কলকাতা: একুশের সভা থেকে ২০২৪-এর ‘দিল্লি চলো’র বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুধবার দুপুর ২টো বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ ভার্চুয়ালি ভাষণ দেওয়া শুরু করেন তৃণমূল নেত্রী৷ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগা শুরু করেন৷ মোদি-শাহের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ধ্বংসের অভিযোগ আনেন৷ বিরোধী দলগুলিকে এককাট্টা হাওয়ার ডাক দেন৷ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে৷’
আগামী সপ্তাহে দিল্লি যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার আগে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের কাছে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠকে ডাকার অনুরোধ করেন৷ ওই বৈঠকে মমতাও থাকবেন বলে জানান৷ বলেন, ‘দিল্লিতে অধিবেশন চলছে৷ আগামী ২৬ তারিখ দিল্লি যেতে পারি৷ শরদ পাওয়ারজিকে বলব, বিরোধী দলগুলিকে ডাকুন৷ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব৷’
বিজেপি স্পাইগিরি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ বলেন, ‘মন্ত্রী, আমলা, বিরোধীদের নেতা, বিচারপতিদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে৷ গণতন্ত্রকে ভালোবাসলে, প্রতিষ্ঠাতাদের ভালোবাসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিত না বিজেপি। নির্বাচন, সংবাদমাধ্যম এবং বিচার বিভাগ, গণতন্ত্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। গণতন্ত্রের বদলে দেশ জুড়ে স্পাইগিরি চালাচ্ছে বিজেপি৷’
একুশের নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলেছিল তৃণমূল৷ নির্বাচনে সেই স্লোগান ঝড় তুলেছিল৷ শহীদ দিবসের ভার্চুয়াল মঞ্চে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গেল ‘খেলা হবে’ স্লোগান৷ তিনি বলেন, ‘খেলা হয়েছে৷ আবার হবে৷ বিজেপি যতদিন থাকবে ততদিন রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে৷ বাংলায় খেলা দিবস তৈরি করব৷ ১৬ অগাস্ট পালন করব৷’
গণতন্ত্রকে বাঁচাতে ফের বিরোধীদের এককাট্টা হওয়ার ডাক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারে বিচারবিভাগ৷ গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারে দেশের মানুষ৷ আর গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারে দেশের বিরোধী দলগুলি৷ আবারও বলছি, আমাদের একজোট হতেই হবে৷ নইলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না৷’
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের বিরুদ্ধে স্বৈরচারীর অভিযোগ আনেন তৃণমূল নেত্রী৷ তিনি বলেন, ‘এজেন্সিকে দিয়ে বিরোধীদের বিরক্ত করেন৷ কালা কানুন তৈরি করেন৷ যত নীচে নামা সম্ভব আপনি নেমেছেন৷ বাংলার জনতা আপনাদের জবাব দিয়েছে৷ গোটা বিশ্ব বাংলার দিকে তাকিয়ে ছিল৷ বাংলার মানুষ উন্নয়ন চায়৷ তাই তারা আমাদের সুযোগ দিয়েছেন৷বাংলার মানুষ উন্নতি, সম্প্রীতি চায়৷ কিন্তু বিজেপি হিংসা, দ্বন্দ্ব চায়৷ মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার আমাদের বিরক্ত করবেন না৷’
বিজেপিকে সরাতে দলকে রাস্তায় নামার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘আন্দোলনের করতে হবে৷ ডিজেলের দাম বাড়ছে কেন? রান্নাঘরে আগুন জ্বলছে৷ কেউ চিন্তা করার নেই৷ আধঘণ্টা করে মিছিল করবেন৷ মানুষকে বিরক্ত না করে৷ পেগাসাস পেগাসাস নরেন্দ্র মোদির নাভিশ্বাস৷ পেগাসাস হঠাও দেশ বাঁচাও৷ সব রাজ্যকে বলব আপনারা আপনাদের রাজ্যে প্রতিবাদ করুন৷ এটা বড় কেলেঙ্কারি৷ ওরা কাউকে ছাড়েনি৷ আমাদের পার্টিকে রোজ বিরক্ত করে৷ স্ট্রাগল না করলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না৷ স্ট্রাগল করতে করতে একদিন সাফল্য আসবে৷ আমরা হারব না৷ আমরা মাথা নত করব না৷ আমরা লড়ব, গড়ব ও জিতব৷ গদ্দারদের মনে রাখবেন৷ মুখে মুখে বড় কথা বলছে৷ এই গদ্দারদের মানুষ বিদায় দেয়৷ বিজেপি পার্টিতে গদ্দারদেরই জন্ম হয় না৷ ওরা দেশটাকে জানে না৷ সবার মুখ বন্ধ করে রাজনীতি করে৷ এমন রাজনীতি আমার পছন্দ নয়৷ আমরা ভয় পাব না৷ যারা লড়াই করে তারা ভয় পায় না৷’
দলকে শক্তিশালী করার বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী৷ বলেন, ‘উন্নততর তৃণমূল কংগ্রেস করতে হবে৷ তবেই তো উন্নততর দেশ গড়ার আওয়াজকে আমরা চারিদিকে পৌঁছে দিতে পারব৷ আমরা সাহসী, সৎ, কর্মঠ হলে ভালো ভাবে কাজ করতে পারব৷ তৃণমূলকে মানুষের দলে পরিণত করতে হবে৷ পুরনোদের সম্মান দিতে হবে৷ আবার নতুনদেরও জায়গা করে দেবেন৷ নতুনরা না এলে দল এগোবে কী করে? মহিলাদের গুরুত্ব দেবেন৷ মা-বোনেরা সেটা এবারের ভোটে বুঝিয়ে দিয়েছে৷’