কলকাতা: পৃথিবী (Earth) গোলাকার, তার তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। মহাকাশ থেকে দেখলে তার সৌন্দর্য অনিবর্চনীয়। এসব আমরা এখন উপগ্রহ চিত্রের (Satellite Image) মাধ্যমে হামেশাই দেখতে পাই। একটা সময় ছিল, যখন না ছিল কৃত্রিম উপগ্রহ আর না ছিল পৃথিবীর বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখতে পাওয়ার ব্যবস্থা। আজকের দিনটা সেই জন্যই স্পেশ্যাল।
১৯৬১ সালের এই ১২ এপ্রিল প্রথম মনুষ্য প্রজাতির প্রতিনিধি মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখতে পান। তিনি ইউরি গ্যাগারিন (Yuri Gagarin), মহাকাশে পাড়ি দেওয়া প্রথম মানুষ, পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাব কাটিয়ে মহাশূন্যে যাওয়া প্রথম মানুষ। ভস্তক ১ (Vostok 1) মহাকাশযানে চেপে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০২ কিলোমিটার উপরে উঠে গিয়েছিলেন গ্যাগারিন। সেই দূরত্বে থেকে ১৮,০০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় আমাদের গ্রহকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন তিনি। একবার প্রদক্ষিণে সময় লেগেছিল ১০৮ মিনিট।
মহাকাশ গবেষণায় এই ঘটনা এক অন্যতম মাইলস্টোন। নিল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong), এডুইন ‘বাজ’ অলড্রিন (Edwin Aldrine) প্রথম চাঁদের মাটিতে পা দিয়েছিলেন। তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় ইউরি গ্যাগারিনের কীর্তি। প্রথমবার মহাকাশে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আজ সমস্ত কিছু।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর এই প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন কলকাতা শহরে দু’বার ভ্রমণ করে গিয়েছিলেন। একবার তিনি এসেছিলেন প্রথম মহিলা মহাকাশচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভার সঙ্গে।
প্রথমবার মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে অবর্ণনীয়। বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ গ্যাগারিন কী বলেছিলেন জানেন? আমি বারবার খুঁজেছি, কিন্তু ঈশ্বরকে দেখতে পাইনি। আমি পৃথিবীকে দেখতে পেয়েছি, সে যে কী সুন্দর। মহাকাশযানে চেপে প্রদক্ষিণ করার সময় আমি দেখেছি, কতটা সুন্দর আমাদের গ্রহ। এই সৌন্দর্যকে বাঁচিয়ে রাখা যাক, বাড়িয়ে তোলা যাক। যেন ধ্বংস না করা হয়।
আরও পড়ুন: Japan | OpenAI | জাপানে অফিস খোলার দিকে নজর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অল্টম্যানের
১৯৩৪ সালের ৯ মার্চ মস্কো থেকে ১০০ কিমি দূরে ক্লুশিনো (Klushino) নামে এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম ইউরি আলেক্সেইভিচ গ্যাগারিনের। তাঁর বাবা নানা ধরনের কাজ করতেন, ছুতোরের কাজ, রাজমিস্ত্রীর কাজ এবং চাষের কাজও। মা ডেয়ারির কাজ করতেন। তাঁদের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় গ্যাগারিন। ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War 2) বাঁধল। নাৎসি বাহিনী কেড়ে নিয়ে গেল তাঁর দুই বোনকে, পরিবারকে ঘর থেকে দূর করে দিল।
এত দুঃখকষ্ট সহ্য করেও পড়াশোনা ছাড়েননি গ্যাগারিন। তাঁর প্রিয় সাবজেক্ট ছিল অঙ্ক। অঙ্ক এবং পদার্থবিদ্যা নিয়ে সেকেন্ডারি স্কুলের সিক্সথ গ্রেড পার করলেন তিনি। এরপর এক স্টিল প্ল্যান্টে কাজ নেন। কিন্তু নিয়তি তাঁকে পৃথিবীর ইতিহাসে অমর করবে বলে স্থির করে রেখেছিল। ছোট থেকেই এয়ারক্রাফট নিয়ে আগ্রহ ছিল গ্যাগারিনের। ১৯৫৫ সালে বায়ুসেনায় যোগ দেন। এক বছরের মধ্যে মিগ-১৫ যুদ্ধবিমান ওড়ানো শুরু করেন। তার এক বছরের মধ্যেই সোভিয়েত বায়ুসেনায় লেফটেন্যান্ট পদে উত্তীর্ণ হন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ভস্তক প্রোগ্রামে ঢুকে পড়েন, বাকিটা ইতিহাস।
চিরকাল আকাশে, মহাকাশে উড়ে বেড়ানো ইউরি গ্যাগারিনের মৃত্যুও হল এরোপ্লেন চালাতে গিয়েই। ১৯৬৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চেকালোভস্কি এয়ারবেস থেকে রুটিন ফ্লাইটে বেরিয়েছিলেন গ্যাগারিন। সঙ্গে ছিলেন ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর ভ্লাদিমির সেরিয়োগিন। কিরঝাখ শহরের কাছে ভেঙে পড়ে তাঁদের বিমান। মৃত্যু হয় দু’জনেরই। তাঁর দেহ কবর দেওয়া ক্রেমলিন ওয়ালে, যেখানে শায়িত রয়েছে বিশ্বযুদ্ধের বহু শহীদ নায়কের দেহ। সম্মান জানিয়ে তাঁর নামে নামাঙ্কিত হয়েছে চাঁদের একটি জ্বালামুখের (Crater) নাম।