কলকাতা: নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পাঙ্গা নেবেন না বলে রাজ্যপালকে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সোমবার কলকাতার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী চাঁচাছোলা ভাষায় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে (Governor CV Ananda Bose ) আক্রমণ করেন। তিনি রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখবেন, আপনি মনোনীত, আমি নির্বাচিত। রাজ্যপাল আর মুখ্যমন্ত্রী এক নন। আমাদের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যপাল বিজেপির শিক্ষক সেলের নেতাকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য করেছেন। নিজের বন্ধুদের এনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বসিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আমরা রাজ্যপালের আসনকে সম্মান করি। কিন্তু তিনি সংবিধান মানছেন না।
রাজ্যপালের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই শাসকদলের সংঘাত চলছে। মূলত উচ্চশিক্ষা নিয়েই রাজভবন এবং নবান্নের বিরোধ। শাসকের অভিযোগ, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই রাজ্যপাল একতরফা নিজের পছন্দের লোকজনকে রাজ্যপাল পদে বসাচ্ছেন। আবার যখন খুশি, তাঁকে সরিয়ে দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে রাজ্যপাল তাঁর বিশেষ এক বন্ধু শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগ করেন। তিনি কর্নাটক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
আরও পড়ুন: পুজোর পর ছাত্র ভোটের ঘোষণা মমতার, তবু সংশয়ে বিরোধীরা
আবার অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার এম ওয়াহাবকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছে। এসব নিয়ে নবান্নের ক্ষোভ ছিলই। তার মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যায়। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উপাচার্যহীন। সেই মৃত্যু ঘিরে এখনও উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই অবস্থায় রাজ্যপাল যাঁকে যাদবপুরের উপাচার্য করেন, সেই বুদ্ধেদব সাউয়ের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এসব কারণেই মমতা এদিন দলের ছাত্র সমাবেশের মঞ্চ থেকে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
বোসের আগে রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর সঙ্গেও নবান্নের সংঘাত শুরু হয়েছিল। তাঁর আমলেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করা নিয়ে বিধানসভায় বিল পাশ হয়। ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য রাজ্যপাল হয়ে আসেন লা গণেশন। পরে স্থায়ী রাজ্যপাল হন সি ভি আনন্দ বোস। শুরুতে তাঁর সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক ভালোই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে রাজভবনে দেখা করে বেরিয়ে এসে বলেছিলেন, এই রাজ্যপালের সঙ্গে কাজ করতে মনে হয় অসুবিধা হবে না। কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই রাজভবন-নবান্ন মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে যায়। রাজ্যপালের সঙ্গে শাসকদলের সংঘাত এখন চরমে। এই অবস্থায় এদিন বোসের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পাঙ্গা নিতে যাবেন না।