Placeholder canvas
কলকাতা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock
তাঁকে নিয়ে টানাটানি, সিদ্ধিদাতা কতটা রুষ্ট হলেন?
দিব্যেন্দু ঘোষ Published By: 
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩, ০৯:৪৯:৩৩ পিএম
  • / ৭৬ বার খবরটি পড়া হয়েছে

ভারতে রাজনীতির হাড়ে এখন দুব্বোঘাস গজিয়ে গেছে। পুরুষ্ট সেই ঘাসে দিব্বি পেট ভরাচ্ছে রাজনীতির কারবারিরা। কারণ, ধর্মের ঘুলঘুলি দিয়ে আলো-বাতাস-জল সব মাখামাখি হয়ে বিতিকিচ্ছিরি তেরচা স্বার্থ এ দেশের বুকে তিরিং বিরিং লাফাচ্ছে। দেশের মহামহিম শাসকের আস্ফালনে প্রমাণিত, হিন্দুত্ব আর হিন্দুধর্মে যেন  ওদের একচেটিয়া অধিকার। অথচ ধর্ম আর পুরাণের আজব তেলেভাজার সঙ্গে এ দেশের মানুষ সম্যক পরিচিত। শুধু চাখতে নয়, ঘেঁটি ধরে সেই কিম্ভূতকিমাকার ধারণা গিলিয়ে দিতে তুরীয় নৃত্যে মাতে এ কালের স্বঘোষিত মহাপুরুষেরা। রাজনীতির রাজপথে যাঁরা সাতান্ন ইঞ্চির কিছুটা কম ছাতি ফুলিয়ে বাতেলাবাজিতে সিদ্ধহস্ত, তাঁদের ধর্মের প্রগাঢ় জ্ঞান দেখলে মহাশূন্যে লাফ দিতে ইচ্ছে হয় অনেকেরই। এই যেমন কেরল বিধানসভার স্পিকার এবং কেরলের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। কান্নুরের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে আগুনে ঘি ঢেলেছেন স্পিকার এ এন শামসির। INDIA জোট পালে হাওয়া পেয়ে পতপত করে উড়ছে, চব্বিশে দেশের মসনদে ক্ষমতা বদলের ইঙ্গিত উঁকিঝুঁকি মারছে, এই পরিস্থিতিতে অবিজেপি রাজ্যগুলিতে এজেন্সির ভারী বুটের শব্দ বনাম বিরোধী হুঙ্কার লাগাতার শিরোনামে। শামসির বলেছেন, কেন্দ্র শিশুদের বিজ্ঞানের কার্যকারিতা না পড়িয়ে হিন্দু মিথ পড়াতে ব্যস্ত। এর সঙ্গেই তাঁর ব্যাখ্যা, ভগবান গণেশ এবং পুষ্পক রথে কোনও সত্যতা নেই, সবটাই মিথ। কেরলের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তিনিও নাকি ভগবান গণেশকে অপমান করেছেন। তোলপাড় কেরল রাজনীতি। পরে শামসির ব্যাখ্যা দিলেন, কোনও ধর্মকে আঘাত তিনি দেননি। শামসিরের পাশে দাঁড়ালেন গোবিন্দন। তিনি বললেন, গণেশকে মিথ তিনি কখনই বলেননি। গেরুয়া শিবিরের আক্রমণ, গণেশ মন্দিরে নারকেল ভেঙে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কেরলের রাজনীতির আঁচে ক্রমেই ঘি পড়ছে। মন্তব্যের জন্য মোটেই ক্ষমা চাইতে রাজি নন কেরল স্পিকার। তাঁর ব্যাখ্যা, কারও বিশ্বাসে আঘাত করতে চাননি তিনি। কাউকে আঘাত করতে তিনি ওই মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, কোনও ধর্মবিশ্বাসীকে আঘাত করার লক্ষ্য তাঁর নয়। সব ধর্মীয় বিশ্বাসকে তিনি সম্মান করেন। সংবিধানের এক রক্ষক হিসেবে সংবিধানের ধারাও টেনে আনেন শামসির। তিনি বলেছেন, সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে কোনও ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। ৫১ (এইচ) অনুচ্ছেদে বৈজ্ঞানিক ভাবনা প্রচারের কথাও বলা হয়েছে। এর পরেই তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, এর পর কেউ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে বৈজ্ঞানিক ভাবনা নিয়ে কথা বললেই কি তা ধর্মবিশ্বাসীদের আঘাত করা বোঝায়? কেরলের মতো রাজ্যে এই ধরনের আলোচনা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি এখানেই থেমে থাকেননি,  নাম না করে গেরুয়া ধ্বজাধারীদের ফালাফালা করেছেন তিনি। কেরলের স্পিকারের দাবি, সম্প্রতি ভারতে ঘৃণামূলক প্রচারের প্রবণতা বেড়ে চলছে। তবে কেরল তা অনেকটাই আটকাতে পেরেছে। যাঁরা সত্যিই ধর্মে বিশ্বাস রাখেন, তাঁরা এই ধরনের ঘৃণামূলক প্রচার এড়িয়ে চলবেন এবং তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। শামসিরের পাশে দাঁড়িয়ে গোবিন্দনও বলেছেন, শামসিরের ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তবে শামসিরের মন্তব্যে সরব বিজেপি এবং নায়ার সার্ভিস সোসাইটির মতো দল ও সংগঠনগুলি। নায়ারের সাধারণ সম্পাদক জি সুকুমারন ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন। তিনি বলেছেন, শামসির ভুল করেছেন, তাঁকে ক্ষমা চাইতেই হবে। কেন শুধু গণেশ নিয়ে কথা বলবেন তিনি? অন্যান্য ধর্মেও তো সমস্যা থাকতে পারে, তা নিয়ে তাঁরা তো কথা বলেন না। বিজ্ঞানের শুধু গণেশ নিয়েই আপত্তি রয়েছে কিনা সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুকুমারন। শামসির বা গোবিন্দন এমন জায়গায় খোঁচাটা মেরেছেন যে গেরুয়া আত্মশ্লাঘা কিলবিলিয়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবল গণেশভক্ত কি না জানা নেই, তবে সেই ২০১৪-য় সিদ্ধিদাতাকে নিয়ে তুমুল জ্ঞান বিতরণ করেছিলেন। ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ঐতিহ্য যে কত মহান আর সুপ্রাচীন, তা বোঝতে দামোদরদাস বলেছিলেন, প্রাচীন ভারতেও নাকি কসমেটিক সার্জারির প্রচলন ছিল। সেই সময়ে নিশ্চয়ই এমন একজন প্লাস্টিক সার্জন ছিলেন যিনি একটি হাতির মাথা একজন মানুষের শরীরে লাগিয়েছিলেন। তখন থেকেই প্লাস্টিক সার্জারির প্রচলন হয়। মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন মোদি। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভগবান শিব একটি হস্তিশাবকের মাথা একটি শিশুর দেহে জুড়ে দিয়ে ভগবান গণেশকে সৃষ্টি করেছিলেন।

আরও পড়ুন: চাঁদের আরও কাছে চন্দ্রযান ৩, কক্ষপথে ঢুকে পড়বে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই 

আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলি নাকি সবই বেদের যুগে ছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সভায় দাবি করেছিলেন, প্রাচীন ভারতে যে প্লাস্টিক সার্জারি এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা চালু ছিল তার প্রমাণ গণেশের দেহে হাতির মাথা বসানো। এমনকী এই দাবিও প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন যে প্রাচীন ভারত প্রজনন বিদ্যা ও বায়োটেকনোলজিতে উন্নত ছিল। প্রমাণ হিসাবে তিনি সামনে আনেন কর্ণের জন্মকে। আজকের যুগের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেই নাকি কর্ণের জন্ম হয়েছিল যৌন সম্পর্ক ছাড়াই। সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর বলেছিলেন, এখন নাকি বিজ্ঞানের যুগ। তাই প্রায়ই যুক্তি দেওয়া হয়, বিজ্ঞানের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধর্মেও পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি ঠিক উল্টো কথা বলেন। যদি বিজ্ঞানের প্রতিটি গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মে পরিবর্তন করতে হয়, তা হলে ধর্ম আর ধর্ম থাকবে না। ঠিক বলেছিলেন গুরুজি। আসলে ভাবার ক্ষমতা, যুক্তিবোধ ধ্বংস করার প্রয়োজন যখনই পড়ে, তখনই বিজ্ঞানের উপর আক্রমণ হয়। দেশে দেশে ধর্মীয় মৌলবাদীদের মধ্যে যতই বিরোধিতা থাকুক, বিজ্ঞানকে আক্রমণের প্রশ্নে, অন্ধ বিশ্বাসে মদত দেওয়ার প্রশ্নে তাদের আশ্চর্য মিল। হিন্দু, ইসলাম বা খ্রিস্টান, যে কোনও ধর্মের গোঁড়ামিই বিজ্ঞানের নতুন নতুন গবেষণা থেকে চোখ বন্ধ করে রাখতে শেখায়। সেই ধর্মীয় গোঁড়ামি পুরাণকে ইতিহাস বলে, আর বিবর্তনের তত্ত্ব খারিজ করে দেয়।

আরও পড়ুন: ‘শোলে’র গব্বর স্টাইলে বিরোধীদের চুপ থাকার হুমকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর, নয়তো ইডি আসবে ঘরে

একদিকে যেমন কাল্পনিক বিষয় এবং প্রাচীন সাহিত্যে উল্লিখিত বিষয়কে ‘সত্য’ বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা, অন্যদিকে বিজ্ঞান ও ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার করার চেষ্টা চলছে অবিরাম। এই ‘বিজ্ঞান’ হল বিশুদ্ধ ‘হিন্দু’ বিজ্ঞান যা রামায়ণ-মহাভারত-গীতা-পুরাণে বিস্তৃত। সব কিছুর মূলে হিন্দুত্ববাদ। ‘হিন্দু সভ্যতা’ হিসেবেই যে ভারত এক সময় বিশ্বে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, সে কথা প্রমাণ করার মরিয়া প্রয়াস। বিপদটা অপবিজ্ঞানে। বিজ্ঞানের অনুষঙ্গ ব্যবহার করে যুক্তিহীন বিষয় পরিবেশনের চেষ্টা। আমাদের পৌরাণিক গল্পগাথাগুলি বেশিরভাগই রূপকাশ্রিত। তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে, ইতিহাস আছে। সেটা ক্ষতিকর নয় যতক্ষণ না তাকে বাস্তব বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু পুষ্পক রথকে বিমান বা গণেশের মাথাকে প্লাস্টিক সার্জারির প্রমাণ বলে উপস্থাপন করার অর্থ, কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই কাল্পনিক ঘটনাকে বিজ্ঞানাশ্রিত বলে বিশ্বাস করানো। বিজ্ঞানের মূল কথাই হল, কার্যকারণ সম্পর্কের অনুসন্ধান ও ব্যাখ্যা। তাই চাক্ষুষ প্রমাণ ছাড়া কোনও কিছুকে বিশ্বাস না করাও বৈজ্ঞানিক মনোভঙ্গির আবশ্যিক অঙ্গ। তাই এই ধরনের ধারণা ছড়ানো মানে বিজ্ঞান চেতনার গোড়ায় আঘাত করা।

আরও পড়ুন: তোশাখানা মামলায় ৩ বছরের জেল ইমরানের

শুধুই কি নেতা-মন্ত্রী? শুধুই কি গণেশ? অদ্ভুত হাস্যরসাত্মক যুক্তির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় দুর্গার জ্যেষ্ঠপুত্রের ছেটভাইয়ের বাহনকেও। রাজস্থান হাইকোর্টের এক বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন ময়ূরের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে। ময়ূরকে কেন জাতীয় পাখি হিসাবে ঘোষণা করা হবে না, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিচারপতি মহেশ শর্মা বলেছিলেন, ময়ূর হচ্ছে একমাত্র ব্রহ্মচারী প্রাণী! একটি ময়ূরী গর্ভবতী হয় কীভাবে তাহলে? বিচারপতির যুক্তি, ময়ূর যখন তার চোখের জল ফেলে, ময়ূরী সেই অশ্রু পান করেই নাকি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। সেজন্যই ময়ূরের ব্রহ্মচর্য কখনও ক্ষুন্ন হয় না, সে আজীবন কৌমার্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এরকম এক ব্রহ্মচারী পাখিরই জাতীয় পাখির মর্যাদা পাওয়া উচিত ভারতে। বর্তমানে ভারতের জাতীয় প্রাণী বাঘ। তার বদলে গরুকে জাতীয় পশুর মর্যাদা দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন ওই বিচারপতি। এ সবই তিনি অবশ্য আদালতের বাইরে, নিজের কর্মজীবনের শেষ দিনে, সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন। সমাজ মাধ্যম তো অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল। ময়ূরীর গর্ভবতী হওয়ার ওই নতুন পদ্ধতির কথা জেনে খিল্লির ফোয়ারা উঠেছিল নেটনাগরিকদের মধ্যে। বিজ্ঞানীরা বলেন, ময়ূরের চোখের জল খেয়ে ফেলে ময়ূরী গর্ভবতী হয়ে পড়ার এই কল্পকাহিনি অনেক পুরনো, বহুদিন ধরেই এটা চলে আসছে। অন্য সব প্রাণীর মতোই শারীরিক মিলনের মাধ্যমেই যে ‘ব্রহ্মচারী’ ময়ূর কোনও ময়ূরীকে গর্ভবতী করে, সেটাই বিজ্ঞান।

আরও পড়ুন: বাম দলগুলি বামপন্থাকে কলঙ্কিত করেছে, ব্রিগেডে অভিযোগ এসইউসির

বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরোধ অবশ্য নতুন কিছু নয়। ডারউইনের জন্মেরও বহু বছর আগে আমরা দেখেছিলাম, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে এই পরম সত্যটি উচ্চারণ করায় গ্যালিলিওকে চার্চ ও শাসকের কী ভয়ানক কোপের মুখে পড়তে হয়েছিল। নিউটনের তত্ত্ব ঘিরেও এককালে কম বিতর্ক হয়নি। স্কুলে ডারউইনবাদ পড়ানোর অপরাধে আমেরিকায় বিজ্ঞান শিক্ষক টমাস স্কোপসকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের অমোঘ প্রমাণের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে ধর্মকে। তবে শিক্ষাবিদ জি নাগেশ্বর রাওয়ের মতো কিছু মানুষ যখন দাবি করে বসেন, উনিশ শতকে বিবর্তন তত্ত্ব ব্যাখ্যার বহু আগেই হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ‘গীতা’য় উল্লিখিত দশাবতারে প্রাণীজগতের বিবর্তন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন একটু নড়চড়ে বসতে হয়। বিষ্ণুর দশাবতারে বলা সেই বিবর্তন তত্ত্ব, ডারউইনের তত্ত্বের থেকেও নাকি অনেক বেশি উন্নতমানের। ১০৬তম বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাও বলেছিলেন, দশাবতার শুরু হচ্ছে ‘মৎস্য অবতার’ দিয়ে, জলজ প্রাণী। তারপর ‘কূর্ম অবতার’, অর্থাৎ কিনা উভচর। যে জলেও বাঁচে, ডাঙাতেও। চতুর্থ অবতার ‘নরসিংহ’। অর্ধেক মানুষ ও অর্ধেক সিংহ। পঞ্চম অবতার ‘বামন’। আকারে ছোট মানুষ। শেষে রাম। একজন সম্পূর্ণ মানুষ। তারপর কৃষ্ণ। আরও জ্ঞানী, বিচারক্ষমতায় পরিপূর্ণ, কূটনৈতিক বুদ্ধিসম্পন্ন। রামায়ণ-মহাভারত সম্পর্কেও নানা দাবি করেছিলেন অধ্যাপক রাও। তাঁর ব্যাখ্যা, কৌরবদের জন্ম স্টেম সেল থেকে, টেস্টটিউব প্রযুক্তির মাধ্যমে। হাজার হাজার বছর আগেই ভারতের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। বিষ্ণুর হাতের সুদর্শন চক্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে আবার তাঁর হাতে ফিরে আসত। শুধু পুষ্পক রথ নয়, রাবণের অন্তত ২৪ ধরনের বিভিন্ন মাপের, বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান ছিল। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপি, বিশেষত আরএসএস আসলে তাদের ভাবধারা, হিন্দুত্বের তত্ত্বে বিশ্বাসী একটি পাকাপাকি ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাইছে। তাদের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ককে আরও মজবুত করতে চাইছে। এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চাইছে, যারা তাদের ভাবধারাতেই বড় হয়ে উঠবে। তাই পাঠ্যপুস্তকে ঢুকে পড়েন গণেশ, বাদ পড়ে যায় ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব। তবে এটা ভাবতে হবে, এ দেশে মোদিরাজও হঠাৎ একদিনে তৈরি হয়নি, এই সরকারও বিবর্তিতই হয়েছে প্রায় এক দশক ধরে। সেই বিবর্তনে অন্যতম অনুঘটক গরিষ্ঠ সংখ্যক ভারতীয় নাগরিকের নীরবতা। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা একবার বলেছিলেন, সব ব্যাদে (বেদে) আছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার সেটা মানুষের মগজে সেধিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। হিন্দুত্ববাদীদের কষ্টকল্পিত আদর্শে বেদই সব কিছুর উৎস এবং আশ্রয়। মানব সভ্যতার বিকাশের সুদীর্ঘ বিকাশে আজ পর্যন্ত যা কিছু উদ্ভাবন বা যা কিছু অর্জিত জ্ঞান তার সবটাই এসেছে বৈদিক ভারতের মাটি থেকে। এই হিন্দুত্ববাদীরাই দাবি করে বেদের যুগে নাকি ভারতে অত্যাধুনিক বিমানে মানুষ যাতায়াত করত। ভারতে বিরোধীরা গলার শির ফুলিয়ে বলতে চায়, দেশের উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলিকে অবৈজ্ঞানিক, যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন হিন্দুত্ব চর্চার আড়ায় পরিণত করতে চাইছে মোদি সরকার। হিন্দুত্ববাদী যেসব কষ্ট কল্পনা করে থাকে, ইতিহাসের কোনও পর্যায়েই তার হদিশ নেই। তাই তারা বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিনির্ভর আধুনিক গবেষণা থেকে ইতিহাস গবেষণাকে সরিয়ে পুরাণ, মহাকাব্য নির্ভর কাল্পনিক ইতিহাস শেখাতে চায়। গণতন্ত্র মানে নিছক সাধারণের মতামতের স্বীকৃতি নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদের অনুষঙ্গ। বিজ্ঞান ও যুক্তিকে বাদ দিলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়ে। প্রাচীন ভারতীয় অপবিজ্ঞান, কুসংস্কার, সামাজিক বৈষম্য থেকে আধুনিক ভারতীয় সভ্যতা গড়ে তোলার সোপান হিসাবেই আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধান রচনা করেছিলেন। আজকের হিন্দুত্ববাদীরা তাকে প্রাচীন পশ্চাৎপদতায় ঠেলে নামাতে সক্রিয়। শামসির বা গোবিন্দনের মতো বিরোধী নেতারা হিন্দুত্ববাদীদের এই ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে শাসকের রোষানলে। মোদি কিংবা তাঁর চ্যালাচামুণ্ডারা বিশেষ শুধরোবেন বলে মনে হয় না।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২ ২৩ ২৪২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team