নয়াদিল্লি: লোকসভায় ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগেই এসে পৌঁছেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মোদি সভায় প্রবেশ করতেই মোদি, মোদি স্লোগান ওঠে। রাজ্যসভা এদিনের মতো মুলতুবি হয়ে গেলেও লোকসভায় এই মুহূর্তে অনাস্থার পক্ষে ভাষণ দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী।
মণিপুর নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কের শেষদিন আজ, বৃহস্পতিবার লোকসভায় ‘ছক্কা’ হাঁকানোর কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। অনাস্থায় পরাজয় নিশ্চিত জেনেও অনাস্থা আনার মূল কারণই ছিল যাতে, ‘নীরব’ মোদিকে অন্তত জবাবি ভাষণে মণিপুর নিয়ে মুখ খুলতে হয়। এর আগেই বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের সাংসদদের আশ্বস্ত করে মোদি বলেছিলেন, ভয় পাবেন না, আমরা শেষ বলে ছক্কা হাঁকাব। সেই মতো আজ অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি ভাষণে মোদির হাতে বিরোধী নিধনকারী ব্যাট হাতে টি ২০ ম্যাচ দেখতে উৎসুক রাজনৈতিক মহল।
আজ লোকসভায় মোদির ভাষণ নিশ্চিত করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার লোকসভায় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এবং জবাবি ভাষণ দেবেন। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই অনাস্থার উপর ভোটাভুটি হবে। যদিও এদিন সকালে লোকসভার শুরু থেকেই বিরোধীদের হট্টগোলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সভা মুলতুবি করা হয়েছে। সকালেই বিরোধী জোট মল্লিকার্জুন খাড়্গের কার্যালয়ে রণকৌশল নিয়ে একটি বৈঠক করেন। একইভাবে নরেন্দ্র মোদিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশির সঙ্গে দেখা করে রণনীতি তৈরি করেন।
উল্লেখ্য, বুধবার লোকসভায় রামভক্ত বিজেপিকে রামায়ণের দৃষ্টান্ত দিয়েই লোকসভা মাতান কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। রাবণের সঙ্গে তুলনা টানেন মোদির। বললেন, রাবণ দুজনের কথা শুনতে পেতেন। মেঘনাদ এবং কুম্ভকর্ণ। মোদিও কেবলমাত্র দুজনের কথা শোনেন। একজন অমিত শাহ, অন্যজন আদানি। রাবণের মতোই মোদি অহংকারী ও উদ্ধত একথা বোঝাতে বলেন, লঙ্কায় হনুমানজি আগুন লাগাননি। রাবণের ঔদ্ধত্য ও অহংকারে জ্বলে খাক হয়ে গিয়েছিল লঙ্কা। এই দেশেও মণিপুর ও হরিয়ানায় আগুন লাগানোর চেষ্টা চলছে, বলেন রাহুল।
ভাষণের শুরুতেই রাহুল বলেন, ‘এক দো গোলে মারুঙ্গা, জাদা নেহি।’ আর সত্যিই এদিন লোকসভায় মোদি-শিবিরে মর্টার হানা চালালেন। মণিপুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন, কিছুদিন আগে আমি মণিপুর গিয়েছিলাম। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত সেখানে যাওয়ার সময় পাননি। আপনারা মণিপুরের মানুষকে হত্যা করে দেশকে হত্যা করেছেন। কারণ মণিপুর যে দেশের একটা অংশ তা মনেই করেন না প্রধানমন্ত্রী। আপনারা দেশদ্রোহী। মণিপুরে দেশকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা ভারতমাতার রক্ষক নন, আপনারা ভারতমাতার ঘাতক।
রাহুল বলেন, আমার এক মা এখানে বসে আছেন। আর ভারতমাতাকে হত্যা করা হচ্ছে মণিপুরে। নরেন্দ্র মোদি কেবল দুজনের কথা শুনতে পান। আর কারও কথা তাঁর কানে যায় না। মণিপুরকে দুভাগ করে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, সেনাবাহিনী নামালে খুব সহজেই শান্তি ফিরে আসত। কিন্তু আপনারা সেনা নামতে দেননি। যদি প্রধানমন্ত্রী ভারতের হৃদয়ের কথাই না শুনতে চান, তাহলে কার কথা তিনি শুনবেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অন্যদিকে, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক শুরুর আগেই বিজেপির সংসদীয় দলের একটি বৈঠক হয়। সেখানে মোদি উপস্থিত সাংসদদের বলেন, আমরা শেষ বলে ছক্কা মারব। তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মোদি আরও বলেন, ইন্ডিয়া জোট যে অনাস্থা এনেছে, সেটা ওদের একটা কর্মসূচি। কিন্তু, এটাই আমাদের কাছে একটা সুযোগ, আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বিজেপি। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত ও পরিবারবাদী রাজনীতি থেকে মুক্ত করার যে স্লোগান এনডিএ নিয়েছে, তা থেকে আমরা সরব না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বিরোধীদের জোট হল পারস্পরিক অবিশ্বাসে জর্জরিত।
ইন্ডিয়া জোটকে ‘অহংকারী’ আখ্যা দিয়ে মোদি আরও বলেন, এনডিএ-র শক্তি কতটা তা গতকালই রাজ্যসভায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লি বিল পাশকে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল বলেও মন্তব্য করেন মোদি।