মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট–৫ বাংলাদেশ আর্মি–০
(লিস্টন, মনবীর, মেহেদি হাসান (নিজ গোল) হামতে, কিয়ান)
ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচেই ফাইভ স্টার মোহনবাগান। সামনে ছিল বাংলাদেশ আর্মি। নামেই বিদেশি দল। কিন্তু সেনা দলটির রাইফেলে কোনও গুলি নেই। এই রকম একটা দলের বিরুদ্ধে মোহনবাগান খেলল বিদেশি ছাড়াই। কলকাতা লিগে যে দলটি খেলছে তার সঙ্গে সিনিয়র টিমের কয়েকজনকে নিয়ে টিম সাজিয়েছিলেন কোচ বাস্তব রায়। তাঁর ভাবনার মধ্যে বাস্তবতার ছোঁয়া ছিল। তাই ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রথম গোল করে শেষ পর্যন্ত পাঁচ গোলে জিতল বাগান। তবে বিরতির আগেই তিন গোল খাওয়া বাংলাদেশ আর্মি দ্বিতীয়ার্দ্ধটা খেলল দশ জনে। বিরতির ঠিক আগে লিস্টন কোলাসোকে পিছন থেকে ল্যাং মারলেন মিজানুর। হাগেই তাঁর একটা হলুদ কার্ড দেখা ছিল। এবার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড এবং লাল কার্ড।
আই এস এল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এবার সত্যিই সুপার জায়ান্ট। দেশ বিদেশের সেরা প্লেয়াদের নিয়ে দল গড়েছেন কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তার লক্ষ্য আবার আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং এ এফ সি কাপে সেরা হওয়া। সেজন্য কলকাতা লিগ এবং ডুরান্ড কাপ তাঁর কাছে খেলতে হয় বলে খেলা। কিন্তু টিমটার নাম যখন মোহনবাগান তখন সমর্থকরা জয় ছাড়া কিছু ভাবতে পারেন না। বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর টিম যখন মাঠে নামল তখন গ্যালারির একটা অংশ গর্জে উঠল। এই গর্জন ছিল শেষ পর্যন্ত। বাংলাদেশ আর্মি ভারতে আসার আগে তাদের দেশের মহমেডান স্পোর্টং থেকে সাত-আট জন প্লেয়ার ধার করে নিয়ে এসেছে। এই ঢাকা মহমডান আবার তাদের দেশের ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন। তাই তাদের কাছ থেকে আরও একটু লড়াই আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও পা্ওয়া গেল না। মোহনবাগান খেলল রাজার মতো। তাদের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল ডিয়ার পার্কে যেন এক ঝাঁক নেকড়ে ঢুকে পড়েছে। এতটাই পার্থক্য ছিল দু দলের যে গোটা ম্যাচে বাগান গোলকিপার আর্শ আনোয়ারকে কোনও কঠিন বল ধরতে হল না। নিশ্চিন্তেই প্রথম ম্যাচটা খেললেন বাগানের তরুণ গোলকিপার।
লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিংকে বাদ দিলে বাগানের বাক নয়জন ছিলেন নেহাতই নতুন। এদের মধ্যে ছিলেন কলকাতা লিগে খেলা কাশ্মিরী ফুটবলার সুহেল ভাটও। ঘণ্টা খানেক পরে নামেন কিয়ান নাসিরি। শুরু থেকেই ছিলেন মিডফিল্ডার অভিষেক, টাইসন এবং হামতে। মাঝ মাঠের এই তিন জনের সঙ্গে সামনের দিকের তিনজন অর্থাৎ মনবীর, লিস্টন এবং সুহেল মিলে শুরু থেকেই বাংলাদেশ আর্মিকে বেহাল করে দেন। প্রথম গোল ১৫ মিনিটে। ডান দিক থেকে রানার সেন্টার বাংলাদেশ গোলকিপার আসরাফুল রানা আংশিক ক্লিয়ার করলে বল যায় একদম ফাঁকায় থাকা লিস্টনের পায়ে। গোল লাইন থেকে দু গজ দূরে থাকা লিস্টন গোল করতে ভুল করেননি। ২৯ মিনিটে পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। অভিষেককে বক্সের মধ্যে ফাউল করা হয়। পেনাল্টি থেকে গোল করেন মনবীর।
বাগানের তৃতীয় গোলটি বিরতির পাঁচ মিনিট আগে। ডান দিক থেকে লিস্টনের ক্রসকে তাড়া করে গোলের দিকে এগোলেন সুহেল ভাট। বল লক্ষ্য করে এগিয়ে এসেছেন আসরাফুলও। কিন্তু ডিফেন্ডার মেহেদি হাসান বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলে ঢুকিয়ে দিলেন। বিরতির পর দশজনে হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের দলটি আরও নুয়ে পড়ে। কিন্তু মোহনবাগান সেভাবে সুযোগটা নিতে পারেনি। ৫৮ মিনিটে বক্সের মধ্যে মনবীরের ব্যাক হিল করা বল পেয়ে দু গজের মধ্য থেকে গোল করে যান হামতে। একটু পরেই নামলেন কিয়ান নাসিরি। তবে গোল পেলেন ৮৯ মিনিটে। লিস্টন কোলাসোর শট আসরাফুলের বুকে লেগে বেরিয়ে এলে রিবাউন্ড থেকে গোল করলেন জামশিদ নাসিরির ছেলে। সব মিলিয়ে ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচটা বেশ ভালয় ভালয় উতরে গেল মোহনবাগান। এই গ্রুপে আছে ইস্ট বেঙ্গল এবং রাউন্ড গ্লাস পাঞ্জাব। সেই দুটো ম্যাচে হবে মনবীরদের আসল পরীক্ষা।