কলকাতা: রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ের চাকরিতে অস্বচ্ছতার অভিযোগে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার থেকেই সিবিআইকে মাঠে নামার নির্দেশ আদালতের। সন্ধ্যে ৬ টার মধ্যে মন্ত্রীকে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে বলা হল। একইসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্ত্রীকে অপসারণের সুপারিশ করেছেন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, মুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমার এই সুপারিশ। আদালত বলেছে, ৭ জুন সিবিআইকে অনুসন্ধান নিয়ে রিপোর্ট জমা করতে হবে। পরবর্তী শুনানি ৭ জুলাই।
যোগ্য প্রার্থীকে টপকে শাসকদলের প্রভাবশালী নেতার মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী চলে এলেন মেধাতালিকার এক নম্বরে। তিনি পার্সোনালিটি টেস্টেও বসেননি। শাসকদলের সেই প্রভাবশালী নেতা পরেশ অধিকারী এখন আবার শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তিনি বাম জমানায় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে তালিকার এক নম্বরে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন আগে তালিকায় এক নম্বরে থাকা প্রার্থী ববিতা বর্মন।
এই মামলারই রায় দিতে গিয়ে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। তার আগে তিনি পরেশকেও মামলায় যুক্ত করতে বলেছিলেন। আগামিকাল বুধবার এসএসসির নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চের রায় দেওয়ার কথা। তার ঠিক আগেই মন্ত্রী-কন্যার নিয়োগ দুর্নীতিতে হাইকোর্টের নজিরবিহীন রায়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য সরকার।
এদিন মামলার শুনানি চলাকালীনও এজলাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে । এজলাস থেকেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসির চেয়ারম্যান এবং সচিবকে ফোন করার নির্দেশ দেন এসএসসির আইনজীবীকে। জানতে চাওয়া হয়, মন্ত্রীর মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছেন কি না। চেয়ারম্য়ান ৫ মিনিট সময় চান। বিচারপতি জানান, তিনি অপেক্ষা করছেন। পরে চেয়ারম্যান জানান, ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট অঙ্কিতা চাকরির সুপারিশপত্র পান। তিনি সব মিলিয়ে ৬১ নম্বর পেয়েছিলেন। আবেদনকারী ববিতার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৭৭। চেয়ারম্য়ান আরও জানান, অঙ্কিতাকে পার্সোনালিটি টেস্টও দিতে হয়নি।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: স্বাস্থ্যসাথী ফেরালেই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল, কড়া বার্তা মমতার
আদালত সূত্রের খবর, মণি দাস নামে আর একজন প্রার্থীকেও বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়। এদিন আদালত অঙ্কিতাকে এবং মণিকে মামলায় সংযুক্ত করার নির্দেশ দেয়। শুনানি শেষে আদালতের মন্তব্য, এই নিয়োগের পিছনে প্রভাবশালী হাত রয়েছে। না হলে অঙ্কিতার চাকরি হয় না। মন্ত্রীর মেয়ে বলে তাঁকে পার্সোনালিটি টেস্ট দিতে হয়নি। আদালত আরও বলে, মেধাতালিকা যখন প্রকাশ হয় তখন পরেশ অধিকারী মন্ত্রী ছিলেন না। আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর মন্ত্রী কন্যার চাকরি হয়েছে। এরপরই আদালত সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। বিচারপতি বলেন, রাজ্য ও কলকাতা পুলিসের উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকে তাই সিবিআই অনুসন্ধান দরকার। অঙ্কিতার চাকরি থাকবে কি না তা ঠিক করবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। তবে এতে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।