কলকাতা: বাংলার সুরের জগতে ফের ইন্দ্রপতন৷ প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্র৷ শনিবার গভীররাতে দক্ষিণ কলকাতার চেতলার বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮১ বছর৷ তাঁর প্রয়াণে শোকাহত বাংলার শিল্পজগত৷ শোকপ্রকাশ করেছেন শিল্পীরা৷ আজ রবিবার ক্যাঁওড়াতলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে৷ এদিন সকাল ১০টা নাগাদ নির্মলার মরদেহ রবীন্দ্রসদন নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে শেষশ্রদ্ধা জানাবেন তাঁর অনুরাগীরা৷
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন নির্মলা৷ ২০১৫ সালে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়৷ তারপর থেকেই শয্যাশায়ী৷ শিল্পীর পরিবার জানিয়েছে, এর আগে তিনবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন৷ তবে সম্প্রতি অসুস্থতা বাড়ে৷ বৃহস্পতিবার তাঁর রক্তচাপ বেশ খানিকটা কমে যায়৷ শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট৷ গভীররাতে জীবনাবসান৷
নির্মলার বিখ্যাত গানগুলির একটি, ‘এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না’৷ এই গান শোনেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ এই সময় একসময় রাজত্ব করেছে শ্রোতাদের মনে৷ সঙ্গীতকার ও সুরকার প্রবীর মজুমদারের ‘ও তোতাপাখি, শিকল খুলে উড়িয়ে দেব মাকে যদি এনে দাও’ গানটি নির্মলার কণ্ঠে মাধুর্য পায়৷ এছাড়া ‘আমি তো তোমার চিরদিনই হাসি-কান্নার সাথী’, ‘তোমার আকাশ দুটি চোখে হয়ে গেছি তারা’, ‘কাগজের ফুল বলে’, ‘সবুজ পাহাড় ডাকে’, ‘ওরা ঘুমায় আবার জাগে’ গানগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়৷
ব্রিটিশ ভারতের মজিলপুরে তাঁর জন্ম ১৯৩৮ সালে৷ বাবার নাম পণ্ডিত মোহিনীমোহন মিশ্র, মায়ের নাম ভবানী দেবী৷ বাবার কর্মসূত্রে তাঁরা কলকাতার চেতলায় এসে বসবাস শুরু করেন৷ তাঁর বাবা এবং ভাই মোরারিমোহন মিশ্র দু’জনেই তৎকালের বিখ্যাত গায়ক ছিলেন৷
ওড়িয়া ছবিতে নির্মলা তাঁর সঙ্গীতজীবন শুরু করেন৷ এরপর বেশ কিছু ওড়িয়া ছবিতে একের পর এক ছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে গান গেয়ে বিখ্যাত হন তিনি৷ ১৯৭৬ সালে উত্তমকুমার, শ্যামল গুপ্ত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের তৈরি মহালয়া রেডিয়ো গীতিনাট্যে তিনি গান করেছিলেন৷ এছাড়াও শ্রীরাধার মানভঞ্জন, রামী চণ্ডিদাস ইত্যাদি গীতিনাট্যতেও তাঁর অবদান বাঙালি মনে রাখবে৷ এছাড়াও নজরুল গীতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, শ্যামা সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান এবং লোক সঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি৷ নির্মলা কাজ করেছেন মান্না দে, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীর সঙ্গে৷