কলকাতা: এখনও রাজ্যবাসীর মনে তাজা ২০১৮ এর পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election 2023)। ২০২৩ এর ভোট মিটে যাওয়ার পরই জেলায় জেলায় শুরু ভোট পরবর্তী হিংসা (Post Poll Violence)। ২০১৮ না ২০২৩ কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচনের রাজ্য অশান্তি বেশি ছড়িয়েছে সেই হিসেব নিকেষে ব্যস্ত শাসকদল- বিরোধী শিবির, কমিশন সব পক্ষই। কিন্তু এর মাঝেই ভোট পরবর্তী হিংসায় কোথাও পুড়ে পুলিশের গাড়ি, আবার কোথাও অপহরণ করা হল সিপিএম প্রার্থীর স্বামীকে। কোথাও শুরু হল ব্যাপক বোমাবাজি। সব মিলিয়ে দিনভর সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
শনিবার বীরভূমের রামপুরহাটে সিপিএম প্রার্থীর স্বামীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারই প্রতিবাদে জাতীয় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সিপিএম প্রার্থীর পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের। শনিবার রানীগঞ্জ মোরগ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তারা।
ভোট পরবর্তী হিংসায় মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে শুরু ব্যাপক বোমাবাজি এদিন সন্ধ্যায় ব্যাপক বোমাবাজি ভরতপুর থানার স্বরডাঙ্গা গ্রামে। বোমায় জখম হয়ে কান্দি মহকুম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর দেওর আশারুল সেখ । ঘটনায় একাধিক জন জখম হয়েছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের।
এদিন সকাল থেকেই ভোটকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল মুর্শিদাবাদে। এদিন দেখা গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Vote) শুরু থেকেই রক্তে ভিজেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) মাটি। মুর্শিদাবাদে ভোটের বলি হয়েছেন পাঁচজন। হরিহরপাড়ায় পুলিশের (Police) গাড়িতে (Car) আগুন (Fire) লাগলো উত্তেজিত জনতা। পুলিশকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ পালিয়ে যাওয়ার পর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
ভোটের পর এদিন রাতে নতুন করে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের ডোমকল, রানিনগরের বেশ কিছু এলাকা। বোমাবাজি ও গুলি চালার অভিযোগ। শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই চলে । আতঙ্কে কিছু জন ভোটাররা গ্রাম থেকে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছেন। বেশ কিছু বাড়ি-ঘর ভাঙচুর শুরু হয়েছে। দুই-পক্ষের বাড়িই ভাঙচুর হচ্ছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023 | BSF | বাহিনী নিয়ে কমিশনের ঘাড়ে দায় চাপাল বিএসএফ
অন্যদিকে দিনভরের চিত্র যদি দেখি তাহলে গণতন্ত্রের উৎসব কার্যত রক্তস্রোতে ভেসেছে। সকাল থেকেই দিকে দিকে চলল গুলি, পুকুরে ভাসছে ব্যালট, মুড়িমুড়ির মতো পড়ল বোমা।ভোট গ্রহণ শুরু পর কোথাও আবার চলল ছাপ্পা। কোথাও নিরাপত্তার অভাবে মহিলা পিরামিডের অফিসারকে বুথে বসে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা গিয়েছে। রক্তস্রোতে ভাসল মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, আলিপুরদুয়ার- সহ বেশ কয়েকটি জেলা। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র আগুন জ্বলছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধী দলগুলি সম্মিলিত শক্তিতে তাদের উপর আছড়ে পড়ছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি শাসকের বিরুদ্ধে পুলিশি মদতে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে। কয়েকটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভও দেখা গিয়েছে।সহযোগিতা করেনি কমিশন-পুলিশ, বিস্ফোরক অভিযোগ বিএসএফের। কোথায় কোথায় মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী তারও সঠিক রুটম্যাপ ছিল না। অভিযোগ বিএসএফের। কোথাও আবার দুজন সিভিক ভলান্টিয়ের দিয়ে চলছে ভোট গ্রহণ। বিকেলের সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের তরফ থেকে মন্ত্রী শশী পাজাঁ জানান, রাজ্যে ৬১ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে তার মধ্যে সব মিলিয়ে ৬০ টা বুথে ছোট বড় মাঝারি মিলিয়ে অশান্তি খবর উঠে অসেছে।
পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Vote) নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) মামলা করতে চলেছে বিজেপি। শনিবারই মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে (State Election Commissioner Rajeev Sinha) নোটিস পাঠিয়েছে বিজেপি। ভোট পর্বে ক্ষতিগ্রস্ত ভোটকর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেবে নির্বাচন কমিশন। তবে ক্ষতিপূরণের মাত্রার বিষয়ে এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর এমনটাই।