রাস্তায় টিয়াপাখি নিয়ে যে জ্যোতিষীরা বসে থাকেন তাদের কাছ থেকে নয়, বা ১৩৪৬ জনের মতামত নিয়ে নয়, গতবারের জয় পরাজয়, তারপরে লোকসভা, বিধানসভার ফলাফল, সাংগঠনিক ক্ষমতা, প্রচারের অবস্থা ইত্যাদি খবরাখবরকে পাশাপাশি রেখে একটা ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করছি আমরা. যে ধারণা থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কোন দল কতটা এগিয়ে, কোন দলের ভোট পার্সেন্টেজ কতটা হতে পারে, কোন দল অন্তত জেলা পরিষদ নির্বাচনে কতগুলো আসনে জিততে পারে, তার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা হল তৃণমূল দল, কারণ যেভাবে ২০১৮-র নির্বাচন হয়েছিল, বা বলা ভালো করানো হয়েছিল, তার ভিত্তিতে সংগঠন বা মানুষের সমর্থন কোনওটাই বোঝার কোনও উপায় নেই। কাজেই হিসেব করতে গিয়ে ২০১৯ আর ২০২১-এর নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিয়েছি আমরা, এবং অবশ্যই এই মুহূর্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক শক্তির দিকেও চোখ রেখেই একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্ঠা করছি, এই অঞ্চলে লোকসভা আর বিধানসভার ফলাফলের বিরাট ফারাক আছে, আবার আসানসোলের সাংসদ দল ছেড়েছেন, বাই ইলেকশনে বিরাট ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা এই কিছুদিন আগে। আবার এই মধ্যবঙ্গের বীরভূমে কেষ্ট মোড়ল নেই আসরে, কাজেই সেটাও কিছুটা প্রভাব তো ফেলবেই। আজ আমাদের আলোচনায় যে জেলাগুলো আছে, তা হল মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান আর পশ্চিম বর্ধমান। হ্যাঁ, আমাদের বিষয় আজকে, মধ্যবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল।
২০১৮ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে বাংলার রাজনীতিতে একটু হলেও যে ফিনোমেনন আমাদের চোখে সাধারণভাবে ধরা পড়ছে তা হল মুসলমান ভোটের শিফট, মুসলমান ভোট সরে যাওয়া। না, এরকম নয় যে মাস মুসলমান ভোট সরে গেছে বা যাবে, না তা নয়, কিন্তু যেখানে বিজেপি কোনও ফ্যাক্টর নয়, যেখানে বিজেপির ফাঁকতালে জেতার ভয় মুসলমানদের মাথায় নেই, সেখানে মুসলমান ভোট সরেছে, সেটা আনিস খানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে, বগটুইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বা আইএসএফ নেতা নওয়াজ সিদ্দিকিকে খামোখা জেলে পাঠানোর প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। কিন্তু মাথায় রাখুন অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করেই মুসলমান ভোটারেরা সেখানেই তৃণমুলের বদলে কংগ্রেস বা বাম প্রার্থীকে বেছে নেবেন বা নিচ্ছেন, যেখানে বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই। উদাহরণ বায়রন বিশ্বাস, সাগরদিঘির নির্বাচন, ওখানে মুসলমান ভোটারেরা ভালো করেই জানতেন বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনাও নেই, তাঁরা রাজ্য সরকারের প্রকল্প পেয়েছেন, সেখানে কাজও হয়েছে, কিন্তু ওই যে, আনিস খান, বগটুই বা নওয়াজ সিদ্দিকিকে জেলে পাঠানোর মতো ঘটনার ফলে তাঁরা ক্ষুব্ধ, এটা খানিকটা হুঁশিয়ারি, কিন্তু এ হুঁশিয়রি শাসকদল যদি কানে না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এটা বড় বিপদ হতেই পারে।
আরও পড়ুন: Aajke | উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল
এবার সেই শিফট, মুসলমান ভোট সরে যাওয়া দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদে, কাজেই মুর্শিদাবাদ এবারে বাম কং বা মূলত কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বিজেপি জেলা পরিষদের কয়েকটা আসনে যে জয় পাবে তা ফলপ্রকাশের পরে যেদিকে ঢলবে সেদিকেই থাকবে জেলার দখলদারি। সেক্ষেত্রে আবার তৃণমূল খানিক এগিয়ে মানে ৭৮টা আসনের ৩৫টা তৃণমূল, ৩৮টা বাম-কং কিন্তু বিজেপি যদি জেলা পরিষদের ৫-৬টা আসন পায়, তা কি বিজেপির সঙ্গে থাকবে? উন্নয়ন যজ্ঞে ঝাঁপ দেওয়ার এক প্রবণতা কি আমরা দেখতে পাব? মুর্শিদাবাদ সম্ভবত সেদিকেই এগোচ্ছে। না, মালদার একটা লোকসভা আসন বিজেপি পেয়েছিল ২০১৯-এ এবারে তার কোনও চিহ্নই নেই, যেমনটা ছিল না ২০২১-এর ফলাফলে, কাজেই মালদা তৃণমূলের হাতেই থাকবে। চলুন বীরভূম, না এই বীরভূমি এখনও তৃণমূলেরই দখলেই আছে, থাকবেও, কেষ্ট মোড়লের জায়গায় কাজল শেখ এবং আরও কিছু মুখ এই জয়ের কাণ্ডারি। সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া পূর্ব বর্ধমানের কোনও বিধানসভা আসনেও জিতে আসবেন একথা ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না সেই তিনি জিতেছিলেন সাংসদ হিসেবে। বরং পূর্ব বর্ধমানে বামেদের সংগঠনে জোর বেড়েছে, কিন্তু পূর্ব বা পশ্চিম বর্ধমানেও অন্তত জেলা পরিষদ যে তৃণমূলই দখল করবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কাজেই মধ্যবঙ্গে এক মুর্শিদাবাদকে ঘিরে খানিক স্পেকুলেশন চলতে থাকবে বাকি জায়গায় তৃণমূল অনায়াসে জিতবে, একমাত্র পূর্ব বর্ধমানে বামেরা কিছুটা এগিয়ে, বাকি জায়গায় দ্বিতীয় আসন কিন্তু বিজেপির থাকছে, কিন্তু সেটাও ডিসট্যান্ট সেকেন্ড। আমরা মুর্শিদাবাদ, মালদা, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা থেকে মানুষের মতামত নেওয়ার চেষ্টা করেছি, আমাদের প্রশ্ন ছিল আপনার জেলাতে কাদের দখলে থাকবে জেলা পরিষদ? শুনুন মানুষ কী বলছে।
নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে বামেদের রাস্তায় নামা দেখে মনে হয়েছিল, সম্ভবত বামেরা বা বাম কংগ্রেস মিলিতভাবে এবারে দ্বিতীয় জায়গা দখলের লক্ষ্যে এগোচ্ছে, কিন্তু ভোট প্রচারপর্বে একমাত্র মুর্শিদাবাদ আর মালদা ছাড়া উত্তরবঙ্গ বা মধ্যবঙ্গের এই জেলাগুলোতে কোথাও দ্বিতীয় স্থানেও উঠে আসতে পারে, তেমন হদিশ কিন্তু মিলল না। তবে হ্যাঁ, ২০২১-এর ৮-৯ শতাংশের থেকে বাম কংগ্রেসের মিলিত ভোট অনেকটাই বাড়বে, যদিও তার সিংহভাগ আসবে ওই মুর্শিদাবাদ থেকেই। অন্যধারে ২০১৯ তো ছেড়েই দিলাম, ২০২১-এর ফলও ধরে রাখতে পারবে না বিজেপি, তাদের মোট ভোট ৩০-৩১ শতাংশের মধ্যেই থেকে যাবে। মধ্যবঙ্গে আমাদের মতে জেলাপরিষদ দখলের নিরিখে মুর্শিদাবাদ হাড্ডাহাড্ডি, মালদা, বীরভূম আর দুই বর্ধমান কিন্তু তৃণমূলের হাতেই থাকবে।