ওয়াশিংটন: দেখা হল দুজনার। শ্বেতপ্রাসাদে দেখা হল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের। সাক্ষাতের স্মৃতি হিসেবে হল উপহার বিনিময়ও। কিন্তু মোদির এই সাজানো-গোছানো তিনদিনের মার্কিন সফরেও বিতর্কের জল পা ভিজিয়ে দিয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর। মার্কিন কংগ্রেসের বিশেষ যৌথ অধিবেশনে মোদির ভাষণ দেওয়া নিয়ে বেশকিছু সেনেটর ও কংগ্রেস সদস্যের আপত্তির পর এবার কয়েকজন আইনপ্রণেতা সেই অনুষ্ঠান বয়কটের কথা জানালেন।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের বছরখানেক আগে নরেন্দ্র মোদির এই মার্কিন সফরকে তুরুপের তাস করবে বিজেপি। জো বাইডেনের সঙ্গে মোদির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির মেনু কার্ডে থাকবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা এবং সর্বোপরি পাকিস্তান-চীন নিয়ে দুদেশের গাঁটছড়ার কথা। আমেরিকা বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেবে বলে কথা রয়েছে। অন্যদিকে, টেসলা-টুইটারের মালিক ধনকুবের এলন মাস্ক ভারতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদিকে। এসব কিছুকে ‘বরডালা’ সাজিয়ে ভোটের প্রচারে সাধারণ মানুষের সামনে লজেনচুস হিসেবে তুলে ধরবে বিজেপি।
আরও পড়ুন: Patna Meeting | মহাবৈঠকে যোগ দিতে আজই পাটনায় মমতা-অভিষেক, রাহুলের আগমনের অপেক্ষায় ফুটছে কংগ্রেস
অন্যদিকে. চীনকে টাইট দিতে ভারতের মতো জনসংখ্যার দেশকে পাশে পেয়ে বর্তে যাবে আমেরিকা। এছাড়া, খোলা বাজার তো আছেই। ফলে, মোদির সফরকে ঘিরে বিজেপি নেতৃত্বের আদিখ্যেতার অন্ত নেই। এটাকে দেশের একটা বিরাট দিগ্বিজয়ী সাফল্য বলে তুলে ধরবে পদ্ম শিবির। তাই মার্কিন ভজনায় ভক্তিতে গদগদ মোদি হোয়াইট হাউসের দুই বাসিন্দাকে খুশি করতে বিস্তর উপহার দিলেন। পেলেনও অনেক কিছু।
আইরিশ কবি উইলিয়ম বাটলর ইয়টসের অনুবাদ করা উপনিষদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাইসুরুর বিখ্যাত চন্দনকাঠের তৈরি একটি বাক্সের মধ্যে রাখা বইটি ১৯৩৭ সালে ইয়টসের অনুবাদ করা ‘টেন প্রিন্সিপলস্ অফ উপনিষদ’-এর প্রথম সংস্করণ। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাতের সময় মোদির দেওয়া উপহারের তালিকার মধ্যে ছিল, কলকাতার স্বর্ণকারদের তৈরি রুপোর গণেশ এবং প্রদীপ। এছাড়া জয়পুরের শিল্পীদের তৈরি কারুকাজ করা ওই চন্দনকাঠের বাক্সে যজুর্বেদের বৈখনস গৃহসূত্রম।
শুধু গৃহস্বামীকে কেন, হোয়াইট হাউসের ঘরণী জিল বাইডেনকে একটি সবুজ হিরে উপহার দিয়েছেন মোদি। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, জিলকে উপহার দেওয়া সাড়ে ৭ ক্যারাটের ওই হিরেটি খনি থেকে উত্তোলিত নয়। গবেষণাগারে কৃত্রিম পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে। খনিজ হিরের সমস্ত বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই কৃত্রিম হিরে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তাবাহী। হিরেটি রাখা ছিল কাশ্মীরের শিল্পীদের তৈরি প্রখ্যাত ‘কর-ই-কলমদানি’ বাক্সে। নকশা আঁকা বাক্সটি তৈরি দামি ‘প্যাপিয়ার ম্যাচ’ কাগজ দিয়ে।
এত কিছু সত্ত্বেও মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মোদির ভাষণ বয়কটের ডাক দিয়েছেন কয়েকজন সদস্য। মার্কিন আইনপ্রণেতা ইলহান ওমর, রশিদা তালিব, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজ এবং জেমি রাসকিন মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে ভাষণ বয়কটের কথা টুইটে জানিয়েছেন। এই সেনেটরদের মতে, ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত, মানবাধিকার লঙ্ঘন চরম সীমায় পৌঁছেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন পদ্ধতিতে শোষণ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে ভাষণ বয়কটের কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য এর আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ৭৫ জন ডেমোক্র্যাটিক সদস্য আর্জি জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কথা হবে, তখন যেন মোদির কাছে ভারতের রাজনৈতিক আগ্রাসন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং সাংবাদিকদের নিশানা করার বিষয়গুলি উত্থাপন করা হয়। আমেরিকা-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির বিষয়ে প্রশংসাসূচক উদ্যোগের কথা বললেও ভারত সম্পর্কে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের এহেন আবেদন এবং ভাষণ বয়কটের ডাক মোদির সফরে চোনা ঢেলে দিয়েছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।