কলকাতা: মণিপুরের নারকীয় ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপিকে সন্ত্রাসের সওদাগর বলে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ( Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলায় তৃণমূলের শহীদ দিবসের সভাস্থল পরিদর্শন করতে যান মমতা। সঙ্গে ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস সহ তৃণমূলের তাবড় শীর্ষ নেতারা। পরে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মণিপুরের যে ভিডিও আমাদের সামনে এসেছে, তা এক কথায় ভয়ানয়। সেটা দেখে ভাবছি, এ কোন দেশ? এটা আমাদের লজ্জা। এর নিন্দা করার ভাষা নেই। তাঁর প্রস্তাব, নবগঠিত বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিদল অবিলম্বে মণিপুর সফর করুক। তিনি বলেন, যদি অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’র সব শরিক তাতে রাজি থাকে। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ওই নারকীয় দৃশ্য দেখে আমাদের হৃদয় কাঁদছে। এ কোন দেশ? এই ঘটনা সারা দেশের লজ্জা।
দীর্ঘ প্রায় ৮০ দিনেরও বেশি সময় ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে এত দিন প্রধানমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। তা নিয়ে কংগ্রেস সহ তাবড় বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে ছাড়েনি। বৃহস্পতিবারই প্রথমবার মণিপুর নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বাইরে তিনি বলেন, মণিপুরের ঘটনায় দেশ ও জাতির মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে লজ্জায়। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। বিরোধীদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে সংসদে বিবৃতী দিতে হবে। এই ইস্যুতে সংসদের অধিবেশনের প্রথম দিনই বিরোধীরা হইহট্টগোল করেন। ফলে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। আবার এদিনই দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মণিপুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ওই রাজ্যে যা হচ্ছে, তা সাংবিধানিক পরিকাঠামোকে আঘাত দিচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষে তা খুবই ভয়ঙ্কর।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | এই অমানবিক অত্য়াচারের প্রতিবাদে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, মণিপুর নিয়ে ক্ষোভ মমতার
এদিন মমতা ধর্মতলায় শহীদ দিবসের সভাস্থল পরিদর্শনের আগে মণিপুরে মহিলাদের বিবস্ত্র করে হাঁটানো এবং গণধর্ষণের ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে টুইটও করেন। তাতে তিনি লেখেন, ওই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে ক্রোধে আমার গা জ্বলছে। এই রাজ্যের মহিলার উপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা দেখে দুঃখপ্রকাশ করার করার কোনও ভাষা পাচ্ছি না। বর্বরোচিত এই কাজ সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা মানবতার বোধগম্য নয়। এই অমানবিক অত্য়াচারের প্রতিবাদে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে।
এরপর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সভাস্থলে যান। শহীদ দিবসের শেষ প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও হাজির ছিলেন।সভামঞ্চের দায়িত্বে থাকা নেতাদের মমতা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। কথা বলেন কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গেও। পরে তিনি সকলকে শুক্রবার শহীদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। প্রতি বছরই মমতা নিয়ম করে শহীদ দিবসের আগের দিন সভাস্থল দেখতে আসেন দলীয় সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে। এদিনও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি।