নয়াদিল্লি: দুটি জিএসটি বিল পাশ এবং সিআরপিসি, আইপিসি এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনের বিল পেশ করেই শেষ হল লোকসভার বাদল অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেষদিনে লোকসভায় উপস্থিত থাকলেও রাজ্যসভায় তাঁকে হাজির হওয়ার জন্য বিরোধীরা দাবি জানাতে থাকে। সেই হল্লায় উচ্চকক্ষ দফায় দফায় মুলতুবি করতে হয়। রীতি অনুযায়ী লোকসভা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার পর স্পিকারের আমন্ত্রণে একটি চা-চক্রের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কংগ্রেসসহ বিরোধীরা স্পিকারের সেই চা-চক্র বয়কট করে এদিন। রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়্গের নেতৃত্বে বিরোধী দলনেতারা লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে সংসদ চত্বরে থাকা বি আর আম্বেদকরের মূর্তি পাদদেশে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের হাতে ছিল ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’ ও ‘গণতন্ত্র বিপদের মুখে’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
মণিপুর ইস্যুতে প্রথমদিন থেকে ঝড় তুলে আজ, শুক্রবার শেষ হল সংসদের বাদল অধিবেশন। এদিনও শুরুতেই অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য এবং কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরীর সাসপেনশন নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা। যার ফলে প্রথমে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সভা মুলতুবি হয়ে যায়। একইভাবে রাজ্যসভাও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ও পরে ২টো পর্যন্ত মুলতুবি হয়। লোকসভায় অধীরের প্রসঙ্গটি তোলেন গৌরব গগৈ এবং রাজ্যসভায় কংগ্রেস দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তিনি বলেন, অতি তুচ্ছ কারণে অধীরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। উনি কেবল বলেছেন নীরব মোদি। যার অর্থ নিশ্চুপ, মৌন। মাত্র এই একটা কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হল, প্রশ্ন খাড়্গের।
আরও পড়ুন: কেরলের মুখ্যমন্ত্রী-কন্যার ১ কোটি ৭২ লক্ষের ‘বেআইনি’ লেনদেন ফাঁস, অভিযোগ নস্যাৎ সিপিএমের
উল্লেখ্য, এদিন লোকসভায় সেন্ট্রাল জিএসটি সংশোধনী বিল আনেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিজেপি মন্ত্রীদের সঙ্গে কৌশলগত একটি বৈঠক করেন এবং স্বয়ং সোনিয়া গান্ধীর ডাকে কংগ্রেসের লোকসভার এমপিরা একটি আলোচনায় দিনের রণকৌশল ঠিক করে নেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিরোধীশূন্য লোকসভায় ধ্বনিভোটে অনাস্থা প্রস্তাব হেরে যাওয়ার পরই জানা যায় অধ্যক্ষ কংগ্রেস দলনেতাকে সাসপেন্ড করেছেন। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি সাসপেনশনের প্রস্তাব পেশ করেন। অনাস্থা বিতর্কে অধীর প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেন, যাকে অসংসদীয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। অধীরের বক্তব্যের সময়ই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বেশ হইচই হয়। পরে জোশির এই প্রস্তাব ধ্বনিভোটে গৃহীত হয়।
অধীর অবশ্য পরে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অপমান করেননি। লোকসভায় অধীর ভাষণে বলেছিলেন, মণিপুর ইস্যুতে মোদিজি ‘নীরব’ হয়ে বসে রয়েছেন। যার অর্থ মৌন। নীরব মানে চুপ করে থাকা। প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অপমান করার কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না, বলেন অধীর। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও অপমানিত বোধ করেননি। তাঁর খোশামুদে সাঙ্গোপাঙ্গরাই মনে করেছে। বিষয়টি স্বাধিকার ভঙ্গ বিষয়ক কমিটিতেও গিয়েছে বলে শুনেছি। আর ততদিনের জন্য আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
কংগ্রেসের সাংসদ মণীশ তেওয়ারি এই সাসপেনশনকে দুর্ভাগ্যজনক এবং সংবিধানের ১০৫ ধারা লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন। কংগ্রেসের লোকসভার চিফ হুইপ মানিকম ঠাকুর বলেছেন, মোদির বিরুদ্ধ বলার জন্য লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করার ঘটনা বোধহয় এই প্রথম। অবিশ্বাস্য, অগণতান্ত্রিক, আমরা এই স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করি।