কলকাতা: আর পাঁচদিন বাদেই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠক। তার আগেই তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের রাজ্য কংগ্রেসের সমালোচনায় মুখর হলেন। বুধবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনা চলছে। কদিন পর বেঙ্গালুরুতে বৈঠক। তার আগে বাংলার সিপিএম, কংগ্রেস নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে কংগ্রেসকে মনে রাখতে হবে, দিল্লিতে ওরা আমার সঙ্গে দোস্তি করবে। আর এখানে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বেড়াবে। তা হবে না।
মমতা বলেন, এখানে কংগ্রেস আমাদের বিরোধিতা করবে। আর আমি দিল্লিতে ওদের জন্য নৈবেদ্যর ফুল সাজিয়ে রাখব, সেটা সম্ভব নয়। তৃণমূল নেত্রী নাম না করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এখানে ওদের এক নেতা আছেন। চশমা পরে নিজেকে খুব বিজ্ঞ মনে করেন। তাঁর কীর্তি কাহিনী যে কত আছে, তার কোনও হিসেব নেই। তিনি সেজেগুজে রোজ তৃণমূলের বিরুদ্ধে গরম গরম ভাষণ দেন। তৃণমূল নেত্রী বলেন, অতীতে কংগ্রেস এবং সিপিএম যে কত অত্যাচার করেছে, তা কেউ ভুলে যায়নি। হাওড়ার কান্দুয়ায় কারা হাত কেটে নিয়েছিল, আমতায় কী হয়েছিল, কারা এক যুবকের গলায় কই মাছ ঢুকিয়ে তাঁর হাত বেঁধে রেখেছিল, সব আমার মনে আছে।
বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠকের ঠিক মুখেই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী ভোট-সন্ত্রাস নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূলকে আক্রমণ করে চলেছেন। গোটা পঞ্চায়েত ভোট পর্বকেই অধীর প্রহসন বলে বর্ণনা করেছেন। পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের প্রেক্ষিতেই রাজ্য কংগ্রেসের নেতা সুমন রায়চৌধুরী হাইকমান্ডকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, যে তৃণমূলের হাতে রাজ্যে প্রায় রোজ কংগ্রেস কর্মীরা খুন হচ্ছেন, পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী, কর্মীদের নানা ভাবে হেনস্তা করছে যে তৃণমূল, তাদের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এক সারিতে বসবেন কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | Financial Help | ভোট হিংসায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা মমতার
সম্প্রতি তৃণমূল দিল্লির নেতা সাকেত গোখলেকে রাজ্যসভার প্রার্থী মনোনীত করেছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম এর জন্য সাকেতকে অভিনন্দন জানান। তাতেও বেদম চটেছে বাংলার অনেক কংগ্রেস নেতা। চিদম্বরমের উদ্দেশে প্রাক্তন প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী টুইটে লেখেন, এটা হয়ত সৌজন্যের প্রকাশ। কিন্তু আপনি কি পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা করেছেন? যাঁর দলের হাতে ৪৩ জনের মৃত্যু হল, তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। কিন্তু তৃণমূলের হাতে যে কংগ্রেস কর্মীরা মার খাচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন, তাঁদের পরিবারকে কখনও সমবেদনা জানিয়েছেন?
এর আগে অধীর যখন ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তখনও কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতা তাঁর পাশে দাঁড়াননি। একমাত্র দিগ্বীজয় সিং ছাড়া কংগ্রেসের আর কোনও শীর্ষ নেতাকে পঞ্চায়েত ভোট হিংসার সমালোচনা করতে শোনা যায়নি। ওই নেতাদের প্রশ্ন, পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে শাসকদলের হাতে যে এতজন কংগ্রেস কর্মী খুন হলেন, আপনি কি তাঁদের পরিবারকে কখনও ফোন করেছেন? আপনি কি কখনও তাঁদের নাম জানতে চেয়েছেন?