নয়াদিল্লি: মণিপুরের পর ফের রাহুল গান্ধীর তির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। বুধবার সকালে কংগ্রেস নেতা রাহুল চীনের প্রকাশিত নতুন মানচিত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। কর্নাটকে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে তিনি বলেন, অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই চীনকে নিজের ভূখণ্ড বলে চীন যে দাবি তুলেছে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখ খোলা উচিত। মুম্বইয়ে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার তৃতীয় বৈঠক শুরুর আগের দিন কংগ্রেস সাংসদ বলেন, আমি তো কত বছর ধরে বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী লাদাখ নিয়ে মিথ্যা কথা বলে আসছেন। লাদাখের এক ইঞ্চি জমিও হাতছাড়া হয়নি, এটা পুরো মিথ্যা কথা, আমি বহুবার বলেছি।
তিনি আরও বলেন, গোটা লাদাখের মানুষ জানেন, চীন তাদের জমি দখল করেছে। ওরা নতুন যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তা বিপজ্জনক ও গুরুতর সমস্যা। চীন আমাদের জমি কেড়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত এনিয়ে দেশবাসীর কাছে মুখ খোলা।
আরও পড়ুন: খামখেয়ালি আবহাওয়া, এই বৃষ্টি তো পরক্ষণেই ভোকাট্টা
প্রসঙ্গত চীনের মানচিত্রকে অবাস্তব দাবি বলে মঙ্গলবারই ব্যাখ্যা করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত এবং আকসাই চীন বলে বলে বেজিং যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়েছেন জয়শঙ্কর। ১৯৬২-র যুদ্ধে দখল করা অংশকে শি জিনপিংয়ের দেশ নিজেদের ভূখণ্ড বলে মানচিত্রে দেখিয়েছে। জি ২০ বৈঠকের আগে যে ঘটনা নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে। এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর সাফাই গেয়ে বলেছেন, এরকম মানচিত্র প্রকাশ করা চীনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আর অন্য দেশের জমিকে নিজের বলে দেখালেই তা ওদের হয়ে যায় না। এর কোনও অর্থ নেই।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এক বিবৃতিতে অবশ্য বলেছেন, ওই মানচিত্রের কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। আমরা ওদের দাবি খারিজ করছি। সীমান্ত প্রশ্নে যে সমঝোতা আছে, তাকে জটিল করে তুলতে পারে এহেন পদক্ষেপ। আগের দিন সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী বলেন, মানচিত্রে চীন যে ভূখণ্ড তাদের বলে দাবি করেছে, তা ওদের নয়। এটা ওদের পুরনো অভ্যাস। ভারতের অংশ ওদের মানচিত্রে দেখানোয় কিছুই বদলে যায় না। আমাদের ভূখণ্ড সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান আছে। অবাস্তব দাবি করলেই অন্যের জমি নিজের হয়ে যায় না, বলেন জয়শঙ্কর।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘরোয়া আলোচনা হয় এ ব্যাপারে। দুদেশের সীমান্ত বরাবর সমস্যা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা কমিউনিস্ট নেতাকে জানান মোদি। তারপরই দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি ২০ সম্মেলনেও শি-এর সঙ্গে কথা হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। এই রকম একটি পরিবেশে চীনের এই নয়া রাজনৈতিক আগ্রাসী মনোভাবে নয়াদিল্লি যারপরনাই বিরক্ত।
চীনের এই মানচিত্রে ভারত ছাড়াও অন্যান্য বিতর্কিত এলাকাও রয়েছে। যেমন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরের বিরাট একটা অংশ এর মধ্যে রেখেছে চীন। এইসব বিতর্কিত এলাকার উপর দাবিদার ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই। চীনের একটি দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী, দেশের ভূসমীক্ষা এবং মানচিত্র প্রচার দিবস এবং জাতীয় মানচিত্র সচেতনতা প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষে এটা প্রকাশ করেছে প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে চীনের দাবি করা অরুণাচলের ১১টি অঞ্চলকে খারিজ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। এর আগে ২০১৮ এবং ২০২১ সালেও চীন এরকম দাবি জানিয়েছিল। যদিও নয়াদিল্লি প্রথম থেকেই বলে আসছে অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।