অস্তিত্বের সংকটে বিজেপির তথাকথিত ‘চাণক্য’-রা৷ দিল্লির কন্ট্রোল রুমের অতি চালাকিতে লাইনচ্যুত বিহারের ডবল ইঞ্জিন৷ নীতীশ কুমারকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে সেই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না মোদি-শাহ৷ পাটলিপুত্র-পলিটিক্স বুঝিয়ে দিল, রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি কখনই শেষ কথা বলে না৷ সঠিক নেতৃত্ব, রাজনৈতিক বুদ্ধি এবং তার প্রয়োগ প্রক্রিয়াকে পিছনের বেঞ্চে পাঠালে প্রতিক্রিয়া এমনই হয়৷
নিজেদের চরমতম ব্যর্থতা ঢাকতে দেশজুড়ে এজেন্সি-রাজ কায়েম করেছেন মোদি-শাহ৷ সঙ্গত বিরোধিতার টুঁটি চেপে ধরতে কেন্দ্রের শাসক দল বিরোধী শিবিরের দিকে নির্বিচারে লেলিয়ে দিয়েছে সিবিআই-ইডি-কে৷ দলীয় সংগঠন, দলের ভাবমূর্তি, নেতৃত্বের সফলতাকে সামনে রেখে নয়, ‘বিরোধীমুক্ত ভারত’ গড়তে মোদি- শাহের হাতিয়ার সিবিআই, ইডি-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সি৷ এজেন্সি দিয়ে হেলায় সব জয় করার গেরুয়া ছক বড়সড় ধাক্কা খেল বিহারে৷ বিহারের পালাবদলে শুধুই যে সেই রাজ্যে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে, এমন নয়৷ জোট ভাঙার প্রভাব পড়েছে রাজ্যসভাতেও। কমে গিয়েছে এনডিএ-র আসনসংখ্যা। এর ফলে রাজ্যসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করার জন্য বিজেপিকে এখন বিজু জনতা দল এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের উপরই নির্ভর করতে হবে৷ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পাটলিপুত্রে যে ভূমিধস শুরু হয়েছে, তা ধরতেই পারেনি বিজেপি৷ ক্ষুরধার বুদ্ধিতে পাশা উল্টে দিয়েছেন নীতীশ কুমার৷ পিছনে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়েছিলেন আরজেডি’র তেজস্বী যাদব৷ ওদিকে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিজেপি নিজেদের পতন সেইদিনই ডেকে এনেছে, যেদিন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদিকে মন্ত্রিসভার বাইরে পাঠিয়ে দেয় গেরুয়া নেতৃত্ব৷ নীতীশের সঙ্গে সুশীলের সুসম্পর্ক সুবিদিত। সুশীল মোদিকে না সরালে বিজেপির ঘাড়ে এই কোপ নেমে আসত না৷ অতীতে বিজেপি- নীতীশ অনেক মতবিরোধ সুশীল মোদি একাই সামলেছিলেন৷ অমিত শাহের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই এবার ডুবিয়েছে বিজেপিকে৷
কিন্তু এই চপেটাঘাত কি হজম করে নেবেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ ? বিজেপির নিজস্ব যে সংস্কৃতির ছবি এতদিন প্রকাশ্যে এসেছে, তা বলছে, এই পরাজয় মেনে নেওয়ার বান্দা মোদি-শাহ নন৷ সামনের দরজা দিয়ে ঢুকতে না পারলে পিছনের পাঁচিল টপকে ঘরে ঢুকতে সিদ্ধহস্ত বিজেপি৷
কর্ণাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে এই ‘ব্যাক-ডোর পলিটিক্স’-এর নিদর্শন রেখেছে গেরুয়া শিবির৷ কখনও হাওয়া ভরেছে একনাথ শিন্ডেদের, কখনও সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে৷ সেক্ষেত্রে বিহারের ভবিষ্যৎ কী ? ধরেই নেওয়া যায়, কিছুদিনের মধ্যেই একাধিক খাঁড়া ঝুলিয়ে দেওয়া হবে নীতীশ-তেজস্বীদের ঘাড়ে৷ পাশাপাশি, কোটি কোটি টাকার টোপ দেওয়া হতে পারে শাসক ৭ দলের জোটের বিধায়কদের৷ আসনের তফাত বিশাল হলেও সিবিআই, ইডি অথবা এনআইএ-কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে জোট ভাঙানোর চেষ্টা হবেই৷ ইউএপিএ বা পিএমএলএ আইন প্রয়োগ করা হতে পারে৷ পিএমএলএ আইনে মামলা হলে জামিন পাওয়া কঠিন৷ এর কারণ, অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হয়, তিনি নির্দোষ৷ এটা প্রমাণ করা সহজ নয়, সময়সাপেক্ষও বটে৷ এই আইনে ধৃতদের অনেক বেশিদিন কারান্তরালে থাকতে হয়৷ কর্ণাটকে ডি শিবকুমার, মহারাষ্ট্রে সঞ্জয় রাউতদের ক্ষেত্রে এমনই হয়েছে৷
ওদিকে আরজেডি’র ১৮ বিধায়কের বিরুদ্ধে বিধানসভায় অভব্য আচরণ করার অভিযোগ স্পিকারের কাছে বিচারাধীন৷ তাদের সদস্যপদ খারিজের দাবিতে আইনি পথে হাঁটতে পারে বিজেপি৷ এ ছাড়াও অর্থনৈতিক- অবরোধের হাতিয়ার তো বিজেপির হাতে আছেই৷
বিহারে নীতীশের নতুন সরকারকে আগামীদিনে অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করতেই হবে, অঙ্ক কষেই এ কাজ করবেন মোদি-শাহ৷
কণাদ দাশগুপ্ত