কলকাতা: ব্যাঙ্কশাল কোর্টে দীর্ঘ কয়েকঘণ্টা শুনানি চলার পর মঙ্গলবার কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। সন্ধ্যায় আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে কৌস্তুভ সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীতে অনেক মানুষই জেলে গিয়েছেন। আমিও যাচ্ছি। যব তক জেল মে চানা রহেগা, আনা যানা লাগা রহেগা। এইটুকু বলেই তিনি প্রিজন ভ্যানে উঠে পড়েন। এর আগে এদিন সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। আদালতে ঢোকার সময় তাঁর চোখে মুখে কোনও বিকার দেখা যায়নি। এদিনও তিনি বলেন, আমার শিরদাঁড়া বিক্রি নেই। খেলা হবে। ইন্ডিয়া জিতবে।
গত ১৮ জুলাই মাঝরাতে ইডি গ্রেফতার করে কলকাতা টিভির সম্পাদককে। পরের দিন আদালতের হাজির করানোর সময়ই তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, মিথ্যে মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আদালত তাঁকে দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ ছিল একদিন অন্তর কৌস্তুভের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সেই নির্দেশ মতোই এদিন অন্তর জোকা ইএসআই হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। হাসপাতালে যাতায়াতের পথে তিনি একাধিকবার বলেন, মিথ্যে মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। কোনও জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে না। মিথ্যে মামলায় আবার জিজ্ঞাসাবাদ হয় নাকি? তাঁকে বলতে শোনা যায়, ভয়ঙ্কর খেলা হবে, ইন্ডিয়া জিতবে, এনডিএ (ন্যাশনাল ডেস্ট্রাক্টিভ অ্যালায়েন্স) হারবে। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, কলকাতা টিভির কণ্ঠরোধ করার জন্যই নানাভাবে তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও রক্ত দেওয়া হল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে
এর আগে একাধিকবার কলকাতা টিভির দফতর এবং তার বিভিন্ন অফিসে কখনও ইডি, কখনও সিবিআই, আবার কখনও আয়কর হানা হয়েছে। গত বছরের ১৬ আগস্ট মাসে প্রায় ৮০ ঘণ্টা আয়কর দফতরের তল্লাশি চলে কলকাতা টিভির বিভিন্ন অফিসে। সম্পাদক কৌস্তুভের বাড়িতে পর্যন্ত হানা দেয় আয়কর দফতর। সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। সম্পাদকের বৃদ্ধ বাবা মাকে পর্যন্ত হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। কলকাতা টিভির কর্মচারীরাও রেহাই পাননি। তাঁদের মোবাইল জমা রেখে অফিসে কাজ করতে হয়েছে। এমনকী সম্প্রচার কক্ষে গিয়েও খবরের উপর নজরদারি চালানো হয়েছে। তারও আগে নিরাপত্তা অজুহাত দেখিয়ে কলকাতা টিভির সম্প্রচার বন্ধের ফতোয়া জারি করেছিল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। তা নিয়ে মামলাও করা হয় কলকাতা টিভির তরফে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলকাতা টিভির সম্প্রচার বন্ধ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তখনও কলকাতা টিভির কণ্ঠরোধ করার জন্য এইসব পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। মঙ্গলবার জেলে যাওয়ার পথেও কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায় বুঝিয়ে দেন, এসব করে কোনও লাভ হবে না তাঁর এবং কলকাতা টিভির কণ্ঠরোধ করা যাবে না।