কলকাতা: প্রয়াত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ (Budhhadeb Guha) সম্পর্কে একটি নতুন তথ্য দিলেন তথাগত রায় (Tathagata Roy)৷ রবিবার গভীর রাতে লেখকের প্রয়াণের পর সোমবার সকালে একটি টুইট করেন মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল। সেখানে তিনি দাবি করেন, বুদ্ধদেব গুহ বিজেপির ম্যানিফেস্টো লিখেছিলেন৷ গোটা টুইটের ওই অংশ নিয়েই শোরগোল পড়ে গিয়েছে সাহিত্য মহলে৷ ভ্রু কুঁচকেছেন পাঠকরা৷ প্রশ্ন উঠছে, তবে কি প্রয়াত সাহিত্যিক বিজেপি মনোভাবাপন্ন ছিলেন? কী বলছে রাজনৈতিক মহল? আর কী বা বলছে ‘ঋজুদার স্রষ্টা’র ঘনিষ্ঠ মহল?
একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি বাংলার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সমর্থন কোনও নতুন ব্যাপার নয়৷ বাম আমলে বহু বুদ্ধিজীবী শাসক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন৷ কেউ কেউ খোলাখুলি নিজেকে বামপন্থী বলেও জাহির করতেন৷ তবে শাসক দলের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের মাখো-মাখো সম্পর্ক গড়ে ওঠে তৃণমূল জমানায়৷ এ দিক থেকে ব্যতিক্রমী ছিলেন বুদ্ধদেব গুহ৷ তিনি বামপন্থী ছিলেন না৷ তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার কথাও জানা যায় না৷ তবে তথাগত রায়ের টুইটের পর প্রয়াত সাহিত্যিকের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, তাঁর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল কিনা জানা নেই৷ তিনি সক্রিয় রাজনীতি এড়িয়ে চলতেন৷ লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন৷ তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ জানিয়েছে, বুদ্ধদেব গুহ দীর্ঘদিন সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷
ঋতুদি কিছুদিন আগে গেছেন। এবার লালাদা গেলেন। যেখানেই যান, সম্ভব হলে লেখায়, আড্ডায়, গানে সকলকে মাতিয়ে রাখুন।
ওঁ শান্তি।— Tathagata Roy (@tathagata2) August 30, 2021
বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণের খবর পেয়ে আজ সকালে টুইট করেন তথাগত রায়৷ আবেগতাড়িত হয়ে লেখেন, ‘আমাদের প্রিয় লালাদা, বুদ্ধদেব গুহ প্রয়াত হলেন৷ সদাহাস্যময়, আড্ডাবাজ এই লোকটির সান্নিধ্য আর পাওয়া যাবে না৷ তাঁর সাহিত্যকীর্তির পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিত্বের স্বাদ আমরা যারা পেয়েছি কখনো ভুলতে পারব না৷ ওঁর আর একটা পরিচয়৷ উনি আর আমি মিলে একাধিকবার বিজেপির ম্যানিফেস্টো তৈরী করেছি৷’ আরেকটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘ঋতুদি কিছুদিন আগে গেছেন৷ এবার লালাদা গেলেন৷ যেখানেই যান, সম্ভব হলে লেখায়, আড্ডায়, গানে সকলকে মাতিয়ে রাখুন৷’
আরও পড়ুন: বুদ্ধদেব গুহ’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর
পাঠক মহল এটা জানার পর থেকে দ্বিধাভক্ত৷ তাদের একাংশ বলছে, উনি বিজেপি মনোভাবাপন্ন ছিলেন কিনা সেটা উনার চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারবে না৷ তাছাড়া কোনও একটি রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো লিখলে তিনি ওই দলের সমর্থক এমনটা ভাবাও যুক্তিযুক্ত নয়৷ উনি একজন লেখক৷ পেশাগত কারণে কোনও দলের ম্যানিফেস্টো লিখতেই পারেন৷ এ নিয়ে আলোচনা অহেতুক এবং নিরর্থক৷ আবার আরেক অংশের মতে, উনি যদি আরএসএস মনোভাবাপন্ন হন তাহলে ক্ষতি কীসের? গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে৷ কে কোন আদর্শে বিশ্বাসী সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়৷ তাছাড়া শিল্পী মানুষদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় হয় না৷
রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলকাতার এক নার্সিংহোমের মারা যান বিশিষ্ট বাংলা সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ। তিনি পেশাগত জীবনে ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। বেশ কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছিলেন তার স্ত্রী বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ। বুদ্ধদেববাবুর গানের গলাও ছিল সকলকে চমকে দেবার মত। বিভিন্ন সাহিত্য আসরে তাঁকে দেখা গিয়েছে খালি গলায় রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করতে। তিনি প্রকৃতি প্রেমিক লেখক শুধু ছিলেন না। শিকার, বেড়ানো আর প্রেম ছিল তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। যা দিয়ে তিনি আপামর বাঙালি পাঠককে বুঁদ করে রেখেছিলেন। তিনি ভারতবর্ষসহ সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন লেখার রসদ জোগাড় করতে। যা সব সময় মুক্ত করে রেখেছিল বাঙালি পাঠককে। তাঁর লেখা ‘মাধুকরী’ বাংলা সাহিত্য জগতে এক মাইলফলক বলা যেতে পারে। তাঁর পাঠকপ্রিয় অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কোয়েলের কাছে”, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘বাতিঘর”,উষ্ণতার জন্য’, ‘বাবলি’, ‘চানঘরে কান্না’। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় চরিত্র ‘ঋজুদা’র স্রষ্টা। তিনি পেয়েছিলেন আনন্দ, শিরোমনি ও শরৎ পুরস্কার।