নয়াদিল্লি: জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দেশে ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস পর বৃহস্পতিবার ১০০ কোটি করোনা টিকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে ভারত। আর তার পর থেকেই দেশজুড়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। মোদি স্বয়ং গোটা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ উৎফুল্ল। দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন শুক্রবার। বলেছেন, কঠিন লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তা পূরণ করার ক্ষমতা রাখে ‘নতুন ভারত’।
একশো কোটির আদিখ্যেতার মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে অনেক বিষয়। আর একটু পরিষ্কার করে বলতে গেলে, কিছু ‘ভুল-ভ্রান্তি’ চাপা দেওয়ার জন্যই হয়তো পরিকল্পিতভাবে ১০০ কোটি ভ্যাকসিন নিয়ে মাতামাতি করছেন গেরুয়া শিবিরের ছোট-বড় নেতারা। জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদিও এড়িয়ে গিয়েছেন সেগুলি। সমস্ত কিছু ছাপিয়ে এখন প্রধান হয়েছে বিনামূল্যে ১০০ কোটি টিকার প্রচার।
আরও পড়ুন: ভারতের টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে গোটা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে: মোদি
জানুয়ারি মাসে দেশে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। আর এটা নভেম্বর। দীর্ঘ ৯ মাসে দেশের জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন। এক ডোজ টিকা মিলেছে ৭১ কোটি মানুষের, দুই ডোজ টিকা পেয়েছে ২৯ কোটি মানুষ। অর্থাৎ ৩২ কোটি মানুষ এক ডোজও টিকা পায়নি। প্রায় ৪২ কোটি মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া বাকি। এই সমস্ত প্রসঙ্গ দূরে সরিয়ে মাতামাতি হচ্ছে ১০০ কোটি ভ্যাকসিন নিয়ে।
করোনার জেরে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারাটা। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেনের হাহাকার, চিকিৎসকদের অপ্রতুলতা, হাসপাতালে বেডের সংকট- সবকিছুই যেন ভুলিয়ে দিয়ে চাওয়া হচ্ছে! কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এ পর্যন্ত দুটি ডোজ পেয়েছেন ২৯ কোটি মানুষ। এখনও বাকি ৬৫ কোটি।
আরও পড়ুন: একশো কোটির আদিখ্যেতা
নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন ১ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দিতে হবে। অথচ, টিকাকরণ শুরুর দিন থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৩৬ লক্ষ টিকাকরণ হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। এর সঙ্গে টিকার অপ্রতুলতা তো রয়েছেই। রাজ্যগুলি বার বার এই বিষয়ে সরব হয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কোভ্যাকসিন পেয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ।
বাকিদের প্রায় সকললেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড দেওয়া হয়েছে। কোথায় গেল আত্মনির্ভর ভ্যাকসিন? করোনাকালে সংক্রমণ-মৃত্যুর চিত্রও ভয়াবহ। এ পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ, মৃত্যু হয়েছে সাড়ে চার লক্ষ মানুষের। মোট সংক্রমণে ভারতের সামনে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কোভিডে মৃত্যুতে আমেরিকা-ব্রাজিলের পরই রয়েছে ভারত। তবে জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন এই সমস্ত বিষয়। দেশজুড়ে চলছে মাতামাতি!
আরও পড়ুন: নয়া রেকর্ড, মাত্র ১৭ দিনে এক কোটি ভ্যাকসিন দিল রাজ্য সরকার