মানেই যে ৫৪২ টা আসনেই এক সার্বিক বিরোধী ঐক্য হবে তাও তো আশা করা যায় না, যার জন্য শুরু থেকেই মমতা, নীতিশ ইত্যাদি নেতারা বলে আসছেন যে কম করে যদি ৪৫০ আসনেও বিরোধী ঐক্য হয়, তাহলেও বিরাট কাজ হবে। কেন ৪৫০ বলছিলেন? কারণ তাঁরাও জানেন যে কেরালায়, উত্তর প্রদেশে, দিল্লি, তেলেঙ্গানাতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই প্রথমত সম্ভব নয়, দ্বিতীয়ত ঐক্য হলে উলটে বিজেপির লাভ হয়ে যেতেই পারে। ধরুন এইভাবে যদি অংকটা করা যায়, এই বাংলায় ভোট দুভাগে ভাগ হচ্ছে, এক সরকারে থাকা মমতা বা তৃণমূলের পক্ষে, দুই সরকারের বিরুদ্ধে। এবার তর্কের খাতিরেও যদি ধরে নিই সার্বিক জোট করা হল, তাহলে ওই সরকার বিরোধী প্রত্যেকটা ভোট গিয়ে পড়বে বিজেপির বাক্সে, সেটা কি খুব একটা ভালো হবে? অন্যধারে কংগ্রেস সিপিএম জোট করে লড়লে সরকার বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাবে, তাতে তো সুবিধে তৃণমূলের, একই ছবি কেরালাতেও, সেখানেও কংগ্রেস সিপিএম একসঙ্গে লড়লে একটা বড় ভোট চলে যাবে বিজেপির দিকে। কাজেই সার্বিক ঐক্য হবেও না, আর সার্বিক ঐক্য হলে তার ফলাফল সব জায়গাতে ভাল হবে না। কিন্তু যখন একটা ঐক্যের কথা চলছে, তখন ভাষার সংযম তো থাকা উচিত। সর্বভারতীয় ঐক্য মঞ্চে বসে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী বাদাম খাচ্ছেন আর অধীরবাবু এখানে বসে বলছেন দূর্নীতিবাজ, চোরেদের সরকার, উপড়ে ফেলব। বিরোধীরা সরব ইডি হানা নিয়ে, সিবিআই হানা নিয়ে। সম্মিলিত যৌথ বয়ান জারি করেছে ইন্ডিয়া, তাতে বলা হয়েছে যে বিরোধীদের ঐক্যমঞ্চ ইন্ডিয়া মনে করে মোদি সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে ইডি সিবিআই-কে ব্যবহার করছে, একে প্রতিরোধ করতে হবে, সই করেছেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতিশ কুমার, সীতারাম ইয়েচুরি সমেত ২৬ দলের নেতা। আর গণশক্তি উল্লসিত, মমতা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে ই ডি ধরেছে, উল্লাসের বহর দেখুন খবর ছাপা হচ্ছে প্রথম পাতায়। সেখানে বলা হয়েছে পিংকনের মালিক মনোরঞ্জন রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এই গ্রেপ্তার। একবারও এই প্রশ্ন তোলা হল না যে এই মনোরঞ্জন রায় অভিযুক্ত নয়, চিট ফান্ড মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটছেন, তাঁর অভিযোগ এতদিন পরে? ২০১৭ র ঘটনা জেলে ঢোকার পর মনে পড়ল, তিনি জানালেন, ব্যস, ইডি এসে গ্রেপ্তার করল এবং মেহনতি মানুষের পত্রিকার উল্লাস, প্রথম পাতায় খবর? আসন সমঝোতা ছেড়ে দিন, অন্তত ইস্যু নিয়েও তো সৎ থকার দরকার আছে। মমতা সেটাই জানিয়েছেন, সেটাও আলোচনা হয়েছে, অধীর বাবু জানেন কংগ্রেসের টিকিট না পেলে তিনি বহরপুর মিউনিসিপালিটিতেও কাউন্সিলর হিসেবে জিততে পারবেন না, কাজেই তাঁকে চেপে যেতে হবে কিংবা বিজেপিতে যেতে হবে, কিন্তু সেলিম সাহেব? আমরা মানুষকে জিজ্ঞেষ করেছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অগণতান্ত্রিকতার এমন কি সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনার পরেও অধীর বা সেলিমের দল বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলছেন, তাঁদের কথা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? শুনুন মানুষ কী বলেছেন।
আরও পড়ুন: পাঁচ মাসে এ বাংলার সরকার পড়ে যাবে?
আমাদের রাজ্যের বামপন্থীদের নেতা হলেন মহম্মদ সেলিম, যাঁকে আমরা ব্রিগেডের মিটিং এ দেখেছিলাম অধীর চৌধুরির বক্তব্য থমিয়ে এক কাঠ মোল্লা আব্বাসকে জড়িয়ে ধরতে, লক্ষ্য ছিল ফুরফুরা শরিফ ঘেঁসা চন্ডিপুর আসনে জেতা, জেতেননি। তার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙেছিলেন কারণ সেবার রায়গঞ্জে আসনে জেতার ইচ্ছে ছিল, সামনে ছিলেন দীপা দাসমুন্সী। এক চরম সুবিধেবাদী মানুষ, আসল উদ্দেশ্য লুকিয়ে বড় বড় আদর্শের কথা বলে চলেছেন। সেলিম অধীরদের সব থেকে বড় সমস্যা হল বাংলার মানুষের নাড়ির হদিশ না রাখা, তাঁরা জন বিচ্ছিন্ন, তার আরও প্রমাণ আমরা আগামী দিনে পাব।