কলকাতা : প্রথম দিন থেকেই শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি ৷ কৃষির পাশাপাশি শিল্পকে বঙ্গবাসীর দুয়ারে পৌঁছে দিতে প্রথম থেকেই উদ্যোগী ৷ অন্য দিকে, শিল্প স্থাপনের প্রসঙ্গ উঠলেই সামনে আসে জমি অধিগ্রহণ ইস্যু ৷ বাম আমলের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম অধ্যায় ৷ মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই দুই প্রসঙ্গেই রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ স্পষ্ট করে দিলেন, কোনও ভাবেই জোর করে জমি অধিগ্রহণ হবে না ৷ অধিগৃহীত জমির মালিকদের দেওয়া হবে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ৷ পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের সামনে বিপুল কর্ম সংস্থানের ফেরিওয়ালা হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরলেন মমতা৷
সিঙ্গুরে জমিগ্রহণ ৷ বাম আমলের এক কলঙ্কিত অধ্যায় ৷ সে দিন জোর করে জমি-দখলের বিরোধিতা করেছিলেন মমতা ৷ দাবি করেছিলেন পর্যান্ত ক্ষতিপূরণের ৷ আজ বিধানসভায় মমতা স্পষ্ট করলেন, সিঙ্গুর কোনও ভাবে তাঁর সরকারের মডেল নয় ৷ এই সরকার জমি নেবে ৷ দেবে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ ৷ সৃষ্টি করবে কর্ম সংস্থান ৷ জানান, মহম্মদবাজারে দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনির বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার কথাও ৷ রঘুনাথপুর-পুরুলিয়া শিল্প নগরী চালুর কথাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ফাইল চিত্র৷
দেউচা-পাঁচামি হল বীরভূমের মহম্মদবাজার হরিণ সিং কোল ব্লক । ৩৪০০ একর জমি নিয়ে ১১৭৮ মিলিয়ন হেক্টর কয়লা । ১১৪৮ মিলিয়ন হেক্টর ব্যাসল্ট জমা রয়েছে । এই যে ৩৪০০ একরের মধ্যে এক হাজার একর সরকারি জমি । এ প্রসঙ্গেই আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা আগে সরকারি জমিতে কাজ শুরু করব । তারপর ধাপে ধাপে অন্যান্য জায়গায় জমি নেওয়া হবে ।’’ তিনি আরও স্পষ্ট করেন, ‘‘যে জমিতে কেউ নেই (সরকারি জমি), সেখানেই কাজ শুরু হবে । এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খনি হতে চলেছে । সেটা হলে কয়লা জোগান বাড়বে, বিদ্যুৎ সস্তা হবে ।’’
আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ফাইল চিত্র৷
আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ত্রুটিপূর্ণ ভেন্টিলেটর সরবরাহ
মহম্মদবাজারের ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের যে ১১টি মৌজার মাটির নীচে সঞ্চিত প্রায় ২১০ কোটি টন কয়লা একক ভাবে তোলার অধিকার পেয়েছে এ রাজ্য । খনি গড়ার দায়িত্বে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (পিডিসিএল) । অনেক আগেই খনি গড়ার প্রাথমিক কাজে হাত পড়েছে । প্রস্তাবিত প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমিতে বসবাসকারী পরিবারগুলি নিয়ে ‘সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট’ বা সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা জমা পড়েছে । তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে প্রকল্পের গুরুত্ব আরও বাড়ল । প্রস্তাবিত খনি এলাকায় ব্যক্তিগত মালিকাধীন জমি ছাড়াও খাস ও অন্যান্য সহভাগী দফতরের হাতে হাতে থাকা জমির পরিমাণ ৬০০ একরের ও বেশি । কিন্তু, সেই জমি এক লপ্তে নেই । তাই কোথায় কী ভাবে কাজ শুরু হবে, সেটাও এ-প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ৷
সরকারের পক্ষে বারবার বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১০০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এ রাজ্যেকে কারও মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না । হবে প্রচুর কর্মসংস্থানও । কিন্তু, শিল্পের জন্য যাঁদের ভিটেমাটি হারাতে হবে, তাঁদের মনে দোলাচল তৈরি হয়ে রয়েছে । রাজ্য সরকার কী শর্তে জমি নেবে, পুনর্বাসন কোথায় হবে, এমন নানা প্রশ্ন ও আশঙ্কা কাজ করেছে স্থানীয়দের মধ্যে । সেখানে প্রথমে সরকারের জমিতে কাজ শুরুর কথা এবং ভবিষ্যতে জমি নিলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখার বার্তায় নিঃসন্দেহে স্বস্তি দিল এলাকাবাসীদের ।
আরও পড়ুন-অমিত মিত্রকে উপদেষ্টা রেখে অর্থ দফতর মমতার হাতে
অন্য দিকে, রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরেই রঘুনাথপুরে ‘শিল্পনগরী’ তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । একাধিক পুরুলিয়ায় সফরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে শোনা গিয়েছে, রঘুনাথপুরের শিল্পায়ন ও শিল্পনগরী তৈরির কথা । বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোট-অন অ্যাকাউন্টে রঘুনাথপুরের শিল্পনগরীর নাম ঘোষণা করে অর্থ বরাদ্দ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা ৷ আজ বিধানসভা থেকে সেই রঘুনাথপুরে শিল্প প্রসঙ্গও তুলে আনলেন তিনি । বোঝালেন, কী ভাবে আগামীতে দেশের শিল্প মানচিত্রে ঠাঁই পেতে চলেছে এই এলাকা ৷
রঘুনাথপুরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে থাকা ২,৪৮৩ একর জমির উপরে ‘জঙ্গল সুন্দরী কর্মনগরী’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের । এই প্রকল্প গড়ে ওঠার ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে । ডানকুনি থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর হয়ে আসানসোল এবং বড়জোড়া-বাঁকুড়া-রঘুনাথপুর পর্যন্ত যে বিশেষ শিল্প করিডর তৈরি হচ্ছে, তাতে রাজ্যের প্রথম শিল্পনগরী হতে যাচ্ছে রঘুনাথপুরে।