কলকাতা: তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে থাকে বিরোধীরা। সব বিরোধী দলেরই নিশানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলায় এসে অতীতে তৃণমূলকে বুয়া-ভাতিজার দল বলেও কটাক্ষ করেছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী তো দুজনের নামই নেন না। তৃণমূলকে তিনি বলেন, পিসি-ভাইপোর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। সম্প্রতি আরামবাগ, কৃষ্ণনগর, বারাসত এবং শিলিগুড়ির সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরিবারবাদ নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধীরা আমার পরিবার নেই বলে কটাক্ষ করে। আমার পরিবার দেশের ১৪০ কোটি মানুষ। শিলিগুড়ির সভায় তিনি বলেন, তৃণমূল এক ভাতিজার জন্য সব কাজ করছে। আর কংগ্রেস শাহী পরিবারের সদস্যকে ক্ষমতায় বসাতে ব্যস্ত।
বুধবার তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভাই বাবুনের সঙ্গে পরিবারের সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি পরিবারতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেন না। তাঁর কাছে মা মাটি মানুষই আসল পরিবার। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বাবুনকে ত্যজ্য ভ্রাতা বলে উল্লেখ করে তিনি আদতে মোদি বা বিরোধীদেরই বার্তা দিতে চাইলেন। ওই ঘটনার পর তৃণমূলের নেতারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় মমতার হয়ে প্রচারে নেমে পড়েন। তাঁদের মতে, মমতা যে নিজের ভাইকেও রেয়াত করেন না, সেটা প্রমাণ করে দিলেন। এর জন্যই তিনি জননেত্রী।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে পাল্টিবাজ চাই না, ব্যারাকপুর জুড়ে পোস্টার
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকালে। মমতার ছোট ভাই বাবুন (স্বপন) সংবাদমাধ্যমে হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে আপত্তি করেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে পছন্দ করি না। তাঁর থেকে হাওড়ায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার মতো অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। বাবুন এই প্রসঙ্গে কল্যাণ ঘোষ, পুলক রায়, অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, হাওড়ায় আমি নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াব।
তারপরই শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় ফেরার আগে মমতা উত্তরকন্যায় সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই তিনি বলেন, বাবুনের সঙ্গে আমার এবং পরিবারের সকলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল। অনেকে বড় হতে চায়। এইসব লোভীকে আমি প্রশ্রয় দিই না। আমার পরিবারের সকলকে টিকিট দিতে হবে নাকি? আমি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। আমি মানুষতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, বাবুনকে আমার ভাই বলে আপনারা পরিচয় দেবেন না। মমতার ধমক খেয়ে অবশ্য ইউ টার্ন নিতে আর বেশি সময় নেননি বাংলার খেলার মাঠের পরিচিত মুখ বাবুন। তিনি বলেন, মমতার এই ক্ষোভ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মিটে যাবে। এটা দিদি এবং ভাইয়ের বিষয়। দুজনে মুখোমুখি বসলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দিদিই আমাকে মানুষ করেছে। বাবুন হাওড়ায় নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর হুমকিও প্রত্যাহার করে নেন। সকালে তৃণমূলের অন্দরে মমতা-বাবুনের বক্তব্য ঘিরে যে অস্বস্তির পরিবেশ দেখা দিয়েছিল, বেলায় তা কেটে যায়। সেখানে বড় হয়ে ওঠে পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিরোধীদের মমতার জবাব দেওয়ার প্রসঙ্গ। শাসকদলের নেতারা দাবি করছেন, তাঁদের নেত্রী দুর্দান্ত খেললেন।
দেখুন ভিডিও: