এ যেন এক অচেনা রাহুল গান্ধী। এর আগে এরকম মারমুখী, তেজস্বী এবং হৃদয় থেকে উৎসারিত ভাষণ দিতে দেখা যায়নি কংগ্রেসের ‘বকলমা সর্বময়’ নেতাকে। বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দলীয় সাংসদদের অনাস্থা বিতর্কের শেষদিনে ছক্কা হাঁকানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার ব্যাট হাতে মোদির জবাবি ভাষণ দিতে নামার আগেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেন সোনিয়া-পুত্র।
অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনায় বুধবার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শরশয্যায় শায়িত করেন রাহুল। অত্যন্ত মার্জিত অথচ শাণিত ভাষায় মোদিকে পদে পদে লোকসভার হাটের মাঝে শরবিদ্ধ করে রক্তাক্ত করে দেন। দীর্ঘ প্রায় চার মাস পর সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পর এদিনই প্রথম মুখ খুললেন। রাহুল এদিন লোকসভায় এলেন, বললেন ও শুষে নিলেন সভার সব আলো।
আরও পড়ুন: রাহুলের ‘উড়ন্ত চুমু’র বিরুদ্ধে স্পিকারকে নালিশ বিজেপির মহিলা এমপিদের
রামভক্ত বিজেপিকে রামায়ণের দৃষ্টান্ত দিয়েই লোকসভা মাতালেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। রাবণের সঙ্গে তুলনা টানলেন মোদির। বললেন, রাবণ দুজনের কথা শুনতে পেতেন। মেঘনাদ এবং কুম্ভকর্ণ। মোদিও কেবলমাত্র দুজনের কথা শোনেন। একজন অমিত শাহ, অন্যজন আদানি। রাবণের মতোই মোদি অহংকারী ও উদ্ধত একথা বোঝাতে বলেন, লঙ্কায় হনুমানজি আগুন লাগাননি। রাবণের ঔদ্ধত্য ও অহংকারে জ্বলে খাক হয়ে গিয়েছিল লঙ্কা। এই দেশেও মণিপুর ও হরিয়ানায় আগুন লাগানোর চেষ্টা চলছে, বলেন রাহুল।
ভাষণের শুরুতেই রাহুল বলেন, ‘এক দো গোলে মারুঙ্গা, জাদা নেহি।’ আর সত্যিই এদিন লোকসভায় মোদি-শিবিরে মর্টার হানা চালালেন। তিনি বলেন, প্রথমেই আমি আমাকে লোকসভার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাব। রাহুলের বক্তব্যের শুরুতেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে হইহল্লা শুরু করে দেয় বিজেপি শিবির। পদে পদে রাহুলের ভাষণে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চলতে থাকে। এর মধ্যেই রাহুল বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না আদানি নিয়ে আমি কিছু বলব না।
বিজেপি এবং এনডিএ-র শরিকরা রাহুলকে কিছুতেই বলতে দিতে চাইছিলেন না, কারণ তাঁর সামগ্রিক আক্রমণ ছিল কখনও সরাসরি মোদিকে লক্ষ্য করে, কখনও পরোক্ষে। তার জবাবে রাহুল বলেন, কাল থেকে আপনারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন, আর ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করুন! মণিপুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন, কিছুদিন আগে আমি মণিপুর গিয়েছিলাম। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত সেখানে যাওয়ার সময় পাননি। আপনারা মণিপুরের মানুষকে হত্যা করে দেশকে হত্যা করেছেন। কারণ মণিপুর যে দেশের একটা অংশ তা মনেই করেন না প্রধানমন্ত্রী। আপনারা দেশদ্রোহী। মণিপুরে দেশকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা ভারতমাতার রক্ষক নন, আপনারা ভারতমাতার ঘাতক।
এর জবাবে স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, কথা বলার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে দেশের কোনও অপমান না হয়। তখন গলা চড়িয়ে রাহুলও বলেন, আমি আমার মায়ের হত্যার কথাও বলতে পারব না। আমার এক মা এখানে বসে আছেন। আর ভারতমাতাকে হত্যা করা হচ্ছে মণিপুরে। নরেন্দ্র মোদি কেবল দুজনের কথা শুনতে পান। আর কারও কথা তাঁর কানে যায় না। মণিপুরকে দুভাগ করে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, সেনাবাহিনী নামালে খুব সহজেই শান্তি ফিরে আসত। কিন্তু আপনারা সেনা নামতে দেননি। যদি প্রধানমন্ত্রী ভারতের হৃদয়ের কথাই না শুনতে চান, তাহলে কার কথা তিনি শুনবেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিনের মতো রাহুলকে এত উত্তেজিতভাবে ভাষণ দিতে খুব কমই দেখা গিয়েছে।