কলকাতা: মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের তৃতীয় বৈঠকের মাত্র ১০ দিন আগে ফের একবার বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসকে এক তিরে বিঁধলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও কেন্দ্রীয় স্তরে তিনি ইন্ডিয়ার পক্ষে বলে এদিনও জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য বিজেপি হটাও, ইন্ডিয়া বাঁচাও। ইন্ডিয়া সে মওত কা সওদাগর ভাগো।
ইমাম-মোয়াজ্জেমদের সম্মলনে সোমবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ভাষণের শুরু থেকেই ধর্মীয় বিভাজন নিয়ে বিজেপিকে তাক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরাজ্যে সিএএ-এনআরসি হবে না বলে আশ্বাস দিয়ে মমতা বলেন, বিজেপি টাকা ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভাগাভাগির রাজনীতি করছে। যদিও আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকির নামোচ্চারণ করেননি তিনি। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে উৎখাত করতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ইন্ডিয়ার দুই শরিককে এদিন রেয়াত করেননি তৃণমূল নেত্রী। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এই তিন দল গাঁটছড়া বেঁধে বোর্ড গঠন করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলায় কোনও দিন এনআরসি করতে দেব না: মমতা
প্রত্যক্ষভাবে বারবার মমতার নিশানায় সিপিএম-কংগ্রেস চলে আসায় সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় চওড়া হচ্ছে। যদিও এর আগে কংগ্রেস এবং সিপিএমের তরফে এমনকী মমতাও বিজেপিকে হটাতে কেন্দ্রীয় জোটের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। আঞ্চলিক সমস্যা ও মতানৈক্যকে দূরে সরিয়ে রেখে ইন্ডিয়ার সাফল্য নিয়ে শরিকরা সকলেই সহমত পোষণ করেছেন।
এদিন মমতা বলেন, সিপিএমের লোকগুলোর লজ্জা নেই। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস একসঙ্গে রাজনীতি করে। একসঙ্গে বোর্ড গঠন করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের কিছু সোর্স থাকে। আমাকে কোনও পুলিশ বলেনি। তবে কিছু ঘটলে ওরা কয়েকজনকে ধরে এনে দেখিয়ে দেয়, ওদের কিছু করার থাকে না। বিজেপি কী করে জানেন, সিপিএমকে কাজে লাগানো, বাংলায় কংগ্রেসকে কাজে লাগানো। আর আপনাদের সম্প্রদায়ের কিছু ছেলেমেয়ে, সবাই নয়, ফুরফুরা শরিফকে আমি সম্মান করি। আমি মনে করি, রাজনীতির মধ্যে ফুরফুরা শরিফের ঢোকা উচিত নয়। বেলুড় মঠ রাজনীতি মধ্যে প্রবেশ করুক, আমরা চাই না।
বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত প্রসঙ্গে সিপিএমকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, আপনারা দেখেছেন কত চক্রান্ত করেছিল ওরা। সারদাকে নিয়ে এসেছিল ওরা। ওদের বিরুদ্ধে একটাও কেস দেখতে পাচ্ছেন? কারণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং, পুরো আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে রেখে দিয়েছে। আর তৃণমূলের ছেলেপিলেদের ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখাচ্ছে। কাউকে এনআইএ-র। যত কিছু মাথাব্যথা তৃণমূলকে নিয়ে, কারণ ওরা জানে তৃণমূল একমাত্র সংগঠন, যারা ওদের রেয়াত করে না। যারা ওদের কেয়ার করে না।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গেও সিপিএমকে কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কী অবস্থা, এত অত্যাচার করেও বদলায়নি। এত রক্ত নিয়েও বদলায়নি। এরা জীবনে কোনওদিন বদলাবে না, জেনে রাখবেন। ইমাম-মোয়াজ্জেমদের বিজেপির প্ররোচনায় পা না দিতে সাবধান করে দিয়ে বলেন, কেউ গেরুয়া উড়িয়ে দিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করতে পারে। এটা বিজেপি ছাড়া কেউ করবে না। আর সিপিএম-কংগ্রেস তো বিজেপির সঙ্গেই আছে।
তারপরেই মমতা উচ্চকণ্ঠে দাবি করেন, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আমি ইন্ডিয়ার সঙ্গে আছি। এই বিজেপির সরকার আর ৬ মাসও থাকবে না। তারপর মোদিজি থাকবে না। মোদিজিকে হারানোর জন্য যা যা করার আমরা করব। ওদের টার্গেট আমি। কেন জানেন তো, ওরা চাইছে এখানে ভোটটা ভাগ করে দিয়ে এখান থেকে আসনগুলো নিয়ে নেওয়া। ইকবালের শায়েরি উল্লেখ করে লোকসভা ভোটের আগে পরোক্ষে সংখ্যালঘুদের সমর্থন চেয়ে নেন মমতা। তাঁর ভাষায়, দেখবেন দুঃখ যেন পেতে না হয়।